মুজিব আদর্শ বিকাশ এবং সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১ ১৬:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১ ১৬:৪৯

ছবি সমসাময়িক
বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনের মহানায়ক, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার নিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা সবাই জানি, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। বাঙালি জাতিকে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে। আর এসব করতে গিয়ে তিনি যা যা করেছেন, সেটাই হচ্ছে তাঁর আদর্শ। এ আদর্শের মূল কথা ত্যাগ আর সংগ্রাম। যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ, মোহ, পদ-পদবির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের বিশ্বাসে সর্বদা অটল থেকেছিলেন তিনি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের বদলে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, তিনি কখনও ক্ষমতার পেছনে দৌড়াননি। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। আর তাতে অবিচল থেকে তিনি সমসাময়িক আরও অনেক বড় রাজনীতিবিদদেরকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। জাতির জনক গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি বলেই তাঁর জীবদ্দশায় তাকে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। অথচ পাকিস্তানি শাসকদের লোভনীয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে তিনি অনায়াসেই বড় পদ নিয়ে আরাম,আয়েশে অবাধেই বিলাসী জীবন-যাপন করতে পারতেন। কিন্তু আজ এই ত্যাগ, মানুষের জন্য ভালোবাসা, বৈষম্যহীন সমাজের চিন্তা সুদূরপরাহত।
বর্তমান সময়ে সমাজ ও রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন নিয়ে খইয়ের মতো বুলি ফুটলেও প্রকৃত মুজিব আদর্শ চর্চার বেলায় সেটাতে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের দ্বারা বর্তমান প্রজন্মকে টার্গেট করে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের অপচেষ্টার দরুণ পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ইতিহাসের সঠিক তথ্য পৌঁছাবে কিনা, সেটা নিয়েও নানাবিধ শঙ্কা রয়েছে। আর এই অশনি দশা প্রতিহতকরণে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে তথা ছাত্র সমাজের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং প্রকৃত মুজিব আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়াটা অতীব জরুরি। সেলক্ষ্যে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি। প্রশ্ন থাকতে পারে, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম কি ? সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বলতে সাধারণত পুঁথিগত বিষয়ের বাইরের জ্ঞানার্জনকে বুঝায়। সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাধারণ পাঠ্যক্রমের অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক, সামাজিক জনহিতকর এবং সমবয়সী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এ শিক্ষা একঘেয়েমি ও অবসন্নতা দূর করে জ্ঞানার্জন ও সৃজনশীলতা বিকাশে পূর্ণ সহযোগিতা করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ উজ্জীবিত করে। অধিকন্তু প্রতিষ্ঠানের সহশিক্ষা মূলক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দেশ ও সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তরুণ ছেলেমেয়েরা বাস্তব জীবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনোভাব গড়ে ওঠে। সর্বোপরি বলা যেতে পারে, সহশিক্ষা মূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে শৃঙ্খলাবোধ জাগরিত হয়, সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অবসর সময়কে কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণে যশোর জেলার ছাত্রসমাজের মাঝে প্রকৃত মুজিব আদর্শ বিকাশ সাধনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে নানাবিধ সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালুকরণ এখন সময়ের দাবি। ছাত্রলীগের উদ্যোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা স্কুল- কলেজগুলোতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রিক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা, কবিতা লেখা প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতার মতো যুগান্তকারী কার্যক্রমগুলোর আয়োজন করা যেতে পারে। এসকল প্রতিযোগিতায় উপহার সামগ্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা "বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী", "কারাগারের রোজনামচা", "আমার দেখা নয়া চীন" এর মত বইগুলো বিতরণ করলে, মুজিব আদর্শ বিকাশে সহায়ক হিসাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস রাখি। কিন্তু আমরা জানি, বর্তমানে বিদ্যমান বৈশ্বিক করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। সেহেতু ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত কার্যাবলীগুলোর মধ্যে অনেকাংশই আয়োজন করা সম্ভব।
এব্যাপারে যশোর জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ভেবে দেখবেন বলে প্রত্যাশা রাখি। তবুও এটা স্বীকার্য সত্য, ভার্চুয়াল মাধ্যম থেকে ফিজিক্যালি উক্ত কার্যাবলীগুলো মুজিব আদর্শ বিকাশে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। আর তাই করোনা উত্তরণ পরবর্তী সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রমগুলো যশোর জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে যশোরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালুকরণের জন্য যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। পরিশেষে এটাই বলব, তারুণ্যের চিন্তাধারার ঐক্যের মাধ্যমে এবং মেধাভিত্তিক, সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল ইতিবাচক কাজ গুলোর মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন ঘটুক। সর্বদা চারিদিক স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হোক জয় বাংলার ধ্বনিতে। আর মুজিব আদর্শ ছড়িয়ে পড়ুক সারাবাংলায় সর্বত্র, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতরে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক,
মোঃ রিয়াজ উদ্দীন রেজা।
কর্মী, যশোর জেলা ছাত্রলীগ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: