
দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক।।

✪করোনায় শিশুদের শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
উল্লেখিত ছাড়াও এমনকি নাক বন্ধভাব, মুখ দিয়ে লালা পড়া, ঠোঁট বা মুখ ফাটা এবং ঠোঁটে নীলচে আভা, বিরক্তি, নিদ্রাহীনতা এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া এগুলো করোনার লক্ষণ হতে পারে। তাই এ সময় যদি শিশুর শরীরে এসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের সংক্রমণ রোধে এজন্য আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদিও শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন। তবে তাদের নিরাপদ রাখার একমাত্র বিকল্প হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনেচলা।✪✪ আপনার সন্তানের সুরক্ষার জন্য এ সময় যা যা করণীয়:
★★ যে শিশুরা এখনও বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল; তাদের মায়েদেরকে সাবধান হতে হবে। মাস্ক পরা এবং ঘন ঘন স্যানিটাইজ ব্যবহার করতে হবে। ★★ তবে দু’বছরের ছোট শিশুকে মাস্ক পরানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদেরই সারাক্ষণ মাস্ক পরতে হবে। ★★ শিশু মাস্ক না পরলে, তাদেরকে বুঝিয়ে মাস্ক পরাতে হবে। ★★ বাবা-মা বা বাড়ির অন্য কারও যদি কোনো উপসর্গ দেখা যায়; তাহলে টেস্ট করিয়ে নিন। উপসর্গ দেখা গেলেই বাচ্চাকে অন্য কক্ষে বা যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখতে হবে দিনের বেলায় সহজে বায়ু আদান প্রদান করানোর জন্য। তাতে সংক্রমণের মাত্রা কমে যাবে। ★★ স্কুল যেহেতু বন্ধ তাই শিশুদের নিয়ে বাইরে বের না হওয়ায় ভালো। তাদের বাড়িতেই নানা রকম কাজে-খেলায় ভুলিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। ★★শিশুদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ডি, ক্যালসিয়াম এবং জিংক জাতীয় খাবার যেমন ফল,মূল, শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে দেওয়া উচিত ★★ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে শিশুকে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলাও অভিভাবকের দায়িত্ব।
✪✪শিশুদের সুরক্ষা দিতে আমাদের একটা বড় দায়িত্ব:
স্বাস্থ্যবিধিটা আমাদের সকলের মানতে হবে সাথে সাথে শিশুদের বুঝাতে হবে।শিশুদের যেমন মাস্ক পরাতে হবে তেমন মাস্ক পরার গুরুত্বটাও বুঝাতে হবে। বাচ্চারা যদি কোনো জিনিসে হাত দেয় তারপর তাকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্বটা বুঝাতে হবে। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে কিভাবে হাত ধুতে হয় তাকে সেটি শেখাতে হবে। আর যারা বাইরে যান, তারা বাইরে থেকে ফিরে আগে নিজেকে পরিষ্কার করে বাচ্চার কাছে যেতে হবে। এসব বিষয়গুলো বড়রাও মেনে চলবে একই সাথে ছোটদেরও বুঝিয়ে মেনে চলতে বাধ্য করাতে হবে। তাহলে আমার মনে হয় বাচ্চাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে।
✪✪শিশুদের শরীরের ইমিউনিটি বুস্টার বাড়াতে হবে:
এজন্য শরীরের ইমিউনিটি বুস্টার বাড়াতে প্রথমে প্রয়োজন প্রোটিন। এখন আমাদের কাছে প্রোটিন সোর্স ৪টা (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল)। দ্বিতীয়ত শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে প্রয়োজন ভিটামিন- এ। আমরা আমাদের ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য প্রতি ছয় মাস পরপর ভিটামিন এ ক্যাপসুল দিয়ে থাকি। কিন্তু একই সাথে যেসব খাবারের মধ্যে ভিটামিন এ আছে সেগুলো খাওয়াতে হবে। যেমন: সবুজ শাক-সবজি, ছোট মাছের ভেতরে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে তৃতীয় বিষয়টি হল ভিটামিন ডি এবং সি। ভিটামিন ডি থাকে, মুরগী, গরু, ছাগলের কলিজায়। সম্ভব হলে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বাড়াতে বাড়ির সাদেক উপর বা খোলা জায়গায় সূর্যে আলো বেছে নিতে পারেন। ভিটামিন সি পাওয়া যায় টক জাতীয় ফলের মাধ্যমে (কমলা, লেবু, জলপাই, মাল্টা, স্ট্রবেরি, আঙুর, বরই, জাম্বুরা, আমলকি ইত্যাদি) ভেতর। সুতরাং, এই সময়ে আমরা যদি শিশুদের জন্য প্রোটিন এবং ভিটামিন সম্রিদ্ধ খাবারগুলি নিশ্চিত করেতে পারি তাহলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
লেখক,
অধ্যাপক ডা. এবিএম শহিদুল আলম, শিশু বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হসপিটাল। সাবেক বিভাগীয় প্রধান রাজার'বাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হসপিটাল এবং বর্তমানে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডাক্তার এম আর খান শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের জেষ্ঠ্য শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: