
বিশেষ প্রতিনিধি।।
যশোর মণিরামপুরে আলোচিত ট্রাকভর্তি সরকারি ৫৫৫ বস্তা ত্রানের চাল চুরির ঘটনার প্রধান আসামী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গত ১ অক্টোবর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে যশোর ডিবি পুলিশ। বৃহষ্পতিবার(১অক্টোবর) জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) অফিসার ইনচার্জ ও তদন্তকারী অফিসার সোমেন দাশ আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
প্রতিবেদনে ৫৪৯ বস্তা চাল পাচারের ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘটনার স্থান, বাদী, স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ, সোর্সের তথ্য ও আটকদের স্বীকারুক্তি মোতবেক প্রয়োজনীয় বিষয়াদি তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। অভিযুক্তরা হলো- (ক) এজাহারভূক্ত আসামী (১) মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের মৃত: লুৎফর রহমানের পুত্র মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) এবং (২) ট্রাক ড্রাইভার খুলনা জেলার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা গ্রামের সাহেবপাড়া এলাকার রতন হালদারের পুত্র ফরিদ হালদার (৩৫)। (খ) তদন্তপ্রাপ্ত আসামী (৩) মণিরামপুর পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের মৃত সোলাইমান মোড়লের পুত্র শহিদুল ইসলাম, (৪) জুড়ানপুর গ্রামের রবিন দাসের পুত্র জগদীস দাস (৪২), (৫) জুড়ানপুর গ্রামের একুব্বার মোড়লের পুত্র উপজেলা যুবলীগনেতা মোঃ কুদ্দুস (৩৮) এবং (৬) হাকোবা গ্রামের মণিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু।
আসামী আব্দুলাহ, ড্রাইভার ফরিদ, শহিদুল, জগদীস ও কুদ্দুস গং অসৎ পন্থা অবলম্বন করে ত্রানের সরকারী চাল ক্রয়-বিক্রয়ে সার্বিক সহায়তা করা এবং আসামী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুকে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট এর ২৫(১)/২৫(২)-ডি ধারায় অপরাধ প্রাথমিক ভাবে প্রতীয়মান হয়, আদালতে এমনি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। উল্লেখ্য মণিরামপুর থানা পুলিশ গত ৪ এপ্রিল বিকেলে পৌর এলাকার বিজয়রামপুরে ভাই ভাই রাইস মিল এন্ড চাতালে অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে সরকারী ৫৫৫ বস্তা চাল জব্দ করে। এ সময় চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ট্রাক চালক ফরিদ হাওলাদার হাতেনাতে আটক হয়।
সেখানে আটক চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ উপস্থিতিদের সামনে চাল পাচারের ঘটনায় সরকারী কর্মকর্তাসহ চাল বেচাকেনা সিন্ডিকেটের সদস্য কুদ্দুস, শহিদুল ইসলাম, জগদীশ দাস, সহ জড়িত অনেক কুশিলবদের নাম প্রকাশ করেন। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম তার পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু চাল পাচারের ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ মিডিয়ায় তোলেন। অথচ পুলিশ বাদি হয়ে শুধুমাত্র চাতাল মালিক মামুন ও ট্রাকচালক ফরিদের নামে মামলা করে। পুলিশ ৫ এপ্রিল মামুন ও ফরিদকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে ৭ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বসুর আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক মামুন ও ফরিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন মণিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন, চাল পাচারের সাথে আরো জড়িত ছিলেন সিন্ডিকেট নেতা কুদ্দুস, শহিদুল ইসলাম, জগদিশ দাসসহ আরো দুইজন সরকারি কর্মকর্তা। এরপর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ২১ এপ্রিল যশোর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে সরকারি চাল আটক হবার পর পরই সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মনিরুজ্জামান মুন্নাকে খুলনায় বদলি করা হয়। মামুনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চাল পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ মে রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম পৌরশহর থেকে সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলামকে আটক করে। পরে শহিদুল ইসলাম ও জগদীশ দাস আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, সরকারি চাল পাচারের ঘটনায় তার সাথে জড়িত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও পাতন-জুড়ানপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা আব্দুর কুদ্দুস।
প্রথম আটক চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তি মোতবেক জড়িত সিন্ডিকেটের প্রধান আদায়কারী জগদীশকে গত ২৮ শে জুন শনিবার বেলা ১২ টার দিকে মণিরামপুর থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। আটক জগদীশ দাস আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, ওই চাল বিক্রির সাথে উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও যুবলীগ নেতা আব্দুর কুদ্দুস জড়িত। তিনি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেই। এরও আগে আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। মামুনের মতো জগদীশও আদালতকে জানিয়েছে-আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে তিনি সরকারি ৫৫৯ বস্তা (১৬ টন) ৪লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপর ৪ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ট্রাক চালক ফরিদের ট্রাকের মাধ্যমে চাল ডেলিভারি দেয়া হয়। এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ৩০ মার্চ চাল বিক্রির টাকা মামুনের কাছ থেকে নিয়ে নেন।
চাল বিক্রির স্থান শাহিদুল ইসলাম নামে এক ভাই দেখিয়ে দিয়েছিল বলে তিনি আদালতে জানিয়েছিলেন। এরপরই চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় সিন্ডিকেটের সদস্য যুবলীগ নেতা আব্দুর কুদ্দসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। ৫জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলেও অজ্ঞাতমকারণে মামলার প্রধান আসামী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুকে আটক করতে ব্যর্থ হয় আইনশৃংখলা বাহিনী। জনমনে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। আর সেই সন্দেহ, ও আলোচনার প্রায় দুই মাস পর প্রধান আসামী উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় জনমনে সন্দেহের দানা ভাঙ্গতে শুরু করেছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: