
মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
মণিরামপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে নির্যাতন, যৌতুক ও একাধীক নারী কেলেংকারীর অভিযোগ এনেছেন অন্ত:সত্ত¡া স্ত্রী রেহানা পারভীন সুপ্তা। অভিযোগ রয়েছে সমিতির এক নারী স্টাফের সাথে রাতে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় জনতার হাতে আটক হয় পরিচালক বাদল। অবশ্য এ সময় বাদল দাবি করেন তিনি ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন। তথাকথিত দ্বিতীয় বিয়ে করার খবর জানাজানি হলে বাদলের অন্ত:সত্ত¡া প্রথম স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক, নির্যাতন এবং লাম্পট্যের অভিযোগ এনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানাযায়, উপজেলার খাঁনপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেক দফাদারের জৈষ্ঠ্য পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান বাদল এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের ফোদাইপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক ও ছিলামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হামিদা খাতুনের একমাত্র কন্যা অনার্স পাশ রেহানা পারভীন সুপ্তার সাথে মোস্তাফিজুর রহমান বাদলের সাথে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সুপ্তাকে বিয়ে করেন। সুপ্তার অভিযোগ বিয়ের ৩মাস যেতে না যেতেই বাদল তার (সুপ্তার) পিতা-মাতার কাছে যৌতুক বাবদ মোটা অংকের টাকা দাবী করে। পিতা-মাতা মেয়ের সুখের আশায় সাধ্যমত বিভিন্ন সময়ে বাদলকে টাকা দিয়েছেন। সুপ্তার অভিযোগ বাদল বিয়ের পর পরই বিভিন্ন মহিলাদের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে বাদল প্রায়ই সুপ্তার সাথে ঝগড়া এবং তাকে মারপিট করত। ইতোমধ্যে স্বামীর ধুমপানে বাঁধা দেওয়ায় সুপ্তাকে মারপিট করায় তার বাম কানটি অকেজো হয়ে যায়। সুপ্তার দাবি সামান্য কারণেই বাদল প্রায়ই তাকে মারপিট করে। কিন্তু সংসারের স্বার্থে তিনি সব নির্যাতন সহ্য করে আসছিলেন। আনিকা নামে আট বছর বয়সী একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে তাদের। ওই সন্তানের কথা ভেবে সুপ্তা বাদলের সাথে সংসার করে আসছিল। সুপ্তার মা হামিদা খাতুন জানান, মেয়ের সংসারে একটু সুখের আশায় বাড়ি নির্মাণ করার সময়ে তারা বাদলকে সাধ্যমত সহযোগীতা করেন। এছাড়াও তারা ২লাখ টাকা দেন ব্যবসা করার জন্য। পরে বাদল সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করেন ‘উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতি লিমিেিটড’-নামে একটি ঋনদান প্রতিষ্ঠানের।
মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ওই সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই থেকে মনিরামপুর পৌরশহরের মোহনপুর বটতলায় অফিস ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন। অফিসে স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেন নেহালপুর এলাকার এক নারীকে। সুপ্তার অভিযোগ ওই নারীর স্টাফের সাথে বাদল পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে ওই নারীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে বাহিরঘরিয়া গ্রামের এক মাছ বিক্রেতার ডিভোর্সী এক নারীকে সমিতির হিসাব রক্ষক পদে নিয়োগ দেন। অভিযোগ রয়েছে বাদল ওই নারীর সাথেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। সুপ্তার অভিযোগ বাদল সমতা নামে অপর একটি এনজিওর রেজিষ্ট্রেশনের জন্য তার পিতা-মাতার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা না দিলে বাদল সুপ্তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার হুমকি দেন। সুপ্তার পিতা এবং মা জানান, বাধ্য হয়ে ৩মাস আগে তারা বাদলকে সাত লাখ টাকা দিয়েছেন।
গত ২৯ জুন রাত ১১ টার দিকে বাহিরঘরিয়া গ্রামে ওই নারী ষ্টাফের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় এলাকাবাসীর হাতে বাদল আটক হয়। এ সময় বাদল ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন দাবি করে এলাকাবাসীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সলিম উদ্দিন জানান, বাদল এবং ওই নারী জানিয়েছে তারা ইতিমধ্যে গোপনে বিয়ে করেছেন। এ দিকে বাদলের প্রথম স্ত্রী সুপ্তা বর্তমান পাঁচ মাসের অন্ত:সত্তা।
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানার পর সুপ্তা মেয়েকে নিয়ে পিতার বাড়িতে চলে যান। সুপ্তা এবং তার পিতা-মাতার অভিযোগ বাদল লম্পট, যৌতুক লোভী এবং নির্যাতনকারী। ফলে তারা বাদলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ দিকে বাদল ওই নারী স্টাফকে বিয়ের কথা স্বীকার করে জানান, প্রথম স্ত্রীর পিতার কাছ থেকে ধার নেওয়া সাত লাখ টাকা ইতোমধ্যেই তিনি ফেরত দিয়েছেন। বাদলের অভিযোগ শ্বশুর-শাশুড়ি তার সাথে কখনও ভাল আচরণ করেননি। ফলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। বাদলের বড় মামা একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাসুদুর রহমান জানান, বাদল দ্বিতীয় বিয়ে করে কাজটি ভাল করেনি। এটা কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায়না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: