
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের, বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও ইতিহাস কারো অজানা নয়। এটা স্বীকার্য সত্য, দেশ ও জাতির যেকোন সংকটে ছাত্ররাই সবার এগিয়ে এসেছে। ঢাল হয়ে রক্ষা করেছে দেশকে। আর এই ছাত্রদের সংগঠিত করতে গিয়েই তৈরি হয়েছে ছাত্রসংগঠন, ছাত্ররাজনীতির।
বলা যায়, ছাত্রলীগই একমাত্র সংগঠন যে সংগঠনটি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্রদের সংগঠিত করার মাধ্যমে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা ও ১১ দফা, ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীকার আদায়ে সোচ্চার থেকেছে এবং অধিকার আদায়ে সফল হয়েছে।
সমসাময়িক নানাবিধ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন থাকতে পারে, ছাত্ররাজনীতির প্রকৃত সংগা কি? ছাত্রনেতা কাকে বলে?
ছাত্ররাজনীতি হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিয়োজিত, অধিকার আদায়ে সোচ্চার, ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে থেকে সর্বদা হীনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী, ইতিবাচক সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত, শিক্ষাঙ্গনে দূর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধে অকুতোভয়, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নীতিবান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির বাতিঘর বা কারখানা। আর ছাত্ররাজনীতির এই সংগাকে মনে প্রাণে ধারণ করে যে ছাত্রটি রাজনীতি করে তাকে বলা হয়ে থাকে ছাত্রনেতা।
যদিওবা অনেকে বলে থাকেন বর্তমান ছাত্ররাজনীতি কলুষিত হয়ে গেছে। তবে বাস্তবটা এমন যে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি কখনো একই ধাঁচে চলতে পারে না। অবশ্যই সেখানে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে এবং আছে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্ররা মাতৃভাষার জন্য লড়াই করেছে , দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। বলা চলে, স্বাধীনতা পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের৷ অন্যদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাত্রসমাজ লড়াই করেছে স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রামের নিমিত্তে।
কালের বিবর্তনে বদলেছে সবকিছুই। আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে ছাত্র রাজনীতিতে৷ কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি কারণে ছাত্ররাজনীতির যতটা উন্নয়ন সাধিত হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়তোবা হয়ে ওঠেনি কিংবা উঠতে পারেনি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান ছাত্রসমাজ তথা ছাত্রনেতাদের ছাত্ররাজনীতির মানোন্নয়নে কাজ করাটা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি।
বর্তমান ছাত্রনেতাদের মধ্যে একধরনের প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। মানুষের জন্য নানাবিধ মানবিক কাজ মানেই অনেকে ছাত্ররাজনীতি মনে করে থাকেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। তবে ছাত্ররাজনীতি শুধুমাত্র মানবিক নানাবিধ কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে এর পরিধি বিস্তৃতে কাজ করতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সর্বোপরি ছড়িয়ে দিতে তথা মুজিব আদর্শ বিকাশে সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে ছাত্রনেতাদের আদর্শিক দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তরুণদের করনীয় নিয়ে ছাত্র সমাজেকে উদ্বুদ্ধকরণে ছাত্রনেতাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে নেতৃত্ব দেওয়ার মত তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টিতে ছাত্রনেতাদের অবশ্যই দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও বিকাশের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছাত্রনেতাদের কাজ করতে হবে। বৈশ্বিক শিক্ষার মানের সাপেক্ষে দেশের শিক্ষার মান কতটুকু পিছিয়ে আছে এবং সেটা সমাধানে করণীয় ও সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণে ছাত্রনেতাদের কাজ করতে হবে। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ বলে থাকেন, নেতার গ্ল্যামার, ক্যারিসমা, জনপ্রিয় জনমোহিনী শক্তি, যাই হোক না কেন আসলে নেতৃত্ব শক্তিশালী হতে পারে একমাত্র যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমেই। আর তাই ছাত্রনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুষ্ঠু ছাত্রসমাজ ও দেশ গঠনে কাজ করতে হবে। ছাত্ররাজনীতিতে প্রতিহিংসার চর্চা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের নোংরা ধারা থেকে বেরিয়ে মেধা ভিত্তিক, জ্ঞান নির্ভর সুস্থ এবং সুষ্ঠু ছাত্ররাজনীতির ধারা সৃষ্টিসহ বর্তমান সময়ে ছাত্রসমাজের বহুবিধ সমস্যা সমাধানে যুগোপযোগী নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণে ছাত্রনেতাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
বিশ্বাস করি, বর্তমানের ছাত্রনেতারাই আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে আরো অধিক উচ্চতর স্থানে।
স্বপ্ন দেখি একদিন ছাত্রনেতাদের দ্বারাই সৃষ্টি হবে একটি জ্ঞান নির্ভর, মেধাভিত্তিক এবং মুজিব আদর্শিক ছাত্রসমাজের। যারা কাজ করবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে- দেশের উন্নয়ন সাধনে, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের নিমিত্তে।
লেখক, মোঃ রিয়াজ উদ্দীন রেজা। কর্মী, যশোর জেলা ছাত্রলীগ।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: