
ছয় বছর পর চিঠি- প্রথম খন্ড
মোঃ শাহ্ জালাল।
১৯৭১ সাল দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষ। সবাই গ্রামে ফিরে আসছে। শুধু সুমন আসে নি। সবার ধারণা, সুমন বেঁচে নেই। যুদ্ধে মারা গেছে। সুমনের নববধূ মাত্র যুদ্ধের ১৫ দিন আগে বিয়ে হয়েছে নাম শাপলা সে মেনে নিতে পারছে না। শাপলার বিশ্বাস, সুমন বেঁচে আছে। একদিন ফিরে আসবে আসবে করে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সুমন আসেনি। এসেছে ওর লেখা একটা চিঠি।
চিঠির বিষয়টা অন্য সবার কাছে গোলমেলে মনে হয়। কিন্তু শাপলার কাছে তা মনে হয় না। সুমন যখন যুদ্ধে যায়, তখন শাপলা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে শাপলা বিয়ের এক মাস আগেই অন্তঃসত্ত্বা কেননা শাপলা বিয়ের আগে সুমনের সাথে একাধিক বার শারিরীক সম্পর্কে মিলিত হয়েছে। তবে সুমন কিন্তু মুসলিম না হিন্দু, আসল কথায় ফিরে আসি.....
সুমন বলেছিল, মেয়ে হবে। শাপলা বলেছিল, ছেলে হবে। সুমন অনাগত মেয়ের নাম রেখেছিল জেরিন। শাপলা ছেলের নাম রেখেছিল আকাশ।
আগত চিঠি খুলতেই প্রশ্ন 'তোমার আকাশ কেমন আছে? কত বড় হলো?' সুমন চিঠিতে জানতে চেয়েছে। এরপর আর কিসের সন্দেহ! আকাশ বা জেরিন কথা ওরা দু'জন ছাড়া আর কারও জানার কথা না। শাপলা চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, আকাশ না। জেরিন । তোমার কথাই ঠিক হয়েছে। শাপলার চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ে।
জেরিন-'মা, তুমি কাঁদছ কেন?' জেরিনের দাদি বলল, তোর বাবা বেঁচে আছে। ''হ্যাঁ, তোর বাবা বেঁচে আছে।'
'জেরিন- আসবে না?'
দাদি- 'আসার কথা তো চিঠিতে লেখেনি।'
জেরিন- 'তুমি তাড়াতাড়ি আসতে বলো।'
শাপলা- 'কীভাবে লিখব? ঠিকানা তো দেয় নাই।'
জপরিন- 'তাহলে এমনি এমনি চলে আসবে। তুমি কেঁদো না।'
মা-মেয়ের আলাপ থামে শাশুড়ির কথায়-
'জেরিনের মা, কই তুমি? শুধু চিঠি নিয়া পইড়া থাকলে হবে? কাজকাম ছাইড়ে দিছ।'
এ কথায় শাপলা একটু ঝাঁকি খায়। বলে, না আম্মা। বলেন, কী করতে হবে।'
'বেলা হলো। গাই দোয়াও। দুধ দিয়ে জেরিন কে খাইতে দেও।'
'কাজে মন নাই।' শাপলা ভাবে, শাশুড়ি ঠিকই বলেছেন।
মন থাকবে কীভাবে? ও তো সব ভুলে যাচ্ছিল। একটা চিঠি ওকে ভাবনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভাবতে ভাবতে ওর সময় চলে যায়। সময়মতো নাওয়া হয় না, খাওয়া হয় না। চিঠিতে সুমনের হাসির কথা লিখেছে। সেটা পড়ে শাপলা খিলখিল করে হাসে। কিছুতেই হাসি থামাতে পারে না। সেটা দেখে শাশুড়ি বলেন, 'বউমা, এত হাসো ক্যান?'
বিয়ের আগের'গোপন কথা' যা সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে হয়, সেটা লিখেছে। তা কি শাশুড়িকে বলা যায়?
শাশুড়ি- 'তুমি সেদিন ভাইয়ের বাড়ি গেলা। কেন গেলা, কিছু তো বললা না।'
শাপলা- 'ভাইর কাছে আপনার ছেলের চিঠির কথা বলতে গেছিলাম।'
শাশুড়ি- 'শুনে কী বলল?'
শাপলা- 'চিঠিতে তো ঠিকানা দেয় নাই। ঠিকানা থাকলে তো খুঁজে দেখতে পারতাম, সেই কথা বলল।'
শাপলার ভাবি ময়না। শাপলার বয়সী। বন্ধুর মতো। সব শোনার পর বলে, সুমন ভাই কোথাও বিয়ে করে, সেখানে থেকে গেল না তো?
এ কথা শুনে শাপলা বলে, ও মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন করছে। মুক্তিযোদ্ধারা এ কাজ করতে পারে না?
ময়না কথাটা বলে বোকা বনে যায়। ননদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
গল্প টা যশোরের মণিরামপুরের বাস্তব সম্মত কাহিনী নিয়ে লেখা হচ্ছে বাকি অংশ চলমান............

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: