মণিরামপুরে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে বীর নিবাসের বাড়ি নেওয়ার অভিযোগ

মণিরামপুর প্রতিনিধি।। | প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৭

মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৭

ছবি- মণিরামপুর পৌরশহরে আলাউদ্দিনের তিনতলা বাসভবন

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি।।

ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসা মনিরামপুরে তিনতলা বাড়ি নির্মাণাধীন, মেয়ে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, ছেলে প্রকৌশলী বলছিলাম মনিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব মো. আলাউদ্দিনের কথা। তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং চাকরির সুবাদে পান পেনশন। তাঁর ছেলে প্রকৌশলী ও মেয়ে প্রবাসী। ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা আছে। মনিরামপুর পৌরশহরে নিজস্ব জমিতে আছে এক তলা বাড়ি। এই বাড়ি তিনতলা করা হচ্ছে। তবে তথ্য গোপন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে 'বীরনিবাস' প্রকল্পে ১৮ লাখ টাকার একটি বাড়ি পেতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিন। মনিরামপুরের প্রয়াত সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে ২০০৯ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্ব পান তিনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৩০ আগস্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান আলাউদ্দিন। সম্প্রতি সরকার মনিরামপুরের পাঁচজন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে 'বীর
নিবাস' প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতিমধ্যে তদন্ত করে পাঁচজনের একটি তালিকা চূড়ান্ত করে বাড়ি নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই তালিকার ৪ নম্বরে রয়েছে আলাউদ্দিনের নাম। তাঁর নামে বাড়িটি নির্মাণ করা হবে ঝাঁপা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে তাঁর পৈতৃকভিটায়। অথচ মনিরামপুর পৌরশহরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিজস্ব জমিতে তাঁর প্রাচীর ঘেরা একটি একতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি তিনতলা করার কাজ চলছে। এ ছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় তাঁর একটি ফ্ল্যাটবাসা রয়েছে। ঢাকার থাকেন আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী। মাঝেমধ্যে তিনি মনিরামপুর এসে কাজকর্ম করেন।

আলাউদ্দিনের দুই সন্তান। তাঁর ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধী ভাতা ও পেনশন পেয়ে থাকেন তিনি। এসব তথ্য গোপন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে 'বীরনিবাস' প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলীর ভাষ্য, আলাউদ্দিনের নামে বীরনিবাসের ঘর বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু ধোপে টেকেনি।

তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আবেদনে প্রকৃত অবস্থা গোপন করে গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করেছেন। সে অনুযায়ী গ্রামে গিয়ে তাঁর পৈতৃক ভিটায় কোনো বাড়ি পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুপরিশ করা হয়েছে।

ঝাঁপা এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবদুল কাদের বিশ্বাসের স্ত্রী লাইলি বেগম আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে বসবাসের জন্য সাবেক কমান্ডার আলাউদ্দিনের কাছে আবেদন করেও একটি বাড়ি বরাদ্দ পাননি তিনি।

আলাউদ্দিনের ভাষ্য, ঢাকা ও মনিরামপুর পৌরশহরে তাঁর বাড়ি থাকলেও মল্লিকপুর গ্রামে পৈতৃকভিটায় বাড়ি নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, নিজেকে অসচ্ছল দাবি করে প্রকৃত তথ্য ও অবস্থান গোপন করে গ্রামের ঠিকানায় আবেদন করেছেন আলাউদ্দিন। তিনি প্রশ্ন করেন, তদন্ত কমিটি কীভাবে তাঁর পক্ষে মতামত দিল? এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: