
মোঃ শাহ্ জালাল।।
মণিরামপুরের বিবাহিত অনার্স পড়ুয়া মেয়ে নাসরিন এর বয়স আনুমানিক ২২ বছর। যশোর সিটি কলেজে একাউন্টিং এ অনার্স পড়ছে। পাশাপাশি যশোরে কাজ করছেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। তার স্বামী আবুল মোটামুটি ভাল বেতনে চাকুরী করেন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। এই দম্পতির আপাতত কোন সন্তান নেই কেননা নাসরিন পড়াশোনা শেষ না করে মা হতে চাই না। তারপরেও সবমিলিয়ে অল্পদিনের সুখের সংসার, কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। গল্পের শুরুটা ২০১৫ সালে ফেসবুক মাধ্যমে। সমবয়সী অবিবাহিত হিন্দু ক্লাসমেট সুমন দেবকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় নাসরিন। স্বাভাবিক নিয়মেই হাই-হ্যালো হতো দু’জনের। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকা চ্যাট। অফিসের কম্পিউটার থেকে মোবাইল ফোনে। দিন নেই, রাত নেই চ্যাট চলতেই থাকে। এর মধ্যেই নাসরিন জানালো, তার স্বামী আবুল বয়স্ক বলতে তার ৮ বছরের বড় । অর্থ আর ছেলের পারিবারিক অবস্থা দেখেই তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন মা-বাবা। তাকে পেয়ে তিনি সুখী না কারণ বিয়ের আগেই সুমন দেবের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো নাসরিনের। সেই সুযোগটা নেন সুমন দেব। নিজের নিঃসঙ্গতার কথা জানান তিনি নাসরিন'কে।
নাসরিনের স্বামী ঢাকায় থাকলেও নাসরিন পড়াশোনার সুবাদে যশোরে বাসা নিয়ে থাকে। সুমন দেবও যশোর ম্যাচে থাকেন। কিন্তু নাসরিনের বিয়ের পর কোন বান্ধবী নেই সুমন দেবের। ফলে নাসরিন এর মতো বিবাহিত ফ্রী গার্লফ্রেন্ড পেলে নিজেকে সুখী মনে করবে যে কেউ এটাই স্বাভাবিক। পূর্ণরায় নাসরিন আর সুমন দেব জড়িয়ে যান গন্তব্যহীন এক সম্পর্কে। প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সম্পর্কে আজকাল জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। বিশেষ করে ফেসবুক ও মোবাইলফোনে নারী-পুুরুষের সম্পর্ক প্রথমে বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব থেকে তা প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। অদেখা ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন বিবাহিতরা। এই সম্পর্কের প্রভাব এতো বেশি যে, ধর্ম-বর্ণ, বয়সের বাঁধ না মেনেই তা এগিয়ে যায়। পরকীয়া এই প্রেমের ফলে অহরহ ভাঙছে সংসার।
নাসরিন- সুমন দেবের প্রেম কাহিনী এখানেই থেমে থাকে না। অতঃপর নতুন করে শুরু হলো ফোনালাপ। কাছের এক বান্ধবীর নামে ফোন নম্বরটি নিজের মোবাইল ফোনে সেভ করে নাসরিন । কথা বলতে বলতে অনেকটা বেপরোয়া। মাঝে মধ্যে নাসরিন যখন ঢাকাতে স্বামীর কাছে আসে, তখন কথা বলতে পারে না। কিন্তু সুমন দেবের কথা শুনতে মিস করে নাসরিন। গান শুনার ভান করে কানে ইয়ারফোনটা লাগিয়ে রাখে নাসরিন। হুম-হ্যাঁ জবাব দেন। যেন গানের সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে তিনি। স্বামী বেচারা আবুল পাশেই শুয়ে থাকে। কি ঘটছে তাতে খেয়াল নেই তার। স্বামী অফিসে চলে গেলে মাঝে-মধ্যে নাসরিন ও সুমন দেব মিলিত হতেন বাসায়। কেননা নাসরিন ঢাকায় স্বামীর কাছে আসলে সুমনও ঢাকায় চলে আসতেন। এভাবে দীর্ঘদিন। বিভিন্ন কফি শপ, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে যশোর ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত তাদের। যে কারণে পরিচিতদের চোখে প্রায়ই ধরা পড়ে এই দৃশ্য। এরি মাঝে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় নাসরিন। কিন্তু এই সন্তানটি কার?? কে তার বাবা সুমন নাকি স্বামী আবুল?? এই নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে যায় নাসরিন। মনে মনে সিন্ধান্ত নেয় সন্তান নষ্ট করে দেওয়ার। পরামর্শ করে স্বামীর সাথে, স্বামী আবুল সন্তান রাখার পরামর্শ দিলেও শেষমেশ বোঝাতে অক্ষম হয় স্ত্রী নাসরিন কে। অবশেষে নাসরিন স্বামীকে চুরি করে চলে আসে যশোরের মনিরামপুর বাবার বাড়িতে সাথে প্রেমিক সুমন কে নিয়ে। পরদিন সুমনের সহযোগিতায় মনিরামপুরের পাশের উপজেলা কেশবপুরের একটি ক্লিনিকে যেয়ে সন্তান নষ্ট করে দেয় নাসরিন।
কিছুদিন অসুস্থ থেকে সুস্থ হয়ে আবারো সুমন দেবের সঙ্গে প্রায়ই রিকশায় দেখা যায় নাসরিনকে। যশোরে নাসরিনকে তার অফিসে পৌঁছে দেয় সুমন দেব, নিয়ে যাওয়ার কাজটিও মাঝে-মধ্যে করেন সুমন দেব। কাজের ফাঁকে কখনও কখনও যশোর পৌর পার্কে বসে গল্প করেন দু’জন। এরমধ্যেই নাসরিন এর অফিস স্থানান্তরিত হয়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী তে। তাতেও সুমন দেবের আসা-যাওয়া ভাটা পড়েনি। কিন্তু সমস্যা প্রকট হয় এক রাতে। নাসরিন একদিন বাসার ফ্রেশরুমে। হঠাৎ মোবাইলফোনে মেসেজ এলার্ট। আবুল নাসরিনের ফোনটি হাতে নিয়ে বাটন চাপতেই আঁতকে ওঠেন। সে কী ক্ষুদেবার্তা! ডার্লিং সম্বোধন করে লেখা। ‘নাসরিন, খুব মনে পড়ছে তোমাকে। আজ খুব হ্যাপি আমি। আমাকে ধন্য করেছো। রোজ এভাবে কাছে পেতে চাই তোমাকে। অনেক... অনেক প্রাণ ভরে খুশি করেছ আমায় ।’ বার্তাটি পড়ে অন্ধকার হয়ে আসে আবুল এর পৃথিবী। শুরু হয় প্রচণ্ড ঝগড়া। কোন সদুত্তর দিতে পারেন না নাসরিন। কথা বন্ধ স্বামী-স্ত্রীর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ চেয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করতে চান আবুল । নাসরিন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, অফিসে কখন গেল, কখন ফিরলো এইসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে লাগলেন। কিন্তু তাতেও থেমে যায়নি নাসরিন - সুমন দেবের পরকীয়া প্রেম। স্বাভাবিক জামা পরে অফিসে যেতেন নাসরিন যাতে স্বামী আবুল সন্দেহ না করে। কিন্তু ভ্যানিটি ব্যাগে নিয়ে যেতেন গর্জিয়াস জামা। অফিসের ফ্রেশরুমে তা পরিবর্তন করে প্রতিদিনই দেখা করে সুমন দেবের সঙ্গে। কোন কোন দিন অন্তত এক ঘণ্টা সময় নিয়ে মিলিত হতেন তারা। যানজটের শহরে এই সময়ের ব্যাখা দেয়া কঠিন কিছু না। এর মধ্যেই আবুল তার বন্ধুর বউ নাসরিনের বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারে নাসরিন মণিহারে মুভি দেখে এক যুবকের সাথে রিকশায় যাচ্ছে। যুবকটি তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে বাগ্বিতণ্ডে, এবং নাসরিন কে মারধর করেন আবুল । এভাবেই আবুল-নাসরিন এর সংসারে ভেঙেযায়।
শুধু নাসরিন নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে অনেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। ভাঙছে সংসার।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: