মণিরামপুর রাজগঞ্জে ৬২ বছর ধরে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া জমি দখল নিল প্রভাবশালী চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২২ ১৭:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২২ ১৭:০২

ছবি সমসাময়িক
স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর)।। যশোরের মণিরামপুরে রাজগঞ্জ বাজারে বঙ্গমাতার নামে সমবায় মার্কেট নির্মানের অজুহাতে অন্যের জমি দখল করে দুইতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক আবদুল লতিফসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। জমি দখলের পর শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার দুপুরের মধ্যে দুইতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রশাসন এ ব্যাপারে রয়েছে সম্পূর্ন নির্বিকার। জানাযায়, মণিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের মৃত নূরুল হক বিশ্বাস ১৯৬০ সালে রাজগঞ্জ বাজারে ১৯৪ নং মোবরকপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ১২ শতক জমি সরকারের কাছ থেকে ৩০ বছর মেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়ে বাড়ি নির্মান করে নয় ছেলেসহ পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তিতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ এবং ২০২০ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত বন্দোবস্ত নবায়ন করেন ৬২ বছর ধরে দখলে আছেন তারা। ইতিমধ্যে নূরুল হকের মৃত্যুর পর সরকার ওই ১২ শতক জমি তার নয় ছেলে ও স্ত্রীর নামে রেকর্ড (নাম পত্তন) করে দিয়েছেন। ওই জমির উপর দুই তলা একটি ভবন রয়েছে। পাশেই রয়েছে ক্রয়কৃত আরো তিন শতক জমি। নুরুল হকের ছেলে আয়নাল হক, আজহারুল হক, আশরাফুল হক, আসাদুল হক জানান, দুইতলা ভবনের পাশের ওই জমিতে তারা সম্প্রতি পাকা আটটি দোকানঘর নির্মানকাজ শুরু করেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ, ঝাপা ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক সোহেল রানা, শিমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র গত ১৩ মার্চ রাতে ওই আটটি ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে নুরুল হকের ছেলে আসাদুল হক বাদি হয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ কোন প্রতিকার করেননি। ফলে ১৪ মার্চ আসাদুল হক যশোর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সরনাপন্ন হন। বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ জানান, বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাইমুজ্জামান,শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। কিন্তু বাদি আসাদুল হকের অভিযোগ পুলিশ এ ব্যাপারে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহন করেননি। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ, ঝাপা ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক সোহেল রানা, জালাল উদ্দিন, শিমুল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধীক ব্যক্তি শুক্রবার রাতে ওই জমি দখলের পর সেখানকার দুইতলা ভবনটি ভাঙ্গা শুরু করেন। জানাযায়, ভাংচুরের কাজ মধ্যরাতে বিরতি দিয়ে শনিবার সকাল থেকে ষ্কেভেটর মেশিন দিয়ে দুপুরের মধ্যেই দুইতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ জানান, জমিটি সরকারি হওয়ায় উন্নয়নের স্বার্থে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে এখানে একটি সমবায় মার্কেট নির্মানের জন্য দখল করে ভবনসহ স্থপান ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তবে জমি দখল ও স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ার কোন সরকারি আদেশ আছে কিনা এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি আবদুল লতিফ। যুবলীগের আহবায়ক সোহেল রানা জানান,এলাকবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে সরকারি এ জমির দখল নেওয়া হয়েছে। তবে চালুয়াহাটি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) শফিউর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান জানান, নিয়ম মেনে ভূমি মন্ত্রণালয় চলতি বছরে নুরুল হকের নয় ছেলে ও স্ত্রীর নামে অকৃষি খাস ১২ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছেন। ফলে নতুন খতিয়ানে(২৬২১) তাদের নামে নাম পত্তন(রেকর্ড) করা হয়েছে। জমি দখল ও ভবন ভাংচুরের ঘটনা জানতে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) নূর ই আলম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে একাধীকবার রিং করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ওসি(তদন্ত) গাজী মাহাবুবুর রহমান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করতে রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ(পরিদর্শক) বানী ইসরাইলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বানি ইসরাইল এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জেলার মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করে ডিবি পুলিশের ওসির মোবাইল নম্বর দেন। কিন্তু ওই নম্বরে একাধীকবার রিং করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: