
কবিতা শহীদ স্মরণে কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
কবিতায় আর কি লিখব? যখন বুকের রক্তে লিখেছি একটি নাম বাংলাদেশ। গানে আর ভিন্ন কি সুরের ব্যঞ্জনা? যখন হানাদারবধ সংগীতে ঘৃণার প্রবল মন্ত্রে জাগ্রত স্বদেশের তরুণ হাতে নিত্য বেজেছে অবিরাম মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড। কবিতায় কি বলব? যখন আসাদ মনিরামপুরের প্রবল শ্যামল হৃদয়ের তপ্ত রুধিরে করেছে রঞ্জিত সারা বাংলায় আজ উড্ডীন সেই রক্তাক্ত পতাকা। আসাদের মৃত্যুতে আমি অশ্রুহীন; অশোক; কেননা নয়ন কেবল বজ্রবর্ষী; কেননা আমার বৃদ্ধ পিতার শরীরে এখন পশুদের প্রহারের চিহ্ন; কেননা আমার বৃদ্ধা মাতার কণ্ঠে নেই আর্ত হাহাকার, নেই অভিসম্পাত- কেবল দুর্মর ঘৃণার আগুন; কোনো সান্ত¦নাবাক্য নয়, নয় কোনো বিমর্ষ বিলাপ; তাঁকে বলিনি তোমার ছেলে আসলো ফিরে হাজার ছেলে হয়ে আর কেঁদো না মা; কেননা মা তো কাঁদে না; মার চোখে নেই অশ্রু, কেবল অনলজ্বালা, দু’চোখে তার শত্রু হননের আহবান। আসাদের রক্তধারায় মহৎ কবিতার, সব মহাকাব্যের, আদি অনাদি আবেগ- বাংলাদেশ জাগ্রত। আমি কবিতায় নতুন আর কি বলব? যখন মতিউর করাচীর খাঁচা ছিঁড়ে ছুটে গেল মহাশূন্যে টি-৩৩ বিমানের দুর্দম পাখায় তার স্বপ্নের স্বাধীন স্বদেশ মনে করে- ফেলে তার মাহিন তুহিন মিলি সর্বস্ব সম্পদ; পরম আশ্চর্য এক কবিতার ইন্দ্রজাল ¯্রষ্টা হলো- তার অধিক কবিতা আর কোন বঙ্গভাষী কবে লিখেছে কোথায়? আমি কোন শহীদ স্মরণে লিখবো? বায়ান্ন, বাষট্টি, ঊনসত্তর, একাত্তর; বাংলার লক্ষ লক্ষ আসাদ মতিউর আজ বুকের শোনিতে উর্বর করেছে এই প্রগাঢ় শ্যামল। শহীদের পুণ্য রক্তে সাত কোটি বাঙালির প্রাণের আবেগ, আজ পুষ্পিত সৌরভ। বাংলার নগর, বন্দর গঞ্জ, বাষট্টি হাজার গ্রাম ধ্বংসস্তুপের থেকে সাত কোটি ফুল হয়ে ফোটে। প্রাণময় মহৎ কবিতা আর কোথাও দেখি না এর চেয়ে। শব্দভুক পদ্য ব্যবসায়ী ভীরু বঙ্গজ পুঙ্গব সব এই মহাকাব্যের কাননে খোঁজে নতুন বিস্ময়, (কলমের সাথে আজ কবির দুর্জয় হাতে নির্ভুল স্টেনগান কথা বলে।) কবিতায় আর নতুন কি লিখব যখন বুকের রক্তে লিখেছি একটি নাম বাংলাদেশ।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: