
তিস্তামুখ রেল ফুলছড়ি ফেরিঘাট বন্ধ হওয়ায় দেড় যুগ ধরে বোনারপাড়া জংশন থেকে ফুলছড়ি ঘাট অবস্থিত ফেরিঘাটের রেলপথটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তিস্তামুখ ঘাট, ভরতখালী রেলস্টেশন থেকে শুরু করে ফুলছড়ি থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত রেলপথটি বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে রেলের যন্ত্রাংশ, চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলপাত, অসংখ্য কাঠের সিøপার ও নান্টুবোল্টসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ।
এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রেল লাইন গুলোর উপর টয়লেট, চায়ের স্টল ও বসতবাড়ি স্থাপনা গড়ে উঠছে। বোনারপাড়া থেকে-ফুলছড়ি ঘাট রুটে মেরামত করে স্থানীয়ভাবে একটি ট্রেন চললে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হতো বলে দাবী এলাকাবাসীর।
রেল সূত্র জানায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগের জন্য গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদঘাট দিয়ে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে তিস্তামুখ ঘাটে রেলওয়ে মেরিন বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়। রেলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে থাকে যমুনা নদীর ওপর দিয়ে রেলযাত্রী ও পণ্যবাহী ওয়াগন পারাপার। তৎকালীন তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে মেরিন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
১৯৩৮ সাল থেকে নিয়মিত নদীপথে ফেরি চলাচল করলেও ১৯৯০ সালে যমুনা নদীর নাব্য সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একই উপজেলার কঞ্চিপাড়ার বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়। বালাসী ঘাট চালুর পরপরই নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এ রুট। তিস্তামুখ ফেরিঘাটও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থার চূড়ান্ত ইতি টানা হলে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বাসিন্দারা যমুনার পূর্বপাড়ের জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও শেরপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
তিস্তামুখ ঘাটের বাসিন্দা একজন যুবক শুভ সরকার বলেন, ফেরি ও ট্রেন বন্ধ হওয়ার কারণে এ এলাকার হাজারো কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়েছে। তাদের পরিবার খুব কষ্টে দিন কাটছে এবং রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া তিস্তামুখ ঘাটের রেললাইনের ওপর নদীভাঙন কবলিত শত শত মানুষ আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান রেলওয়ের লোহার পাত। কিন্তু সেদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
ফুলছড়ি এলাকার বাসিন্দা তপন বাবু বলেন , আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায়, এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে মাদকসেবী আর অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে স্টেশনটি। স্টেশনটি চালু হলে এ অঞ্চলের যাত্রীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং উপকৃত হবে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ফেরি সার্ভিস চালু হলে রেল ট্রেনের দরকার নেই। তবে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত একটি শার্টল ট্রেন চালুর নির্দেশ যদি রেল মন্ত্রণালয় থেকে আসে সেক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে লাইন গুলে মেরামত করে ট্রেন চালু করা সম্ভব।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: