
নিউজ ডেস্ক॥ করোনা যোদ্ধা ডা. মেহেদী হাসান তাঁর নিজ এলাকা যশোরের মনিরামপুরে আর্তমানবতার সেবায় চালু করেছেন 'আমাদের অ্যাম্বুলেন্স' নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। নিজস্ব অর্থায়নে কেনা এই অ্যাম্বুলেন্সটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনামূল্যে মনিরামপুরে লাশ বহনের। গত জুন মাস থেকে বিনামূল্যে লাশ বহন করা হয়েছে ৪৯ টি। এর ভিতর ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ২৩ প্রবাসীর মৃতদেহ এবং খুলনা, যশোর মনিরামপুর এর আশপাশের এলাকা থেকে ২৬ মৃতদেহ বহন করেছেন। অন্যদিকে নামমাত্র মূল্যে সেবা দেওয়া হয়েছে সাতশত প্লাস রোগীকে। আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মহামারি কোভিড-১৯’র প্রাদুর্ভাবে মানুষ যখন দিশেহারা তখন যশোরের মনিরামপুরে মানবিক ডাক্তার খ্যাত মেহেদী হাসান নিরন্তর ছুটে চলেন কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিতে। শুধু মনিরামপুরেই তিনি সীাবদ্ধ রাখেননি ফ্রি চিকিৎসাসেবার। তিনি সারাদেশে কোভিড আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার রোগীকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেন। ফলে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে মনিরামপুরে মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. মেহেদীকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট(আইইইবি) থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এছাড়া তিনি ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০-র অধীনে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ডা. মেহেদী হাসান বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের আগরহাটি গ্রামের হাজী জবেদ আলীর ছোট ছেলে। ডা. মেহেদী চাকরির পাশাপাশি নিজ এলাকার মানুষের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। এবার ঈদুল ফিতরে গ্রামে বেড়াতে এসেও ফ্রী চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন ৩৫ জনকে।
অ্যাম্বুলেন্সের সেবা সম্পর্কে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে
মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় আমার শ্যালক আব্দুল খালেকের মৃত্যুর পর ধারদেনা করে ১ জুন লাশ দেশে আনা হয়। শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডা. মেহেদীর ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে’ বিনামূল্যে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সেবার কথা আমরা সব সময় মনে রাখব।
ধলিগাতি গ্রামের মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন আমার দেড় বছরের মেয়ে অরশি খাতুন এর মৃতদেহ গত ১২ই মার্চ "আমাদের অ্যাম্বুলেন্স" মনিরামপুর থেকে ধলিগাতি গ্রামে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছেন।
কৃষ্ণবাটীর অসিত বৈরাগী বলেন গত ২২শে মার্চ আমার কাকিমা রনিতা বৈরাগীর মৃতদের যশোর থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মনিরামপুর কৃষ্ণবাটী গ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন তার জন্য একটি টাকাও নেয়নি।
শ্যামকুড় গ্রামের মোঃ হারুনা রশিদ বলেন গত মার্চ মাসের ১৬ তারিখে আমার ৪দিনের মাসের শিশু সন্তানকে খুলনা থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মনিরামপুর শ্যামকুড় গ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন 'আমাদের অ্যাম্বুলেন্স'।
২৪ ঘন্টা "আমাদের অ্যাম্বুলেন্স" সেবার সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিচালক মোঃ শাহ্ জালাল বলেন, মনিরামপুর উপজেলার আয়তনের মধ্যে রোগী আনা নেওয়ার জন্যে নির্ধারন করা হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। মনিরামপুর থেকে যশোরে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া যেখানে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সেখানে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় মাত্র ছয়শ টাকা। ঢাকায় নিতে গুণতে হত ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। সেখানে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় মাত্র সাত হাজার টাকা। আর খুলনার জন্যে নেওয়া হয় দুই হাজার টাকা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মনিরামপুর উপজেলার বাসীর মৃতদের দেশের যে প্রান্তে থাকুক না কেন আমরা সেটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বহন করে থাকি। এমনকি ঢাকা থেকে মৃতদের আনার সময় পদ্মাসেতুর টোল সহ ছোটখাটো অনেক স্থানে টোল দেওয়া লাগে সেটাও আমরা বহন করে থাকি।
পারিবারিক অনুপ্রেরণা থেকেই সবসময় মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছি উল্লেখ করে ’আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবার প্রতিষ্ঠাতা ডা. মেহেদী হাসান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে সাড়া জেগেছে তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেবার বহরে ফ্রিজিংসহ আরো তিনটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে আগামিতে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: