
"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"- রাশেদ রেজা
আজ বিশ্ব নারী দিবস কবি কাজী নজরুলের কবিতা দিয়ে শুরু করলাম, স্মরণ করছি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কে। বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ষষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। আজকের এই দিনে নারী জাগরণে দিকপাল বেগম রোকেয়ার লেখনীতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলমন্ত্র।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ ভাগ নারী, নারী জাগরণে সেই তুলনায় আজও সঠিক মূল্যায়নের অভাবে নারীরা বঞ্চিত।
কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হওয়ায় আগের তুলনায় নারীরা এখন যথেষ্ট পরিণত। দেশে তুলনামূলকভাবে প্রতিটা উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অবহেলিত নারীরাই অর্থনীতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে।
কিছুটা অনুকূল পরিবেশ থাকার কারণে প্রশাসনে, চিকিৎসাসেবায়, শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের কর্মদক্ষতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথ সৃষ্টি হচ্ছে, যদিও সেটা পুরুষের তুলনায় কম। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে চলেছি দুর্বার গতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে এমনকি গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের নারী মেম্বারা শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালন হচ্ছে, এমনকি আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই জেলা উপজেলা শহর থেকে শুরু করে সমস্ত বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখা নারীদেরকে সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
সারা বিশ্বজুড়ে ৮ ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালন করলেও অনেক দেশে এই দিনটি প্রতিবাদের। এই দিনটির পেছনে আছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই আছে এর বিশাল ইতিহাস, ১৯০৮ সালের এই দিনে প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্টকরণ, কাজে অমানবিক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ১৯০৯ সালে আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টি নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে অবশেষে নারীরা তাদের এই অধিকার লড়াইয়ের ফল হিসাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয় ৮ ই মার্চ ১৯৭৫ সালে।
তাইতো আজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়।
আমাদের দেশেও আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রেলীর আয়োজন করছে সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
পরিশেষে একটি কথাই বলবো ধর্মীয় অনুশাসন সহ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অধিপত্যে নারী এখনও অসাম্যের সম্মুখীন। জাতীয় সম্পদ নারীরা অসম অধিকার পারিবারিক আইনে এবং বাবার সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের অসম অধিকার আজও বঞ্চিত করে। ফিরে আসুক নারীদের সঠিক সাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হোক নারীদের ন্যায্য অধিকার। আরে এই ন্যায্য অধিকার পেলেই নারী দিবসের মূল্যায়িত হবে নারী দিবসের মূল লক্ষ্য।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: