মণিরামপুরে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছোট্ট হাতে ভ্যানের হাতল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২১ ১৭:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২১ ১৭:১৮

ছবি সমসাময়িক
  মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধ।। যেই বয়সে বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা, সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা, সেই বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে বাধ্য হয়েছে আবু নাইম। অসুস্থ বাবার দায়িত্ব পালন করতে দশ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে সে। বাবা-মা, ছোট ভাই-বোনের মুখে আহার যোগাতে ধরেছে ভ্যানের হাতল। নাইম উপজেলার বেগমপুর গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে। সম্প্রতি বাবা-মায়ের সাথে মাচনা ভূমিহীন পল্লিতে সরকারি ঘরে উঠেছে সে। ছোট্ট দুই ভাই ও এক বোনের সাথে সেখানে থাকে নাইম। চার ভাই-বোনের মধ্যে নাইম মেজ। তার বাবা আবু বক্কর ছিদ্দিক পেশায় ভ্যানচালক। শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধায় তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। মা ইয়াসমিন অন্যের বাসায় কাজ করতেন। লকডাউনে সেই কাজও বন্ধ। বড়ভাই শামিমও ভাড়ার (১৪) ভ্যান চালাতো। কয়েকদিন ধরে বসা সে। দুই মাস ধরে ইনজিনভ্যান চালায় নাইম। তাও আবার অন্যের। এজন্য দিনে ১০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয় তাকে। বুধবার (৩০ জুন) বিকেলে মণিরামপুর বাজারের মুরগিহাট মোড়ে যাত্রী ডাকতে দেখা যায় নাইমকে। সেই সময় কথা হয় তার সাথে। নাইম জানায়, সারাদিনে ১৩০ টাকা আয় হয়েছে। রাতে ভ্যান ফেরত দেওয়ার সময় মালিককে ১০০ টাকা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শুরু। এই সময়কালে কীভাবে চলবে- সেই উৎকণ্ঠা তার চোখে-মুখে। নাইম বলে, 'পড়ালেখা মাথায় ঢোকে না। কয়দিন মাদরাসায় গিছি। এখন যাইনে। আব্বুর অসুখ। কাজ করতি পারে না। মাও কাজে যাতি পারে না।' নাইমকে ভ্যান চালাতে দেখে হতবাক দুর্গাপুর গ্রামের মগরেব আলী। তিনি বলেন, 'ছোট্ট শিশুটিকে ভ্যান চালাতে দেখে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।' মাহমুদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'ওর আব্বা অসুস্থ। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিশুটি রাস্তায় নেমেছে।' খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইমের বাবা আবু বক্কর ভূমিহীন। সরকার তাকে মাচনা মৌজায় গুচ্ছগ্রামে জমিসহ পাকা ঘর দিয়েছেন। সেখানে স্ত্রী ও ছোট ছোট চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন আবু বক্করের। তাদের দুর্দশার চিত্র মনে দাগ কাটেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। সরকারের খাদ্যবান্ধব কোনো সহায়তা পায় না পরিবারটি। স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাজিরা বেগম বলেন, 'ওদের দশ টাকার চালের কার্ড বা ভিজিডি দেওয়া হয়নি। দুই ঈদে চাল দেওয়া হয়। সুপারিশ করে ঘর নিয়ে দিছি। সামনে সুযোগ এলে পরিবারটিকে চালের কার্ড করে দেওয়া হবে।'


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: