পানির ঘাটতি ও খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলাগুলোতে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৪৭

ছবি সমসাময়িক
    বিশেষ প্রতিনিধি।। সাতক্ষীরা ও বরগুনার মতো বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলাগুলো মারাত্মক পানি সংকটে পড়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মতো মিঠা পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দিন দিন কমে আসছে টিউবওয়েলের পানিও। বুধবার (২১ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে পানি সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের কাছে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাধারণত বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় এমনকি শিলাবৃষ্টির আগমনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলা বর্ষ শুরু হয়। কিন্তু বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ চললেও, দেশের অধিকাংশ জায়গায় খুব কমই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখাই মেলেনি, যা এই বছরে অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, পানির ঘাটতি ও খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে এবং বিশেষত উপকূল অঞ্চলের জেলাগুলোর পানিতে লবণাক্ততার হার বেড়ে যাচ্ছে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে বেড়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, ইউরিন্যাল ইনফেকশন, চর্মরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনাঙ্গে চুলকানি ও ঘায়ের মতো রোগ। নারীদের মধ্যে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিচ্ছে, যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন : টিউমার ও জরায়ু ক্যান্সারে রূপান্তর হচ্ছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়ন- ভাড়াশিমলা ও মথুরেশপুর এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দিকে তাকালে দেখা যায়, কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার পুকুরের পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে। ফলে পুকুরের সাথে সংযুক্ত পন্ড স্যান্ড ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের বিভিন্ন পুকুরে দেখা দিয়েছে ব্যাঙাচির আধিক্য। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই অঞ্চলের দশটির বেশি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবারের মানুষ এই উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। এ ব্যাপারে নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা খাতুন বলেন, পানির আর কোনো উৎস না থাকায় তারা এই পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন। পানি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত নারীদের ওপর বর্তায়। যখন পানির অভাব দেখা দেয়, তখন এই দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন তারা। ফলে নারী ও মেয়েদের ভোগান্তি বাড়ছে, যা পানির ঘাটতি ও সংকটের ‘নারীবাদিতা’র দিকে ধাবিত করছে। অপরিষ্কার ও দূষিত পানির ব্যবহারের কারণে অনেক নারী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কম বৃষ্টিপাতের ফলে পুকুরের পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহাতাব হোসেন জানান, ইদানিং অনেক নারী ইউরিন্যাল ইনফেকশন, যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের (লিউকোরিয়া) মতো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। পানির ঘাটতি নারী, কিশোরী ও পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারণ আমরা জানি পানি জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে এবং করোনা মহামারির সময় এই সমস্যা দ্বিগুণ আকারে দেখা দিয়েছে। পানির সংকট এবং অভাবের কারণে গ্রামীণ সহিষ্ণুতা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরার এক নারী বলেন, পানির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অধিকন্তু করোনা মহামারির কারণে তাদের আয় কমে যাওয়ায় বাজার থেকে পানি কিনে আনার সক্ষমতা নেই। তাই তারা দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং এটা নারীদের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সমস্যার উদ্রেক করেছে। পানি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত নারীদের ওপর বর্তায় অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় একশনএইড বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে পানি সরবরাহ করছে। মাঝারি পর্যায়ে আমরা ভবিষ্যত জলবায়ুর গতিবিধি বিবেচনা করে পানি সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন টেকসই সমাধানগুলো খুঁজে পেতে স্থানীয় জনগণের সাথে কাজ করছি। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার এবং এই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার ও সকল উন্নয়ন সংস্থার একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্বনেতারা বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ভার্চুয়াল জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যারা তীব্র পানি সংকটে রয়েছেন, তাদের সাথে একমত পোষণ করে বলতে চাই, জলবায়ু রক্ষার পদক্ষেপ যেন কেবল গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটা ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নয়; এর জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পায়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: