মণিরামপুরের শাহ্ মান্দারতলার অনেককিছুই রহস্যময়

মোঃ শাহ্ জালাল। | প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৩

মোঃ শাহ্ জালাল।
প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৩

ছবি- দৈনিক সমসাময়িক নিউজ।

মোঃ শাহ্ জালাল।। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ডুমুরবিলে অবস্থিত শাহমান্দারতলা। এখানে অবস্থিত বড় বটগাছেটি গতবছর ঝড়ে উপড়ে পড়েছে তাই পূর্ব পাশের ছোট বটগাছে সুতো ঝুলিয়ে প্রতিদিন মানত করতে আসেন শত শত নারী-পুরুষ।

মুক্তেশ্বরী ডিগ্রী কলেজে উত্তর পাশের বিলের গাঁ ঘেষে চার ধারে কাটাখালি, ভোমরদহ, নলডাঙ্গা, হাজিরহাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। তারই মাঝে একসময় ছিল ঘন বনজঙ্গল।
নির্জন জঙ্গলে বাস করতো বাঘ, ভাল্লুক, শুকরসহ নানা ধরণের হিংস্র প্রাণি। ভয়ে সেখানে কেউ যেতে সাহস পেতো না। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে এক রহস্যময় ব্যক্তি আসেন এখানে। কয়েক বছর অবস্থান করার পর তার পরিচয় মেলে তিনি পীর শাহ মান্দার। কয়েক বছর জঙ্গলের মাঝে একটা বটগাছের নীচে একা একা থাকতেন। তারপর থেকে সেখানে দু’একজন মানুষের আসা যাওয়া শুরু হয়। তবে সন্ধ্যার পর সেখানে কেউ যেতে সাহস পেতনা। এরপর তিনি কবে, কখন কোথায় চলে যান তা কেউ জানে না। তারপর থেকে জায়গাটির নামকরণ হয় শাহ্ মান্দারতলা।

শাহ্ মান্দারতলা এলাকাবাসীর কাছে পবিত্রস্থান কিন্তু সন্ধার পরেই নেমে আসে জুয়া ও গাজার আসর। তবুও এখনও সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে হিন্দু-মুসলমান সবাই একই স্থানে যে যার ধর্ম কর্ম করছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বলেন পীরস্থান, আর হিন্দুরা বলেন পূজাস্থান। এ ব্যাপারে যে যাই বলুক না কেন এতে কারও কোন আপত্তি বা বাঁধা-বিপত্তি নেই।

কোন সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে এবাদত বা উপাসনা করার উদ্দেশ্যে আসেন না। আসেন শত হতাশ থেকে পরিত্রাণ পেতে এক বুক আশা নিয়ে। হিন্দু-মুসলিমসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ যার সন্তান হয়নি সে সন্তান লাভের আশায়, কেউবা বালা-মুছিবত, বিপদ-আপদ, হামলা-মামলা থেকে মুক্তির আশায় আসেন। শাহ্ মান্দার তলায় এক সাথে পাশাপাশি একটি নিম (পূর্বের নিম গাছটি মা-রা গেছে নতুন করে আর একটি রোপন করা হয়েছে) ও একটি বটগাছ আছে। সে গাছ তলায় নারী-পুরুষ কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে বসেন। ফুল-পাতা পড়লে সেটা আশা পূরণের প্রত্যাশায় বটগাছে ইট ঝুলিয়ে মানত করে ফুল-পাতা ব্যবহার করেন। সুফল পেলে গরু-ছাগল.হাস-মুরগি, টাকা-পয়সা দিয়ে মানত শোধ করেন। গোসাই গণেশ দাস প্রায় ৩০ বছর ধরে এটির দেখাশুনা করেন। ভক্তবৃন্দ যা দেন তাই খেয়ে জীবন ধারণ করেন তিনি।

স্থানীয় সুক্রতি, প্রশান্ত, সুব্রত সহ কয়েকজন জানান, তাদের দাদার মুখে শুনেছেন, শাহ্ মান্দার নামের এক পীর এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন মাঠের মাঝে এ মান্দারতলা গভীর জঙ্গলে ভরা ছিল। বাঘ, ভাল্লুক, শেয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণী থাকতো। লোকজন সেখানে যেতে সাহস পেতেন না। তারই মাঝে শাহ-মান্দার পীর কয়েক বছর অবস্থান করেন। এর আগে কাটাখালি কুড় নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা গোসাই গণেশ দাস জানান, তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ শাহ মান্দার তলা দেখাশুনা করেন। এর আগে কার্ত্তিক চন্দ্র গোসাই দেখাশুনা করতেন। এ দু’জন গোসাই দীর্ঘ ৬০ বছর দেখাশুনা করে আসছেন। তবে তার আগে কেউ দেখাশুনা করেছেন কি না সে কথা কেউ জানেন না। তিনি আরও জানান, সে সময় হয়তো কেউ দেখাশুনা করার দায়িত্বে ছিলেন না। উন্মুক্ত জায়গা ছিল। স্থানীয় লোকজন জানান, শাহ্ মান্দার তলা জায়গাকে কেন্দ্র করে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যা আজও এলাকার মানুষের মুখে-মুখে রহস্যময় কাহিনীর মত ভেসে বেড়াচ্ছে।

ঝর্ণা রাণী, আনোয়ার বেগম সহ কয়েকজন মহিলা বলেন, আমাদের পরিবারের লোকজন ৩৫-৪০ বছর যাবৎ শাহ্ মান্দার তলায় বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবতের জন্য আসে। মুক্তি পায় এবং মানত দেয়। বিলের ধারে যে বনে বন্য হিংস্র প্রাণীর বসবাস ছিল। কালের আবর্তে সেই জঙ্গলে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন আসেন শত শত মানুষ। তবে সপ্তাহের বৃহস্পতি ও রোববার বেশি মানুষের সমাগম ঘটে এই রহস্যময় স্থানে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: