
শামছুন্নাহার।।
নিরালা নিরজনে আমি কইলাম বাছাধনেরে,ঐ গিরামে যাসনে। কিন্তুক খিডা কার কথা শোনে। বাছাধন কইল-
ক্যান মা কি হবে ঐ গিরামে গেলি? বাছা আমার নাছোড় বান্দা, কৌতুহল নিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আমার তো ভয় বাছা আমার যদি টের পায়ে যায়
বাছা মানে ছেলে, ছেলে তো আমার দিন দিন বড়ো হচ্ছে,কেউ না কেউ একদিন তো কবেই। তাই আমি চিন্তা ভাবনা করে ভয়ে ভয়ে কলাম। ঐ গিরামে যে থাকে সে আমার অতীত। বাছার কৌতুহল আরও বেড়ে যায়,সে কলো কওনা মা। আমি চুপ করে গেলাম।
তারপর হঠাৎ একদিন ছেলেরে খুঁজে পাই না। জিজ্ঞেস করতি করতি খুঁজদি খুঁজদি ওর ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে দেখা, সে কইলো তোমার ছেলে ঐ গিরামে গেছে। আমারে কইছে আমার মা যদি খোঁজে, আমার কথা জিজ্ঞেস করে, তুই কইবি আমি জানিনে। শুনে আমি বুঝলাম ওর যে রক্তের টান, ঐ টানেই ঐ গিরামে গেছে।
বেশ কয়েক ঘন্টা পর বাছা আমার ফিরে আসে
আমি জিজ্ঞেস করি কিরে বাপ তুই কনে গিলি? আমি তোরে কত বেলা ধরে খুঁজে পইনি। বাপের আমার মুখ ভার,জিজ্ঞেস করতি করতি সে কইল, মা ঐ গিরামে যে আমার আব্বা থাহে তা তো তুমি আমার কওনি। আমি কলাম ক্যানরে বাজান তুই একথা কইছিস ক্যান? বাছা কলো ঐ গিরামে ঘুরতি ঘুরতি এট্টা মানুষির সাথে দেহা হলো,সে আমার সাথে কতো কথা কইল। আমিও তার সাথে কথা কইছি। তা কি কথা কলি? আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো তোমার বাড়ি কনে? তোমার নাম কি? তোমার বাপের নাম কি? বাপের নাম জিজ্ঞেস করতি আমি কলাম আমার বাপের নাম তো জানিনে,আমার মাও কোনদিন কইনি,তারপর মানুষটা কইল তোমার মার নাম কি? আমি তোমার নাম নিতিই আমারে বুহি টানে নিল।সে কলো বাজান তুই আমার ছাবাল। আমি কলাম কি করে তোমার ছাবাল হলাম? সব ছেলে পুলে
তো মা আর বাপের সাথে থাহে, তা তুমি এই গিরামে মা ঐ গিরামে থাহে কেন? মানুষটা কানতি লাগলো, আর কিছু কলো না। জানো মা ঐ মানুষটা মেলা ভালো, আমারে সে দোকানতে চকলেট, জুস কতো কিছু কিনে
দিচ্ছিল, কিন্তু আমি কিচ্ছু নি-নি। তুমি যে শিখাই ছাও অচিনা মানষির কাছতে কিছু না খাতি,তাই আমি নি-নি। মা বাছার কথা শোনে আার অঝোরে কাঁদে।
ছেলের আবার প্রশ্ন, তুমি কোনদিন আমার বাপের কথা
কওনি কেন মা? মা ভয়ে ভয়ে কইল, ক্যান কইনি জানিস,তোর হারায় ফেলার ভয়ে। তোরে আমার
কাছতে নিয়ে যদি কোন ক্ষতি করে দেয়, তাই কইনি।তা আয় বাপ তুই আমার বুহি আয়। বলে মা ছেলে দুই জনে কি কান্না।
ছেলে ঘোরে ফেরে আগের মতো খেলে না, কি যেন
চিন্তা করে,আবার মাঝে মাঝে মাকে প্রশ্ন করে, মা সগ্গলির মা বাপ এক সাথে এক যায়গায় থাহে,তোমরা আলাদা থাহো ক্যান? আমি কলাম শোন তালি বাছা, আমার যহন তোর বাজানের সাথে বিয়ে হয়, তার পর পরই তুই আমার প্যাটে জন্ম নিছিস। তোর বাপ শুনে আমারে কয় তোর প্যাটের বাচ্ছা আমার না। তুই কনা বাজান তুই যদি তাঁর না হইতি তাহলে বিয়ের আগে কেন প্যাটে আইলি না। তাই ঐ কথা তোর বাপের মুহি শুনে প্রতিজ্ঞে করিলাম ওর বাপ যেহন অস্বীকার করলো,তহন আমি এহালাই আমার সন্তানের মানুষ করবো। ওরে মানুষের মতো মানুষ করবো। সেই থেকে আমার যুদ্ধ শুরু, তারপর তুই দুনিয়ায় আসলি। তোরে বহি করে আগোনের চেষ্টা করতিছি। তুই মানুষের মতো মানুষ হবি।মানুষ সমাজে তোরে তুলে দিতি পারলি আমার ছুটি। তোরে মানুষ করে তোর শান্তি দেহে মরলি আমি মরেও শান্তি পাব।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: