মণিরামপুর প্রতিনিধি।। যশোরের মনিরামপুর পরিসংখ্যান অফিসে দরজা বন্ধ করে অর্থ শুমারীর আবেদন ফর্ম বিক্রি, ফর্ম কিনতে যাওয়া প্রার্থীদের সাথে বাক বিতন্ডা, প্রার্থীদের সাথে কর্তৃপক্ষের হাতাহাতি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে অসাধ আচরন, অফিসের তথ্য প্রকাশের বিলবোর্ড(অপরিষ্কার) চায়ের টেবিলের নিচে, অফিসের ভিতরের অপরিছন্ন পরিবেশ, ফর্ম বিক্রিতে স্বজনপ্রীতি, ফর্ম বিক্রির মত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নির্ধারিত অফিস টাইমে অফিসার অনুপস্থিত, অর্থনৈতিক শুমারীর ফরমের ফি ৫০/- কোন চাদা রশিদ না দেওয়া, কতজন লোক কোন পদে কাজ করবে ও নির্ধারিত কাজের জন্য আনলিমিটেড আবেদন ফর্ম বিক্রি, একজন ব্যক্তির নামে একাধিক আবেদন ফর্ম রেজিস্টি এবং সর্বশেষ গতকাল ৩০শে নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত আবেদন ফর্মের পরিক্ষার হল পরিদর্শনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার মত সৃষ্ট নানান সব কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে মনিরামপুর উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের কার্যক্রম। এ যেন অনিয়মের কারখানা।
তথ্য আছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ ইং সালের প্রকল্পের অর্থনৈতিক শুমারীতে সুপারভাইজার ২৬ জন ও গণনাকারীপদে ১৮৫ জন লোকবল নিয়োগ(অস্থায়ী) সংক্রান্ত বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ চলতিমাসের ১১ তারিখে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে প্রকাশিত হয়। নোটিশে লিখিত নিয়মানুযায়ী এই শুমারীর সুপারভাইজার ও গণনাকারীর যাচাই বাঁচায় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না ও সদস্য সচিব মণুরামপুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তাহের মাহমুদ সোহাগ। দুই পদে সর্বমোট ২১১জন জন লোকবল নিয়োগের নোটিশে সভাপতি ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষর দৃশ্যমান।
অনুসন্ধানে উল্লেখিত সকল অনিয়ম যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার কাছে উত্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেন। সরাসরি মণিরামপুর পরিসংখ্যান অফিস গেলে চিত্র মেলে ফর্ম বিক্রির হিড়িক। ঠেলাঠেলি করে ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় আবেদন ফর্ম বিক্রির নির্ধারিত রুমের দরজা বন্ধ, তবে ভিতরে কার্যক্রম চলছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে বাইরে থেকে কর্তৃপক্ষের কাছের ব্যক্তিরা এসে দরজা খুলে ফর্ম নিয়ে চলে যাচ্ছে, তবে জন সাধারণকে বলছেন ভিতরে ঢোকা নিষেধ।
অপেক্ষার সময় ঘন্টা অতিবাহিত হলেও খুললোনা দরজা, চলছিলো কর্তৃপক্ষের গোপন সব কার্যক্রম। ফর্ম নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় ৩ জন কর্মচারী সহ ১৮/২০জন লোক ভিতরে গোপন বেচাকেনায় ব্যাস্ত। কতগুলো ফর্ম বিক্রি হয়েছে ও কতগুলো বিক্রি হবে জানতে চাইলে অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেন। তবে বিক্রিত ফর্মের ইউনিয়ন ভিত্তিক রেজিস্ট্রারে মেলে উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের একজন ব্যাক্তির নামে ১৭টি ফর্ম বিক্রির তথ্য।
এদিকে ফর্ম বিক্রিকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডা, হাতাহাতি, অসাধাচরণ ও ফর্মের নিচের অংশে প্রবেশপত্রে অফিসের সিল মোহর বাদে এবং রশিদ ছাড়া ৫০/-নেওয়ার মত অসংখ্য অভিযোগ তুলেছেন ফর্ম নিতে আশা একাধিক আবেদন প্রার্থীরা। এমনকি কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিলো কর্তৃপক্ষ। এ সমস্ত অভিযোগের পরেও নির্ধারিত কেন্দ্র মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত যাচাই-বাছাই পরিক্ষাস্থলের গেটের রোল নং সহ আসন বিন্যাসের নোটিশে দেখা যায়, প্রথম রোল ০১ হতে ১৭৪৫ নং রোল উল্লেখ আছে। এ নোটিশে এক পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়নে মোট ১০৪৫ জনের আসন বিন্যাস করেছেন কর্তৃপক্ষ। আবার গোপন তথ্য আছে আবেদন ফর্মের বিক্রির পরিমান ৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
হযবরল এই কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহের জন্য ও উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের কর্মরত কর্মকর্তার কর্মকান্ডের তথ্য নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার নির্দেশনা মোতাবেক একাধিকবার অফিসে গেলে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তাহের মাহমুদ সোহাগ থাকেন অনুপস্থিত।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বাইরে আছেন ও ব্যাস্ত আছেন বলে জানান। সর্বশেষ গতকাল পরিক্ষা কেন্দ্রে গেলে ভিতরে প্রবেশের জন্য তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গেটে থাকেন দেখা হবে।তবে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গেটে অবস্থান করলেও যোগাযোগ মেলেনা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তাহের মাহমুদ সোহাগের সাথে। পরিক্ষার দায়িত্বে থাকা মনিরামপুর সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ নিয়াজ মাখদুম স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্বা নিয়ে পরিক্ষা শেষ করেন। পরবর্তীতে গতকাল রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের গেটে নোটিশ বোর্ডে উত্তীর্ণ প্রর্থীদের রোল নং সহ রেজাল্ট প্রকাশ করেছেন উপজেলা পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক শুমারীর যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি নিশাত তামান্না জানান, সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে উত্তীর্ণদের খাতা যাচাই-বাছাই করে রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৫ তারিখ তাদের ট্রেনিং হবে, উত্তীর্ণরা পরিসংখ্যান অফিসে যোগাযোগ করবে, উত্তীর্ণদের কেউ অনুপস্থিত থাকলে বা কোন কারনে বাদ পরলে অপেক্ষমানদের সাথে যোগাযোগ করা হবে,আপাদত অপেক্ষমানদের কোন কাজ নেই। ফর্মের মূল্যের হিসাবের বিস্তারিত পরিসংখ্যান অফিসে রাখা আছে। সার্বিক ব্যবস্থা বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণের পরবর্তী কর্যক্রম যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করবে পরিসংখ্যান বিভাগ। দীর্ঘক্ষণ ফোন আলাপে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যশোর জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উর্ব্বশী গোস্বামী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: