লেখক মোঃ রেজাউল করিম এর লেখা ছোট গল্প- সেই শাড়ীটা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২১ ১৭:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২১ ১৭:৫৯

ছবি সমসাময়িক
  মোঃরেজাউল করিম।। আজ আটাশে আষাঢ় চৌদ্দশ সাতাশ বঙ্গাব্দ অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আষাঢ় মাসের আটাশ তারিখ আসলেই ফিরোজার মন খারাপ হয়। অথচ একদিন এইদিনটাই তার জীবনে আনন্দের রঙে ঝলমল করত। এইদিন হলো তার বিবাহের দিন। নাসির বেঁচে নেই বলেই আজকের দিন তার কষ্টের দিন। একাকী ঘরে সে বিষন্ন মনে দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে দিগন্ত প্রসারিত মাঠের দিকে চেয়ে আছে। আকাশ বিরামহীন ঝরে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে মাঠ ধোঁয়াশা দেখা যাচ্ছে। ফিরোজা নাসিরের ছবিটার দিকে তাকাতেই নিঃশব্দে কেঁদে ফেলে। তার দু'চোখ দিয়ে পানি এসে মনের অজান্তে ঠোঁট ছুঁয়ে ফেলে সে নোনতা স্বাদ অনুভব করে, সম্বিৎ ফিরে পায়। এত সময় ফিরোজা নিজের জগতে ছিল না। নাসিরের, স্মৃতির মাঝে ডুবে ছিল। সাদা দেওয়ালে টানানো সাদা শার্টের ওপর কালো কোট গলায় টাই বাঁধা ছবিটা এই মুহূর্তে তার কাছে জীবন্ত মনে হয়। সে যেন নাসিরের ছবিটার সাথে কথা বলতে চায়। সে এখন যা ভাবছে সেটা তার নিঃসঙ্গ জীবনের একান্ত কষ্টের ভাবনা। অথচ তাদের এক সময় কী সুন্দর মধুর জীবন ছিল, সাজানো সংসার ছিল। আজকের দিনে যে চোখে আনন্দের বন্যা থাকার কথা সে চোখে কাঁন্নার ধারা। আঁচলে চোখের পানি মুছে ফেলছে আবার আসছে। বাইরে আষাঢ়ের ধারারও থামছে না,ফিরোজার চোখের পানি ও বাঁধ মানছে না। ফিরোজা এত সময় বালিশে শুয়ে বাইরে চেয়ে ছিল। এবার সে উঠে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে। মাঠে আউস ধানের মাথায় বৃষ্টি পানির সাথে হালকা বাতাসের পরশ নতুন জীবন দিয়েছে। দূরের বিলটা পানিতে ভরে গিয়েছে কিনা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ফিরোজা আস্তে করে খাট থেকে নেমে, ধীরে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে এ্যালব্যাম আর সেই শাড়ীটা বের করে,আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে নারকেল গাছটার মাথায় দু'টো দাঁড় কাক ভিজে যবুথবু, তাদের কোন আশ্রয় নেই। তবুও তারা একে অপরের মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়ে এই দুর্যোগের মোকাবিলা করছে। অথচ কী আমার কপাল জীবনের মাঝপথে জীবন দুর্যোগের ঘনঘটার মাঝে আমাকে রেখে নাসির চলে গেল! ফিরোজা অশ্রু সজল চোখে, কাঁপা হাতে, এ্যালব্যামটা খোলে। প্রথমেই চোখে পড়ে তাদের সেই ছবিটা,তারা দু'জন পাশাপাশি বসে আছে, বাড়ির মুরব্বিরা মিষ্টিমুখ করাচ্ছে, তাদের ঘিরে আছে বাড়ির ছোট -বড় ছেলে -মেয়েরা।কী আনন্দ ঘন পরিবেশ!মনে হয় এই তো সেদিন কিন্তু না,মাঝখানে কেটে গেল সাতাশ বছর। ওদের বিয়ে হয়েছিল চৌদ্দশ বঙ্গাব্দের আটাশে আষাঢ়। সে আকাশে মেঘ ছিল না -ছিল না বৃষ্টি। আষাঢ়ের নির্মেঘ আকাশে ছিল তেজদীপ্ত সূর্য। প্রচণ্ড তাপদাহে নতুন শাড়ীতে ঘেমে দম বন্ধ হয়ে আসছিল ফিরোজার। মনে একটা ভয়ও ছিল। যদিও সে সদ্য বি,এস,সি,পাশ মেয়ে তবুও মনের মধ্যে ভয়,লজ্জা, শঙ্কা, ব্যথা সব মিলিয়ে একটা অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে পরিচিত আপনজনদের ছেড়ে অপরিচিত জায়গায় অপরিচিতজনের মাঝে আগমন। তাও শহর ছেড়ে গ্রামে। বিদুৎবিহীন গ্রাম্য পরিবেশে আসার অভিজ্ঞতা ফিরোজার ছিল না। যাক আষাঢ়ের সেই তীব্র তাপদাহের মাঝে সাতক্ষীরা শহর থেকে যশোরের ঝিকরগাছা থানা শহর হতে দশ কিলোমিটার দূরে কপোকাক্ষর তীরে, কুশডাঙা গ্রামে, প্রাইভেট কারে করে, শ্বশুর বাড়ি আসে ফিরোজা। তার শ্বশুর কোবাদ মোড়ল জোতদার চাষি গৃহস্ত।আসেপাশের গ্রামে কোবাদ মোড়লের নাম ডাক আছে। বড় ছেলে বিয়ে দেওয়া যশোর রাজারহাট। বড় ছেলে হাইস্কুলে মাস্টারি করে। মেঝো ছেলে নাসির ব্যাংক অফিসার। ছোট ছেলে এখনো পড়ালেখায় রত।কোবাদ মোড়ল অর্থ-বিত্ত আর ছেলেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য শহরের মেয়ে বউ করে বাড়িতে আনতে পেরেছে। মেঘহীন আষাঢ়ের তাপদাহের সাথে যুদ্ধ করে সন্ধ্যার পরে নতুন বউ বাড়িতে আসল।বাড়িময় হৈ চৈ। বিদ্যুৎ নেই তো কি হয়েছে?সারা বাড়ি জেনারেটরের আলোয় ঝলমল করছে। কোবাদ মোড়লের ছেলের বিয়ে বলে কথা। ফিরোজা বুঝতেই পারেনি এটা বিদ্যুৎহীন গ্রাম।এখানেই শুরু হবে তার নতুন জীবনের পথ চলা। কেমন হবে তার জীবন সঙ্গী, কেমন হবে এ বাড়ির আর সব লোকজন। সে মানিয়ে নিতে পারবে তো?পারতেই হবে কারণ সে যে মনুষ্য জীব। ফিরোজা প্রাইভেট কার থেকে নেমে মেয়ে -ছেলেদের শোরগোলের মাঝে মাটিতে আঘাত না লাগে এমন আস্তে পা ফেলে, নাসিরের পাশে পাশে গুরুজনদের সাথে ঘরে উঠেছিল।এখনকার মতো তখন এত ভিডিও ছিল না।তবে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ ফিরোজার কানে যাচ্ছিল। লজ্জা, ভয়ের মাঝে সেই ক্লিক ক্লিক শব্দ তার মনে শিহরণ ছড়াচ্ছিল। সে দিন অনেক ছবি উঠিয়ে ছিল। নাসির খুব রুচিশীল, সৌখিন লোক ছিল। সে সব ছবি যত্ন করে এ্যালব্যামে রেখেছিল। অবসরে দু'জনে বসে এগুলো দেখত।আজ সেই ছবির এ্যালব্যাম নিয়ে একা বসে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করছে আর কষ্টের নিঃশ্বাস নিচ্ছে ফিরোজা। গ্রামে এখন বিদ্যুৎ এসেছে। মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির কারণে বুঝা যাচ্ছে না বিকাল কি সন্ধ্যা হয়েছে। ফিরোজা এত সময় বিদ্যুৎ এর আলো জ্বালেনি।আবছা আলো অন্ধকারে ছিল, সে সুইসটাই টিপ মারে,ঘরময় আলো ঝলমল করে।নাসিরহীন জীবন যন্ত্রণায় সে ঘেমে যাচ্ছে, ফ্যান ছাড়ে।আজ নাসির নেই, সে নিঃসঙ্গ।এজীবন তার আর ভালো লাগে না। তারপরও ভালো লাগাতে হবে। জীবনকে তো আর নিজের ইচ্ছায় উপড়ে ফেলা যাবে না। জীবন, -জীবনের গতিতে চলবে। তার জীবনে একটা ঝলমলে স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের ডানায় ভর করে জীবনের পথ পাড়ি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তো কখনো ভাবেনি নাসির এভাবে তাকে ছেড়ে চলে যাবে। দুরারোগ্য ব্যাধি তাকে নিয়ে গেল। নাসির মারা গেল তাও এই আষাঢ় মাসে। দুই মেয়ে নিয়ে তাদের সুখের সংসার ছিল। বড় মেয়ে এম,এ পড়ছে আর ছোট মেয়ে মেডিক্যালে।নাসিরের যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হতে চলেছে। নাসির মারা গেছে তা পাঁচ বছর হয়ে গেল। তাদের বাইশ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল। এখনো ফিরোজা মনে করে নাসির তার পাশেই আছে। অথচ না,নাসিরের শূন্যতা আর কখনো তাকে পূর্ণতা দিবে না। ফিরোজা বি,এস,সি পাশ ছিল। শ্বশুর বাড়ি এসে তার নতুন জীবন শুরু হলো। নাসির ব্যাংকে চাকরি করত বাড়ি থেকে যাওয়া -আসা করত।তিন বছরের মাথায় তাদের প্রথম মেয়ে হলো। এ বছর শ্বশুরের ইচ্ছায় গ্রামের হাইস্কুলে মাস্টারির চাকরি হলো। নাসিরের ইচ্ছা ছিল না কিন্তু কোবাদ মোড়লের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে যেতে পারলো না। সে চাকরিটা ফিরোজা এখনো করে।চাকরিটা না থাকলে সে হাঁপিয়ে উঠত। চাকরি পাওয়ার তিন বছর পরে ছোট মেয়ে হলো। ছন্দে, আনন্দে জীবন ভালোই কাটছিল।হঠাৎ নাসিরের এক রোগ দেখা দিল।তার হাত, পা কাঁপে।শরীর শুকিয়ে যেতে লাগলো। বাংলাদেশ, ভারত এ রোগের চিকিৎসা হলো না। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর, সেখান থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরে এলো। এ্যালব্যামে বিয়ের আসর থেকে নাসিরের মৃত্যু পর্যন্ত যেমন সব ছবি সাজানো তেমনি ফিরোজার স্মৃতিতে সব জ্বাজ্জল্যমান। সে পাতা উল্টাচ্ছে আর দেখছে অন্য দিকে জীবন খাতার লেখাগুলো তন্ময় হয়ে পড়ে যাচ্ছে। কখন যে সন্ধ্যা হয়েছে, আযান হয়েছে তার খেয়াল হয়নি।কড় কড় শব্দে বজ্রপাত হয় সে সম্বিৎ ফিরে পায়। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত আটটা। বাইরে বৃষ্টি কমেছে কিন্তু তার মনে বেদনার বৃষ্টি ফোঁটা ঝরেই যাচ্ছে। সে ক্লান্ত,অবষন্ন তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সে এ্যালব্যাম বন্ধ করে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে। তার চোখ থেকে মনের অজান্তে পানি ঝরছে সে আঁচলে মুছে ফেলে শান্ত হতে চাচ্ছে কিন্তু আবার ব্যথায় ভেঙে পড়ছে। তার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে জীবনের মধুময় দিনগুলো। আজ রাতই ছিল তাদের বাসর রাত।প্রতি বিবাহ বার্ষিকীতে নাসির একটা শাড়ি উপহার দিতে ভুল করত না।খুব জাঁকজমক করে বিবাহ বার্ষিকী পালন করত না। নিজেরা ঘরের ভেতর মেয়েদের নিয়ে মিষ্টি মুখ করে অনুষ্ঠান করত।তারপর দু'জন দু'জনার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রাত কাটাত।কত সুন্দর জীবন ছিল তাদের!আজ সাতাশতম বিবাহ বার্ষিকী। এর ভেতর কত কিছু ঘটে গেছে। শ্বশুর -শাশুড়ি মারা গেছে। সংসার সবার আলাদা হয়ে গেছে। নাসিরও পাঁচ বছর হল পৃথিবী থেকে চলে গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও বাঁচানো যায়নি। নাসির মারা যায় চৌদ্দশ বাইশ বঙ্গাব্দের পঁচিশে আষাঢ় রাত আটটা ত্রিশ মিনিটে। সে দিনের কথা ফিরোজা এখনো ভুলতে পারেনি। আর কোন দিন হয়ত ভুলতে পারবেও না।এই দিন নাসিরের ছোট বেলার বন্ধু রতন নাসির কে দেখতে আসে। নাসিরের ছোট ভাই বশিরও বাড়িতে আসে। বশির, রতন নাসিরের পাশে বসে আছে। নাসিরের কথা বলার শক্তি নেই। বশির ভাইকে চাঙ্গা করার জন্য তাদের ছোট বেলার স্মৃতি রোমন্থন করছে। তাতে নাসিরের ভাল লাগছে কিনা কে জানে? রতন পাশে বসে আছে। বাড়িতে নিকট আত্মীয়রা এসেছে। তারা নাসির কে নিয়ে এক এক জন এক এক ভাবে তাদের মনের আবেগ প্রকাশ করছে। তার মেয়ে দুটো ঘরেই আছে, তারা প্রয়োজন ছাড়া বাপকে রেখে কোথাও যায় না। বাপের চিন্তায় এবং রাত জাগানিতে মেয়েদের শরীরে ক্লান্তির ছাপ।নাসির শখ করে ছোট মেয়ের নাম রেখেছিল ছুটি আর বড় মেয়ের নাম রেখেছিল বাঁধন। আজ বাঁধন -ছুটিকে রেখে হয়তো সে নিজেই পৃথিবী থেকে ছুটি নিতে চলেছে। নাসির শুয়ে আছে। বশির তার সাথে কথা বলছে। নাসির ফিরোজা কে কষ্ট করে ডাকে। ফিরোজা ঘরে ছিল না। বশির তাকে ডেকে আনে।নাসির বলে, রতন এখন কটা বাজে? রতন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, বেলা তিনটা। নাসির ফিরোজার দিকে তাকিয়ে বলে,বাড়িতে শিং মাছ আছে? ফিরোজা মাথা নাড়িয়ে বলে, হ্যাঁ আছে। নাসির বলে, পটল ভাজি করো,মুগ ডাল,শিং মাছের পাতলা ঝোল,আর মুরগির গোসতের সাথে রসুন দিয়ে লাল ঝোল।আজ মিয়াভাই,বশির,রতন আর আমি একসাথে বসে খাব।রতন তোর বাড়ি যাওয়া হবে না। রতন বলে, ঠিক আছে। তুই যা বলবি তাই হবে। নাসির কথা বলতে পারছে না। তবুও সে কথা গুলো বলল।ফিরোজার শরীর হিম হয়ে আসে।যে মানুষ পাঁচ দিন ফলের রস,সুজির পায়েস,স্যালাইনের পানি খেয়ে বেঁচে আছে সে খাবে ভাত?কেমন যেন একটা অশনি সংকেত ফিরোজাকে শীতল করে দেয়। তবুও স্বামীর শেষ ইচ্ছা রক্ষার তাগিদে স্বামীর মাথায় হাত বুলায় আর বলে,তোমার ইচ্ছে মতো সব হবে। এবার বশিরকে কাছে ডেকে বলে,আমার সময় হয়ত শেষ। দুই দিন পরে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। এ পর্যন্ত তোর ভাবি কে একটা করে শাড়ি উপহার দিয়ে আসছি এবারও শেষ বারের মতো একটা শাড়ি দিতে চায়।আমি তো যেতে পারব না, তুই ঝিকরগাছা গিয়ে লাল পাড়ের কুসুম কালারের একটা শাড়ি কিনে আনবি।আমার বালিশের নিচে টাকা আছে নিয়ে যা।আসার সময় মহাদেবের হোটেল থেকে রসগোল্লা আনবি,বিবাহ বার্ষিকীর দিন আমরা মিষ্টিমুখ করব।ফিরোজা এসময় আর কাঁন্না চেপে রাখতে পারল না। সে আঁচলে মুখ ঢেকে চলে গেল। বশিরও হতাশ মনে ঝিকরগাছা চলল। ফিরোজা তার স্বামীর ইচ্ছে মতো রান্না করার জন্য ব্যস্ত হয়।সে জানে খেতে পারবে না তবুও স্বামীর ইচ্ছা পূরণের জন্য রান্না করে। সন্ধ্যা হয়ে আসে।আষাঢ়ে বেলা খুব টানা বেলা। এখন সাতটায় সন্ধ্যা হয়।ফিরোজার রান্না শেষ হয়।বশির ফিরে আসে।সে সুন্দর একটা শাড়ি কিনে এনেছে। সেটা নাসিরের সামনে মেলে ধরে। যেমন বলেছিল ঠিক তেমন শাড়িই এনেছে। নাসিরের খুব পছন্দ হয়।রতন শাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে, ভাবিকে খুব সুন্দর মানাবে। নাসির দেহের কষ্টের সত্বেও এক চিলতে হাসি দেয়। ফিরোজা কে কাছে ডেকে বলে, শাড়িটা আলমারিতে রাখো, আটাশ তারিখে পরবে আর মিষ্টি ফ্রিজে রাখো ওইদিন মিষ্টিমুখ হবে। ফিরোজা সব ঠিক মতো রেখে এসে বলে ভাত দেবো। নাসির বলে, না একটু পরে দাও।বশির দেখ তো মিয়া ভাই বাড়ি এলো কিনা? বশির, মিয়া ভাই বাড়ি এসেছে কিনা দেখতে যায়। ফিরোজা রান্না ঘরের দিকে যায়। হঠাৎ নাসিরের কাঁশি শুরু হয়। কাঁশির শব্দে বাড়ির সবাই ছুটে নাসিরের ঘরে আসে। সে ফিরোজা কে ইশারায় কাছে ডাকে। ফিরোজা তার স্বামীর কাছে যায়। রতন পায়ের কাছে বসে আছে। বশিরও বসে আছে। নাসির তার মাথাটা ফিরোজার কোলে রাখে। ফিরোজা স্বামীর মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর ভাবে এত কষ্ট করে রান্না করলাম সে খেতে পারবে না। তার বুক ফেটে যাচ্ছে, চোখ দিয়ে নীরবে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কাঁশি কম হচ্ছে না কেঁশেই যাচ্ছে। চোখ মেলতে পারছে না। এক সময় কাঁশি একটু কম হয় কিন্তু সে হাঁপাতে থাকে। এবার সে চোখ মেলে সবাই কে দেখতে থাকে। আবার কাঁশির বেগ আসে। সে আল্লাহ বলে জোরে কাঁশি দিয়ে ফিরোজার কোলে নিস্তেজ হয়ে যায়। সব পড়ে থাকে নাসির চলে যায়। ঘরে কান্নার রোল পড়ে প্রতিবেশিরা ছুটে আসে। ফিরোজার সেই শাড়ি আর পরা হয়নি সেভাবেই আছে। সেই থেকে আর কোন দিন সে মুরগির গোস্ত,শিংমাছ,পটল ভাজি,মুগডাল খায়নি। মেয়েরা পড়ালেখার জন্য বাইরে থাকে।বাড়িতে সে এখন একা। নিজের জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে জানে না। সকালে ছাত্ররা পড়তে এসে দরজার কড়া নাড়লে তার ঘুম ভাঙে।সে দেখে দক্ষিণ দিকের জানালা খোলা, আলো জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে। এ্যালব্যাম তার পাশে পড়ে আছে আর শাড়িটা বুকের উপর । সে ভাবে এমন তো কোন দিন হয়নি। দরজা খুলে বাইরে আসে,ছেলেদের বলে, তোমরা বাড়ি যাও।আজ আর পড়াব না।তারা কিছু না বুঝে বাড়ি যায়। ফিরোজা দেখে বাইরে বৃষ্টি নেই কিন্তু আকাশে মেঘ আছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: