মোঃ শাহ্ জালাল।।
আমাদের দেশের রাজনীতি সম্পর্কে মানুষ কোন মন্তব্য টি সবচেয়ে বেশি করে? যা বর্তমান সমাজে প্রচলিত একটি রেওয়াজ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ'দের কাছে। এখন যদি এই রাজনীতিবিদ'দের উদ্দেশ্য আপনাকে কোন মন্তব্য করতে বলা হয়, তাহলে আপনি কোন মন্তব্যটি বেছে নেবেন? নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রে মনে হয় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মন্তব্য হবে আপনার ‘রাজনীতিবিদেরা মিথ্যা কথা বলে থাকেন’। আর
এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে বলে মনে হয় না। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে দাঁড়িয়ে মিথ্যা না বলার পরিণতিই–বা কী হতে পারে? রাজনীতির ময়দানে যেহেতু লড়াইটা বহুমুখী, তাই সব পক্ষে সত্য বলে টিকে থাকা মুসকিল নেতাদের পক্ষে।
আমরা যারা সাধারণ জনগণ তারা মনে করি রাজনীতি করতে হলে মিথ্যা বলতে হয়। এবং এটাও জানি রাজনীতিতে মিথ্যা বলা শুধু আমাদের দেশীয় ব্যাপার নয়, বরং এটা সারা দুনিয়ায় একই রকম। সে জন্য সৎ থাকতে চাওয়া আবার একই সঙ্গে রাজনীতিও করার বেলায় নৈতিক দোলাচলের একটা প্রশ্ন চলে আসে। এখানে মূল সমস্যা হলো নিজে সৎ আছি’ এটা একটা গর্ব নিয়ে থাকা। কিন্তু একইভাবে সৎথেকে রাজনীতি আজকাল অসম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো আপনি নিষ্কলঙ্ক থাকতে চান সে ক্ষেত্রে ১০০{42d7c02d75ed8ad2566d5e0848d1e673e35e1703bc782a9c186d8d8d27235b37} নিষ্কলঙ্ক থাকার একমাত্র পথ হলো রাজনীতির পথে নিজেকে না বাড়ানো। তার মানে রাজনীতিতে আসতে হলে সত্যের সঙ্গে ‘কিছুটা আপস’ করেই আসতে হবে। কিন্তু এর মানে কি এই যে রাজনীতি করলে নগ্নভাবে মিথ্যা বলতে হবে?
দেশের জনগণ যেমন কখনোই আশা করে না রাজনীতিবিদেরা একদম পীর-সন্ন্যাসীদের মতো সত্যবাদী হবেন। তেমন আশা করেনা নির্লজ্জের মতো মিথ্যা কথা বলা। আমেরিকার প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যে জনতা ভোট দিয়েছে, তারা নিজেরাও ট্রাম্পের সব কথা বিশ্বাস করেনি। এদিকে দেশের জনগণ সত্য কথা বললে সৎপথে চললে সে নেতা কেউ ভোট দেয়না। সুতারং নেতারা তাদের ইচ্ছা খুশি মতো লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে জনগণকে উদ্ভুত করে ভোট আদায় করে থাকে।
সামনে আমাদের পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন । তাই রাজনীতিতে এখন বক্তব্য–পাল্টা বক্তব্য চলছে। কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে, তা জনগণ ঠিকই বুঝতে পারছে। কিন্তু মিথ্যা যারা বলতে চায়, তারা বলছেই। কারণ সত্য-মিথ্যার ধার ধারে কি হবে? তারা চেয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ, সত্য-মিথ্যার মিশেলে জোরালো আক্রমণ তৈরী হবে। বিরোধী দলে থাকা রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন-নিষ্পেষণের কথা বলছেন। এখানে কোনো মিথ্যা নেই। কিন্তু যদি বলি, এ দেশে ক্ষমতাসীন মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, সেটাও তো মিথ্যা নয়। আজ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ওপর যেসব জেল–জুলুম ও অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, তা আজকের ক্ষমতাসীনদের ওপরও একসময় করা হয়েছে। পার্থক্য হলো এখন পাল্লা উল্টে গেছে। আগে ছিল দাঁড়িপাল্লা এখন হয়েছে ডিজিটাল পাল্লা তবে চোরও ডিজিটাল হয়ে গেছে। রাজনীতিতে অন্যায়-অনাচার কে বেশি করল, সেই বিতর্কই জনতা নামক রাজনীতির সম্প্রদায়ের আলোচনার প্রধানতম খোরাক।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কোনো রাজনৈতিক পক্ষই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের কথা বলে না। এমনকি নির্যাতিত কোনো বিরোধী দলও রাজনৈতিক এই নোংরা সংস্কৃতির পরিবর্তনের কথা বলে না। নেতা-নেত্রীর মুক্তি দিতে হবে বলে তারা স্লোগান দেয়, দাবি তোলে। কিন্তু এই যে দুরবস্থা, তা বদলের কথা কারও মুখে শোনা যায় না। কারণ, তারা প্রত্যেকেই ক্ষমতায় গেলে বিরোধী শক্তি দমন করায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে যাদের ফেনা ওঠে, তারাই আবার ক্ষমতায় গেলে সেই তিমিরেই ফিরে যায়।
এখন আসল কথায় আসি তাহলে যে রাজনৈতিক দল বা তার নেতারা সত্য বলে, তারা টিকে থাকবে কীভাবে? সমস্যা হলো একজন মিথ্যা বললে অন্যজনও মিথ্যা বলাকে জায়েজ মনে করে। তখন সেও দু-চারটা মিথ্যা সেঁটে দেয়। মিথ্যা যদি কোনোভাবে প্রমাণিতও হয়, তবু স্বীকার না করে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় যে বিরোধী পক্ষও একই রকম মিথ্যা বলেছিল। সমাধান হিসেবে কেউ যদি মিথ্যাকে পাল্টা মিথ্যা দিয়ে আক্রমণ করার কথা ভাবে, তাহলে তো যে লাউ সেই কদুই হবে!
সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হওয়ার কথা ছিলো সত্য দিয়ে মিথ্যার পাল্টা জবাব দেওয়া। অন্যরা মিথ্যা বললে সেটাকে নিজের সুযোগ হিসেবে নিয়ে সত্য দিয়ে মিথ্যাকে খোলাসা করে দেখাতে হবে। এটাও ঠিক যে ভুয়া সংবাদপত্র ও ভুয়া খবরের যুগে জনগণ সচেতন থেকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু জনগণের বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন না করাও বোকামি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করাও কঠিন কাজ নয়। সাময়িকভাবে হয়তো মানুষকে বোকা বানানো যায়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা কোনো কাজে আসে না, বরং ক্ষতির কারণ হয়। আপনি রাজনীতি করেন আর মিথ্যা বলবেননা তাতো হয় না! তবে একজন নেতাকে দেশ ও জাতীর কথা বিবেচনা করেই, মিথ্যা বলার লাভের চেয়ে সত্য প্রকাশ করে বিরোধী দলে থেকেই বেশি সম্মানিত হওয়া যায়।
লেখক,
সম্পাদক (দৈনিক সমসাময়িক) ও কলামিস্ট।
                                    
        
                                                                                                                
                                            
                                                                        
                                    
                                    
                                
                                    
                                    
                            
                                
                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: