মণিরামপুর ভূমি অফিসে ঘুষসহ ৪ হাজার টাকা দিয়েও ঘুরতে হয় ছয় মাস এক বছর তবুও হয় না নামজারি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০০

ছবি সমসাময়িক

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি।।

যশোরের মণিরামপুর ভূমি অফিসের নামজারি মামলা মানেই ঘুষের হাট-বাজার। ঘুসসহ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় দিয়েও মেলেনা সময়মতো নামজারি মামলা সমাধান। চার বছর আগে ভিটা বাড়ির নামজারির আবেদন করেছেন মনিরামপুরের রঘুনাথপুর গ্রামের আবুল কালাম। খেদাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে তিনি আবেদনটি করেছিলেন। আবেদনের সময় ফি এবং ঘুষ বাবদ ৪ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তখনকার নায়েব। কাজ হয়নি তাতে। দেড় বছর আগে আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমান আবার যোগাযোগ করেন খেদাপাড়া নায়েব অফিসে। সে সময় অফিসের পিয়ন আব্দুল হাকিম আরও ৯০০ টাকা নেন। কাজ না হওয়ায় ফের বর্তমান নায়েব আব্দুস সাত্তারের কাছে যান মিজানুর। তিনিও খরচের টাকা চান। আব্দুল হাকিমের কাছে খরচের টাকা দেওয়ার কথা জানতে পেরে মিজানুরকে এক সপ্তাহ পরে দেখা করতে বলেন নায়েব। এর পর দেড় বছর পার হয়েছে। নামজারির কাগজ হাতে পায়নি আবুল কালামের পরিবার। একই অফিসে বছরখানেক আগে দুটি জমির নামজারির আবেদন করেন রঘুনাথপুর গ্রামের দেবাশীষ বিশ্বাস। অফিসের পিয়ন আব্দুল হাকিম তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন ৫ হাজার টাকা। দেড় বছর আগে মাহমুদকাটি গ্রামের নূর ইসলাম একটি নামজারির আবেদন করেন খেদাপাড়া ভূমি অফিসে। পিয়ন আব্দুল হাকিম তাঁর কাছ থেকেও ৫ হাজার ২০০ টাকা নিয়েছেন। আজও কাগজপত্র হাতে পাননি নূর ইসলাম। শুধু এই তিনজন নয়, নামজারির আবেদন করে ভোগান্তিতে আছেন মনিরামপুরের কয়েক হাজার মানুষ। সরকারি ফির বাইরে নায়েব হাজার হাজার টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিলেও তাঁদের আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কাজ না হওয়ার ভয়ে তাঁরা নায়েবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও পারছেন না। উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, মনিরামপুরে নিষ্পত্তি না হওয়া নামজারির আবেদন সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার। কিন্তু অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এই সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াবে। নামজারির সরকারি খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও নায়েব অফিস আবেদনকারীদের নানা খরচ দেখিয়ে আবেদনপ্রতি অতিরিক্ত দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। নামজারির ব্যাপারে খোঁজ নিতে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ নিজ ইউনিয়নের নায়েব অফিসে যান। নায়েব তাঁদের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে না পাঠিয়ে পিয়নের মাধ্যমে বাড়তি টাকা নিয়ে কাজটি করার দায়িত্ব নেন। যদিও নামজারির আবেদন সরাসরি উপজেলা ভূমি অফিসে করার বিধান রয়েছে। রঘুনাথপুর গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুই কিস্তিতে নায়েবকে ৪ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েও কাজ হয়নি। বর্তমান নায়েব রিপোর্ট পাঠানোর কথা বলে এক সপ্তাহ সময় চাইছে। আজ দেড় বছর পার হয়ে গেছে। এখনো নায়েব রিপোর্ট পাঠায়নি।’ দেবাশীষ দাস বলেন, ‘দুই আবেদনে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে আব্দুল হাকিম। চার মাস আগে একটা নোটিশ পাইছি। আর কোনো খবর নেই।’ তিনি বলেন, ‘কাজ করার জন্য খেদাপাড়া নায়েব অফিস চুক্তি করে টাকা নিয়েছে। এ জন্য এসিল্যান্ড অফিসে খবর নিইনি।’ মাহমুদকাটি গ্রামের নূর ইসলাম বলেন, ‘নামপত্তনের জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা আর খাজনার জন্য ৭০০ টাকা নিছে আব্দুল হাকিম। শুনিছি, কাজ হয়ে গেছে। এখনো কাগজ হাতে পাইনি।’ খেদাপাড়া নায়েব অফিসের পিয়ন আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নিইনি। এসব বিষয়ে নায়েব জানেন।’ খেদাপাড়া ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বারবার এসিল্যান্ড বদলির কারণে আমার অফিসের নামপত্তনের কোনো আবেদন খারিজ হয়নি। নতুন স্যার এসে আমার কোনো আবেদন এখনো খারিজ করেননি।’ অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ব্যাপারে নায়েব আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি আর কি বলব। আপনি এক সময় অফিসে আসেন। আর না হয় আমি আপনার বাসায় এসে কথা বলবানে।’ এদিকে করোনায় লকডাউন এবং বারবার এসিল্যান্ডের বদলির কারণে মনিরামপুর ভূমি অফিসে নামজারির জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। করোনার প্রথম দিকে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরানোর ঘটনায় মনিরামপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে। কয়েক মাস পরে এখানে যোগ দেন সহকারী কমিশনার খোরশেদ আলম। ৩-৪ মাস থাকার পর তাঁর বদলি হয়। এর পর আসেন পলাশ দেবনাথ। ৩-৪ মাস থেকে তিনিও বদলি হন। সর্বশেষ গত মাসে যোগ দেন হরেকৃষ্ণ অধিকারী। মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী গত সপ্তাহে বলেন, এক হাজার ৪০০ এর মতো নামজারির আবেদন জমা আছে। আমি সিরিয়ালের প্রথম থেকে ধরেছি। এপর্যন্ত ১০০ আবেদন খারিজ করেছি। নামজারির আবেদনে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ব্যাপারে হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিয়েন। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: