
শামছুন্নাহার।।
যুদ্ধের সময় ও ছিলো ওর মায়ের গর্ভে,
বীরাঙ্গনা নারীর গর্ভজাত সন্তান ও। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ওর মাকে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তা ওর মাকে দেখে
লালসার হাত বাড়িয়ে দেয়। ঐ সময় ও কেবল যুবতীতে পদার্পণ করেছে। ওকে দেখে পাকিস্তানি কর্মকর্তা মানে লালসার কুত্তা নিজেকে সামলাতে পারেনি। ওকে ওর মতের বিরুদ্ধে যেয়ে, পৈশাচিক নির্যাতন করে দিনের পর দিন ওকে ভোগের সামগ্রী করে তোলে। ফলে জন্ম নেয় ও।
ক্যাম্প থেকে ওর মা যখন মুক্ত হয়, তারপর কয়েক বার গিয়েছিল আত্মহত্যা করতে। কিন্তু এ কাজে বাঁধ সাধে ওরই ছোট ভাই। ফলে দিন যায় মাস যায়, দীর্ঘ নয় মাস দশ দিন নিজের সাথে যুদ্ধ শেষে ভূমিষ্ঠ হয় শিশুটি। দুনিয়ার আলো দেখিয়ে ওর মা পাড়ি দিলো পরো পারে। শিশুটি হলো আরেক মানচিত্র।
কি উপায়? শিশুটি তো কোন দোষ করেনি। ওর মাকে হতে হয়েছিল হায়েনার স্বীকার। যে দোষ করেছে সে ওর জন্ম দাতা, সে তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কোন উপায় না পেয়ে শিশুটিকে বুকে তুলে নিলেন ওর মামা। বাঁচিয়ে রাখার মালিক আল্লাহ, কিন্তু লালন পালনের জন্য কাউকে প্রয়োজন। সেই দায়ভারটাও তুলে নিলেন ওর মামা। মামা ওকে স্ব যতনে পালতে লাগলেন। এখানে শিশুটির মামার একটি বড়ো ত্যাগের
কথা বলতেই হয়, বাচ্চাটিকে যাতে নির্বিঘ্নে মানুষ করতে পারেন তার জন্যে বাচ্চাটির মামা জীবনে আর বিয়েই করলেন না। বাচ্চাটির মামা হয়ে উঠলেন বাবা। শিশুটি তার মামাই বাবার পরিচয়ে স্কুলে ভর্তি
করিয়ে দিলেন। মনোযোগী হয়ে লেখা পড়ার গন্ডি পার করে আজ সে একজন মস্ত বড়ো সেনাকর্মকর্তা। আজ সে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ। দেশ রক্ষক। নরপিশাচের জন্ম হওয়া সত্ত্বেও সে তার পিশাচ জন্মদাতার মতো হয়নি। কারণ সে একজন বীরাঙ্গনা শহীদ মাতার সন্তান। তার বেড়ে ওঠা একজন মুক্তিযোদ্ধা মামার হাতে। আর জন্ম যেখানে যেভাবে হোক না কেন,কর্মে তার পরিচয়। মানুষের পরিচয় জন্মে নয়, মানুষের মতো মানুষ হয়ে তাকে ভালো কর্মেই বাঁচতে হয়।
(কাল্পনিক চরিত্রে লেখা)

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: