সত্তরোর্ধ্ব স্কুল শিক্ষিকা উর্মিলার পাশে দাড়ালেন গাউছিয়ার মানবিক কমিটি

সেলিম চৌধুরী নিজস্ব সংবাদ দাতা।। | প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ০৯:২০

সেলিম চৌধুরী নিজস্ব সংবাদ দাতা।।
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ০৯:২০

ছবি- সমসাময়িক ফটো।

একসময়ের নামকরা স্কুলের শিক্ষিকা উর্মিলা ভট্টচার্য্য। শিক্ষকতা করতেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। থাকতেন ভাড়া বাসায়। সেখানেও কয়েকজন শির্ক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। মাসিক বেতনে দুই জন কর্মচারীও ছিল তার। ৮ বছর আগে ২০১৪ সালে অবসরে গেছেন তিনি। অবসরকালে পেয়েছেন পেনশনের এককালীন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। স্বামী-সন্তান কেউ না থাকায় পেনশনের সব টাকাই ভাই-বোনদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ঊর্মিলার আশা ছিল ভাই, বোন, ভাতিজারা তার শেষ সময়ে পাশে থাকবেন। তারপরও শিক্ষিকা উর্মিলা ভট্টচার্য্য দত এক মাস ধরে নিঃসঙ্গ ভাবে হাসপাতালের বেডে পরে রয়েছেন। একদিকে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা অপরদিকে নিঃসঙ্গতায় তার শারিরীক অবস্থা আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।
কিন্তু স্বজনরা কেউ দেখা না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পটিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
সত্তরোর্ধ্ব উর্মিলা ভট্টচার্য্য পেট ব্যাথার সমস্যা নিয়ে গত ২ জানুয়ারি ভর্তি হন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলে ১৫ জানুয়ারি তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল ছেড়ে যাননি তিনি।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা জেরিন প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ভর্তির পর থেকে রোগীর কোন স্বজন হাসপাতালে আসেননি। আমরা সরকারী সকল ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। ছাড়পত্র দেওয়ার পরও তিনি হাসপাতালের বেড ছাড়েননি। এদিকে তার অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। বেড ছেড়ে কোথাও নিজে যেতে পারছেন না। আমরা রোগীর আপন ভাই অমর কৃষ্ণ এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছি। তিনি ঢাকায় আছেন জানিয়ে বলেন ‘আমার কিছুই করার নেই’। এর পর আমরা গাউছিয়া কমিটিকে খবর দিই। বর্তমানে নার্সদের পাশাপাশি গাউসিয়া কমিটির সদস্যরাও ওই রোগীর সেবা যতœ করছেন।
হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স শাহিদা পারভীন জানান, এ রোগী কিছুদিন ধরে হাটা চলা করতে পারছেন না। বেডের মধ্যেই পায়খানা-প্রশ্রাব করছেন। যার কারনে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দুর্গন্ধে পাশের বেডের রোগীদেরও সমস্যা হচ্ছে।
পটিয়া উপজেলা গাউছিয়া কমিটি মানবিক টিমের সচিব মাওলানা মো. ইছাহাক ও সদস্য মো. মাসুদ রানা জানান, হাসপাতালের ডা. ফারহানা জেরিন গত ১৭ জানুয়ারি আমাদেরকে খবর দিলে ওই দিন থেকেই আমরা এসে ওই রোগীকে সেবা দিচ্ছি। তবে তিনি একজন মহিলা। তাছাড়া তিনি বেডের মধ্যেই পায়খানা-প্রশ্রাব করছেন। যার কারনে আমাদের সেবা দিতে নানামূখী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জীবনের শেষ সময়টুকুতে তার স্বজনদের কেউই পাশে নেই। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জানতে চাইলে অসুস্থ উর্মিলা ভট্টচার্য্য জানান, তিনি আগ্রাবাদ শিশু নিকেতনে শিক্ষকতা করতেন। অবসরকালীন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা এককালীন পেনশন পেয়েছেন। যা তার ভাই বোনদের দিয়েছেন। ওই টাকায় তারা পুকুর করেছেন জমি কিনেছেন। কিন্তু তিনি তা ভোগ করছেননা। কয়েকদিন আগে তার এক বোনের ছেলে হাসপাতালে এসেছেন। তাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে চলে গেছেন। ভাই-বোনেরা খবর নিচ্ছে না।
হাসপাতালের ভর্তি সংক্রান্ত নথিতে উর্মিলা ভট্টচার্য্যরে ঠিকানা জানা যায়, পটিয়া উপজেলার ছনহরা মটপাড়া এলাকার বিশে^শ^র ভট্টচার্য্যরে মেয়ে উর্মিলা। নথিতে উল্লেখ রোগীর বোন পুতুল ভট্টচার্য্যরে ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা ৯ বোন ২ ভাই। তার ছোট ভাই অমরকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য দেশের বাড়ীতে থাকেন। অন্য ভাই রবীন্দ্র ভট্টাচার্য্য পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে রয়েছেন। বোনেরা সবাই স্বামীর-সংসারে রয়েছে এর মধ্যে উর্মিলা বিয়ে করেননি। আমরা যার যার পরিবার নিয়ে নিজেরা ব্যাস্ত। কিছু দিন আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। এ নিয়ে আমি মানসিকভাবে খুব কষ্টে আছি। তবে আমার ভাই বলেছেন, উর্মিলার জন্য প্রয়োজনে একজন লোক নিয়োগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসা করানোর জন্য। তার বেতনসহ চিকিৎসার প্রয়োজনীয় টাকা তিনি দিবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ জানান, গত ২ জানুয়ারী থেকে ঊর্মিলা ভট্টাচার্য্যকে সরকারি ভাবে খাবার, ঔষুধ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের কেউ তার সাথে যোগাযোগ না করায় আমরা তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: