মণিরামপুরের খালের মোহনায় অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে মৎস্যঘের নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৫ ২৩:৪৫

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৫ ২৩:৪৫

ছবি- নিউজ প্রতিনিধি

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। মণিরামপুরের রাজগঞ্জ এলাকার ২০ টি বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বালিয়ার খালের মোহনায় অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে একটি চক্রের বিরুদ্ধে মৎস্যঘের নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ মৎস্যঘের নির্মাণ করা হলে ২০ বিলসহ প্রায় অর্ধশতাধীক গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে মৎস্যঘের নির্মান চেষ্টার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। অনুসন্ধানে কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানাযায়, উপজেলার হেলাঞ্চী, হানুয়ার, খেদাপাড়া, জালালপুর, গালদা, খড়িঞ্চী, রোহিতা, দিঘীরপাড়, হরিহরনগর, কোদলাপাড়া, তেতুলীয়া, বসন্তপুর, গাংগুলিয়াসহ ২০টি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হেলাঞ্চী-হানুয়ারের মাঝ দিয়ে বালিয়ার খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খননের উদ্বোধন করেন। খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ অনেকেই জানান, খননের পর পশ্চিমাঞ্চের ২০টি বিলের পানি বালিয়ার খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কপোতাক্ষ নদে পড়ে। সেই থেকে ২০বিলে কৃষকরা কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন করে আসছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে উপজেলার মশ্মিমনগর এলাকার ব্যবসায়ী বিমল বিশ্বাস, হানুয়ারের রবিউল ইসলামসহ তিন ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় বালিয়ার খালের মোহনায় প্রায় শতাধীক বিঘা জমি লিজ নিয়ে গত ১০মে মৎস্যঘের নির্মান শুরু করেন। ফসলি জমিতে ঘের নির্মাণ করতে হলে উপজেলা ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। তার ওপর বালিয়ার খালের মোহনায় ঘের নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে ২০ বিলের পানি নিষ্কাশনে বাঁধাগ্রস্থ হবে। ফলে বিলসমুহ ও তার আশপাশের অন্তত: অর্ধশতাধীক গ্রামে দেখা দিবে জলাবদ্ধতার। যে কারনে এলাকাবাসী এ ঘের নির্মানে বাঁধসাধেন। এলাকার জাহিদুল ইসলাম, সোহান, আশরাফ হোসেন, মোদাচ্ছের আলী, এরশাদ আলীসহ অধিকাংশ কৃষকের অভিযোগ ঘের নির্মানে বাঁধা দেওয়ার পর রাতের অন্ধকারে ৬/৭ টি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা শুরু করেন। স্কুল শিক্ষক শামছুজ্জামান জানান, খালের গা ঘেষে গতবছর ছোট একটি ঘের নির্মান করেন এলাকার বুলবুল ও আব্দুল লতিফ নামে দুই ব্যবসায়ী। খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আজিবর রহমান এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ জানান, বিমল বিশ্বাসের নেতৃত্বে খালের মোহনায় শতাধীক বিঘা জমিতে প্রশাসনের কোন অনুমতি ছাড়াই ঘের নির্মাণ চেষ্টার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। ঝাপা ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদেরকে ঘের নির্মান করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তারা কোন কর্ণপাত করেননি। ফলে আসলাম হোসেন বাদি হয়ে ১৭ মে জাকাত আলী, রুহুল আমিন, সুবোধ চন্দ্র, কেতু চন্দ্র, অনন্ত লাল, আব্দুল রহমান, সরোয়ার হোসেনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তবে মণিরামপুর থানায় সদ্য যোগদানকারী অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিকে বুধবার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম ও সিনিয়র মৎস্য অফিসার আনিুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী খালপাড়ে অবস্থান নিয়ে দাবি জানান, যেকোন মূল্যে ঘের খনন বন্ধ করার। সহকারী কমিশনার নিয়াজ মাখদুম বলেন, আমরা যেয়ে ঘের নির্মানে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাইনি। তবে জনস্বার্থে এ ঘের নির্মান বন্ধ করতে করনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া নির্মিত ঘের মাটি দিয়ে ভরাট করতে বৃহস্পতিবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘের মালিক বিমল বিশ্বাস বলেন, বিনাঅনুমতিতে ঘের নির্মান করতে গিয়ে এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে অনেক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছি। এখন আবার মাটি ভরাট করতে হলে আমি অর্থনৈতিক ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবো।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: