ছাতা হাতে মানবতার ফেরিওয়ালা- জেরিন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১ ০৭:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১ ০৭:৩০

ছবি সমসাময়িক

মোঃ শাহ্ জালাল।।

ছবিটি দেখলে হয়তো যে'কেও মনে করতে পারে ছাতা বিক্রেতা, কিন্তু না ছাতা হাতের এই মেয়েটা কোন ছাতা বিক্রেতা নয়। ছবিটির এই কিশোরী মেয়েটি অসাধারণ এক মানবিক মেয়ে। পুরো নাম সানজিদা জেরিন সায়ীদা। জেরিন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মাঝিয়ালী নামক এক সবুজ পল্লী গ্রামের সরকারি কর্মকর্তা (সহকারী ভূমি কর্মকর্তা) নজরুল ইসলামের মেয়ে। জেরিন বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রী। গত কয়েকদিনের কথা জেরিনের বাবা আমড়া বিক্রি করতে পাঠায় জেরিনকে মণিরামপুর বাজারে। চলছে ঈদের পর কঠোর লকডাউন, হচ্ছে প্রচন্ড বৃষ্টি। কঠোর এই লকডাউনে জীবন বাঁচাতে জীবিকার তাগিদে বের হয়েছে নিন্ম আয়ের মানুষ। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বিক্রি করছে ঝালমুড়ি, কেওবা করছে জুতা পালিশ, কেওবা চালাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজে ভ্যান, এদের কারও কাছে ছাতানেই। বরাবরের মতোই এবারো জেরিনের অসহায় এই মানুষগুলোর করুন অবস্থা দেখে মায়া হলো। কি আর করার, বাড়ি থেকে বাজারে আনা আমড়া বিক্রি করা টাকার সবটাই দিয়ে কিনলেন কিছু ছাতা, বাবার অনুমতি ছাড়াই। দিলেন সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অসহায়দের মাঝে। টানা বৃষ্টির মধ্যে বাজারে পৌরশহরে এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভিজে ভ্যান চালাচ্ছেন, একই বয়সের অপর আরেকজন ভিজে ভিজে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করছেন। প্রত্যেকে ছাতা দিলেন জেরিন। বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে জেরিন বলেন, সরকার ঘোষিত করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ঠেকাতে চলছে কঠোর লকডাউন। এর ভিতর গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি । পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হয়েছেন এই অসহায় মানুষ। সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় আর শরীর একাকার হয়ে কেউ কেউ শীতে কাঁপছে। দেখে আমি কেঁদে ফেলি। তাইতো বাবার অনুমতি ছাড়াই বাবার আমড়া বিক্রি করা টাকা দিয়ে কিনলাম ৫০টি ভালোমানের ছাতা। আগে দিলাম ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা ও ভ্যানচালককে। এরপর পুরো বর্ষায় অসহায়দের ছাতা কিনে দিয়েছি এবং আরো দেওয়ার ইচ্ছা আছে। প্রিয় পাঠক শুধু ছাতা দিয়ে জেরিন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা কিন্তু নয়। গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে জেরিন মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে ভ্যান ভাড়া করে অসহায়দের ঘরে নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক যে কোনো দুর্যোগে নিজের সাধ্যমতো অসহায়দের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ান জেরিন। স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার জেরিনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে জেরিনের সম্পর্কে।   জেরিনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন আমার মেয়ে শুধু যে এবার আমাকে না বলে আমড়া বিক্রির টাকায় ছাতা কিনেছে তা নয়। এর আগেও জেরিন আমাকে ও ওর মাকে না বলে ঘরের আলমারি থেকে টাকা নিয়ে অসহায় মানুষকে ঔষধ ও খাদ্য সামগ্রী কিনে দিয়েছে। এতে আমি ও জেরিন মা দু'জনেই খুবই খুশি। আমাদের মেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা করেছে। জেরিনের বাবা আরো বলেন নিজেরা ভালো থাকার মধ্যে সার্থকতা নেই। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার মজাই আলাদা, আমার মেয়ে সেটাই করছে। আপনার আমার মেয়ে জন্য দোয়া করবেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: