উত্তম চক্রবর্তী,মণিরামপুর(যশোর)অফিস৷৷ আগামী ১৩ নভেম্বর উজ্জলপুর শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের উজ্জলপুর গ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছিল পাঁচ সূর্যসন্তান। ইতিহাসের পাতায় সেই আত্মাহুতি খোচিত হলেও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও শহীদদের কবরস্থান, সেই স্মৃতি অনাদরে-অবহেলায় পড়ে আছে। ১৯৭১ সালে ঝিকরগাছার বাঁকড়া ইউনিয়নের উজ্জলপুর, খোসালনগর, দিগদানা, মাটশিয়া ও মণিরামপুরের ডুমুরখালী গ্রামসহ এলাকায় অবস্থানরত কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন ফজলুর রহমান। ঘটনার দিন ১৩ নভেম্বর খোসালনগর কপোতাক্ষ নদের ঘাটে কেশবপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুভাষের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পাহারায় থাকার কথা ছিল কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তারা পাহারা স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। যার ফলে মণিরামপুরের রাজগঞ্জের ঝাঁপা থেকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা গোপনে কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে খোসালনগরে চলে আসে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি গ্রুপ আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে খোসালনগর খেয়াঘাট পাহারা দিতে কপোতাক্ষ নদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পথিমধ্যে উজ্জলপুর গ্রামের নিছার আলী সংবাদ দেন, পাকসেনারা নদ পার হয়ে এপারে চলে এসেছে এবং নিকটে কোথাও অবস্থান করছে। তখন মুক্তিকামী সেনাদল আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে সামনের দিকে এগুতে থাকে পাকসেনাদের খোঁজে। সেখানে বাগানে ওত পেতে থাকা পাকসেনাদের অতর্কিত হামলায় শহীদ হন কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোর্ট গ্রামের আব্দুল খালেক, মণিরামপুর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের জামাল উদ্দীন খান, হানুয়ার গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক, জামশেদ আলী ও রোহিতা গ্রামের নূর ইসলাম। হামলার পর পাকসেনারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুনরায় সেই পথে ফেরার সময় জামাল উদ্দীন খানকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। তারপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হোসেন আলী ও গ্রামবাসী পাঁচ শহীদকে উজ্জলপুরেই দাফন করেন। ১৯৯৫ সালে সেই শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ উপলক্ষে করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ১৩ নভেম্বর মণিরামপুর উপজেলার ১১ নং চালুয়াহাটি ইউনিয়নের নেংগুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে নেংগুড়াহাট শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদের আয়োজনে সকাল ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জামাল উদ্দিন খানের ৪৯ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সার্বিক সহযোগীতায় থাকবেন শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম খান এবং পরিচালনায় থাকবেন শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদের যুগ্ম সম্পাদক ও চালুয়াহাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক রাজু আহম্মেদ। এ উপলক্ষে আগামী কাল শনিবার সকালে নেংগুড়াহাট শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদে এক বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই শহীদ জামাল স্মৃতি সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হলো।
                                
                        
                                                        
                                                        
                                
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: