ইয়াবার টাকার জন্য রূপালী আক্তার নীপা‘গৃহকর্মী থেকে ছিনতাইকারী’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ১৫:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ১৫:১৪

ছবি সমসাময়িক
  বিশেষ প্রতিনিধি।। রূপালী আক্তার নীপা (২০) পেশায় গৃহকর্মী। এলাকার পূর্বপরিচিত যুবকদের সঙ্গে মিশে একবছর আগে থেকে ইয়াবা সেবন শুরু করে। ইয়াবার টাকা জোগাতে জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ে। যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত, সেই বাসা থেকে নানা অজুহাতে বেরিয়ে ছিনতাই এবং ইয়াবা সেবন করে আবার ফিরে যেতেন। একপর্যায়ে এমন বেপরোয়া হয়ে গেছেন, গত দুইদিনে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে দু’জনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করেন। শেষ পর্যন্ত কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন নীপা, সঙ্গে আরও দু’জন। গ্রেফতারের পর নীপা ইয়াবার টাকা জোগাতে গৃহকর্মী থেকে ছিনতাইকারী দলে নাম লেখানোর এই তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন। ছিনতাই করা দু’টি মোবাইল সেট চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডে বিক্রি করতে এসে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাতে গ্রেফতার হয় নীপা ও তার এক সহযোগী যুবক। ছিনতাই করা মোবাইলের ক্রেতাকেও এসময় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা। নীপার সঙ্গে গ্রেফতার দু’জন হলেন- রাকিবুল হাসান রাকিব (২৫) ও মো.আলাউদ্দিন (৫০)। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গত সোমবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যালয়ের সামনে অরবিন্দু দত্ত (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করে নীপা ও রাকিব। এর আগে নগরীর জামালখান এলাকায় একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর চকবাজার এলাকায় একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে। এরপর রাত ৮টার দিকে চকবাজার থানার সার্সন রোডের মুখে রাজু আহাম্মদ নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করে। ওসি মহসীন বলেন, ‘অরবিন্দু দত্তকে ছুরিকাঘাতের দৃশ্য সিসি ক্যামেরা থেকে আমরা সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, রাকিব ছুরি মারছে, নীপা তাকে ধরে রেখেছে। তাদের সন্ধানে নেমে আমরা খবর পাই যে, স্টেশন রোডে সোমবার রাতে দুইবার এক ছেলে ও এক মেয়ে গিয়ে দু’টি মোবাইল সেট একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে আমরা মোবাইলের ক্রেতা আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করি। পরে নীপা ও রাকিবকে ধরার জন্য কৌশল অবলম্বন করি। মঙ্গলবার রাতে তারা আবারও মোবাইল বিক্রির জন্য গেলে তাদের আটক করি। এরপর তারা জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরিচয় জানায় এবং সবকিছু স্বীকার করে।’ গ্রেফতার নীপা সাংবাদিকদের জানান, ভাসমানভাবে বেড়ে ওঠা নীপা দীর্ঘদিন নগরীর বগার বিল এলাকায় থাকতেন। রাকিবও একই এলাকার। তারা পূর্বপরিচিত। নীপা আরেক ছিনতাইকারী শাহআলমকে একবছর আগে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর থেকে শাহআলম জেলেই আছেন। আর নীপা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন নগরীর দিদার মার্কেট এলাকার ফারুক টাওয়ারে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের এক বিচারকের বোনের বাসায়। অরবিন্দু দত্তকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নীপা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মার্কেটে যাবার কথা বলে নীপা বাসা থেকে বের হয়। ফোনে যোগযোগ করে রাকিব ও রাশেদ নামে দু’জনের সঙ্গে। তারা দেওয়ানবাজারে আসার পর তিনজন মিলে ৩০০ টাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা একঘন্টার জন্য ভাড়া করে। প্রথমে জামালখানে একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে স্টেশন রোডে গিয়ে ২৬০০ টাকায় সেটি বিক্রি করে। এরপর আরেকটি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে আন্দরকিল্লা দিয়ে এসে রহমতগঞ্জ কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে থেকে অরবিন্দু দত্তকে অনুসরণ করা শুরু করে। অরবিন্দু ঢালু সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে ওঠার সময় রাকিব ও নীপা নেমে তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে মোবাইল দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু অরবন্দিু রাকিবকে জাপটে ধরে ফেলার পর তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে আবারও অটোরিকশা করে স্টেশন রোডে চলে যায় তারা। ঘটনার সময় রাশেদ অটোরিকশা চালকের পাশে বসে তাকে নজরদারিতে রেখেছিল। গ্রেফতার রাকিবের বিষয়ে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাকিবও মাদকাসক্ত। দিনে তার অন্তত ৬টি ইয়াবা লাগে বলে আমাদের জানিয়েছে। ইয়াবার টাকা জোগাতে গত একবছর ধরে সে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে। একবছর আগে সকালে প্যারেড কর্ণারে প্রাতঃভ্রমণে যাওয়া এক লোকের মোবাইল চুরির পর তার গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। এরপর সে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। রাকিব ও নীপা এতটাই আসক্ত যে, গত দুইদিনে আশপাশের এলাকায় চারটি ছিনতাই ও দুটি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটায়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য না হলে কোনো ছিনতাইকারী একই এলাকায় একাধিক ছিনতাই করে না। অরবিন্দু দত্তকে এমনভাবে বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, আরেকটু হলে ফুসফুসে আঘাত লেগে তার মৃত্যু হত। রাজুকে এলোপাতাড়িভাবে সাতটি ছুরিকাঘাত করেছে রাকিব।’ রাকিব-নীপার সহযোগী রাশেদকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন নোবেল চাকমা। গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেওয়া কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাকিব ও নীপা প্রেমিক-প্রেমিকার বেশে থাকে। রাশেদ অটোরিকশা চালকের পাশে বসে রাকিবের বন্ধুর মতো করে। এরপর নগরীর বিভিন্ন নির্জন এলাকায় বয়স্ক কিংবা কিশোর বয়সী কাউকে একা পেলে অটোরিকশা থামিয়ে মোবাইল ছিনতাই করে। কেউ যদি সহজে মোবাইল না দেয় তাহলে তাকে ছুরিকাঘাত করে। কখনও আবার মেয়েটিকে দিয়ে ধাক্কা লাগানোর মতো করে পথচারীর সঙ্গে ঝগড়া বাধায়। এরপর সুযোগ বুঝে মোবাইল ছিনতাই করে নেয়।’ ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার আরও ১০ এদিকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক দম্পতি, ৫ কিশোরসহ আরও ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেফতার ১০ জন হল- মো. রুবেল (২৮) ও তার স্ত্রী ফারজানা বেগম (২৬), মো. রাজু (২৩), আলামিন (২৮) ও আব্দুল নাইম (২০) এবং পাঁচজন বিভিন্ন বয়সী কিশোর। কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে রুবেল-ফারজানাসহ পাঁচজন এক গ্রুপের এবং কিশোর পাঁচজন আরেক গ্রুপের। রুবেল-ফারজানা এরা কখনো প্রেমিক-প্রেমিকার বেশে, কখনো বন্ধুর বেশে নগরীর বিভিন্ন নির্জন এলাকায় অবস্থান নেয়। সুযোগ বুঝে একাকী কাউকে পেলে ছুরি ধরে মোবাইল ছিনতাই করে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা ২৪টি মোবাইল সেট, দুটি ছোরা এবং তিনটি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে।’ ‘পাঁচ কিশোরও চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের আন্দরকিল্লায় গুরুধাম মন্দিরের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা ভাসমান হিসেবে নগরীর বগারবিল এলাকায় বসবাস করে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একাধিক মামলা আছে। এর আগেও কয়েকবার তারা গ্রেফতার হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে তারা আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে’-বলেন ওসি মহসীন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: