ছোট গল্প কান্নাভেজা ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০ মে ২০২১ ২৩:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ মে ২০২১ ২৩:০৫

ছবি সমসাময়িক
  মোঃ শাহ্ জালাল।। ১৯৭১ সাল মিতুর বয়স তখন সবে চার বছর। ভালো বুঝতে না শিখলেও মেয়াটা কথা বলে তোতা পাখির মতো। ঈদুল ফিতরের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। যাকে সাধারণত আমরা রোজা’রা ঈদ বলে থাকি। দেশে চলছে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। গতবছর মিতুর বাবা আকাশ মুক্তিযুদ্ধে নাম লিখিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেও এখনও ফেরেনি। এক বছর বাবাকে না দেখে মিতু বার বার মা আয়েশাকে জিজ্ঞেস করছে মা মা ওমা বাবা কবে আসবে? ঈদতো এসে গেল বাবা আসবে না, আমাকে নতুন জামা দিবে না? ওমা বলোনা বলো! মিতুর এমন সব প্রশ্নের উত্তরে আয়েশা বললেন তোমার বাবা ঈদের আগের দিন আসবে মা, এখন অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমায়। পরদিন ফজরের আজানে ঠিক একটু আগে সাহরি শেষে বাড়িতে কয়েক জন লোক দরজার কড়া নেড়ে ডাকছেন ও মিতুর মা ও মিতুর মা ওঠো। মিতুর মা আয়েশা দরজা খুলতেই দু'জন লোক মুখ চেপে ধরে আরো কয়েক জন মিলে আয়েশাকে খাটের সাথে হাত পা বেঁধে ফেলে। মিতু চিৎকার করতেই মিতুর মুখের ভিতর গামছা ভরে দিল, মেয়েটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে ঘরের এক কোনে। মিতুর সামনেই মিতুর মা আয়েশাকে একের পর এক জানোয়ারের মতো নির্যাতন করতে লাগলো এবং বলতে লাগলো তোর স্বামী কোথায় বল, তোর স্বামী কোথায় বল? আয়েশা বললো জানি না। ওরা বলতে লাগলো তুই সব জানিস, তোর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে নাম লিখিয়েছে তাই না। ওকে পেলেই মেরে ফেলবো বলে আয়েশাকে একেএকে শিয়ালের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলো। এর মধ্যে মসজিদে আজানের ধ্বনি বেজে উঠলো আসসালাতু খায়রুল মিনার নাও........। রাজাকারের দল তাদের খাস মিটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আয়েশার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। হায়েনাদের অমানুষিক তান্ডবের পর আয়েশা কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের আড়ার সাথে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিবে এমন সময় মিতু মায়ের পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো ওমা মাগো তুমি মরোনা, সামনে ঈদ বাবা আয়বো মা, তুমি মরোনা। ঈদের দিন বাবা আয়লে আমি সব বলেদিব ওরা তোমাকে খুবই মেরেছে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আয়েশা মেয়েকে জড়িয়ে হাও মাও করে কাঁদতে লাগলো। পরদিন সকালে ডাকপিয়ন বাড়িতে এসে একটা প্যাকেট ধরিয়ে চলে গেলেন আয়েশার কাছে। প্যাকেটর ভিতর মিতুর জন্য একটা লাল সবুজ রঙ্গের জামা ও একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিলো   প্রিয়তমা আয়েশা, কেমন আছে, মিতু কেমন আছে? আমি ভালো আছি। জানি তোমাদের মন খারাপ। মিতু কি আমাকে খোঁজ করে। চিন্তা করোনা আমি ঈদের দিন বাড়িতে আসবো, তোমাদের সাথে ঈদ করবো। আর মাত্র দুইটা দিন ধৈর্য ধরো, এলাকা শত্র মুক্ত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ্। আমার কারণে যদি ওরা তোমার বা আমার বাড়িতে কোন ক্ষতি করে তবুও তুমি মিতুকে একা ফেলে হারিয়ে যেওনা। ওরা বহু এলাকায় আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা আছি তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে মেয়েদের কে বিভিন্ন শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে । ভালো থোকো সোনা পাখি। ইতি, তোমার আকাশ। ২৭শে রমজানের দিন ফজরের আজান থেকে শুরু হলো গোলাগুলি। চাকরি থেকে শত্রুরা ঘিরে ফেলেছে আকাশদের। একের পর এক বোমার বিকট শব্দে আতঙ্কিত। বাঁশ গাছের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ছে গোলাগুলিতে। আকাশের পাশে অনেক সহযোদ্ধা ইতিমধ্যে শহীদ হয়েছেন। অনেকেই বলছে চলো পালায়। শত্রুর একটা বুলেট হঠাৎ আকাশের ডান পায়ে এসে লাগলো। তবুও পিছু না হেঁটে গায়ের জামা ছিঁড়ে বেঁধে নিল পা। আর পালানোর পথ নাই সামনে এগুতেই হবে জয়বাংলা বলে গুলি চালাতে লাগলো আকাশ। একটানা দুই দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর শত্রুদের পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে নিলো। ঈদের দিন সকালে বাড়িতে ফিরে এলো আকাশ। বাড়িতে এসেই ডাকতে লাগলো মিতু মিতু মা মিতু ওঠো। প্রায় এক বছর বাবাকে না দেখে মিতু বাবার কণ্ঠ চিনতে পারলো না, তাই সাড়াও দিচ্ছে না। এদিকে আয়েশার শরীরে প্রচন্ড জ্বর ও ব্যাথা। ঘুমিয়ে পড়েছে। আবারও আকাশ ডাক দিল আয়শা আয়শা দরজা খোলো আমি এসেছি। আয়শা থাড়ুমাড়ু করে ঘুম থেকে উঠে দরজার খুলতে গেলে কিন্তু মিতু ভয়ে খুলতে দিচ্ছে না, গতদিনে মায়ের উপর নির্যাতনের কথা মনে করে ভয় কাঁপছে। এর পর দরজার খুলতেই আকাশ ঘরে ঢুকে মিতুকে কোলে নিল। তখনও মিতু বাবার কোলে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আর বলছে জানো বাবা ওরা মাকে.........................!! একথা শোনার পর আশাক বলে উঠলো এই বাংলায় আর কোন নারী নির্যাতন হবে না মা। ওরা আর আসতে পারবে না আমরা ওদের কে মেরে ফেলেছি। আমরা এখম মুক্ত আমরা স্বাধীন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: