মোঃ শাহ্ জালাল।।
বিশ্বের সব হেলিকপ্টার আকাশ পথে চললেও তখন যশোরের মনিরামপুর হেলিকপ্টার চলতো সড়ক পথে। বেশি খরচের কারণে যারা তখন হেলিকপ্টার চড়তে পারেননি তারা মণিরামপুরের বাইসাাইকেল হেলিকপ্টার চড়তেন খুব অল্প খরচে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হেলিকপ্টার যানবাহন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এমনকি টেলিভিশনের প্রচারেও স্বীকৃতি পায়। এই যানবাহন বেআইনি নয় বলে কোনো বাঁধা ছাড়াই এই বাইসাইকেল হেলিকপ্টারকে যানবহন হিসেবে বেছে নিত সাধারণ মানুষ। মণিরামপুরের এলাকার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সাইকেল হেলিকপ্টার, সময়ের ব্যবধানে এখন আর চোখে মেলে না। কালের গর্ভে সেই বাইক আজ বিলুপ্তি হয়ে গেছে। মানুষ সাধারণত জানে হেলিকপ্টার আকাশে উড়ে কিন্তু বাস্তবে এই স্থলপথের হেলিকপ্টার এক ঐতিহ্যবাহী যানবাহন যার নাম সাইকেল হেলিকপ্টার। এক সময় মণিরামপুর উপজেলার বাজার গুলোর মোড়ে মোড়ে কয়েকশ হেলিকপ্টার ভাড়ায় চলত। এক স্থান থেকে অপর স্থানে যাওয়ার একমাত্র উপায় ছিলো এই বহনটি। দুরুত্ব যায় কোন না কেন দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার একমাএ সহজ ব্যবস্থা ছিল জনপ্রিয় পরিবহন সাইকেল হেলিকপ্টার। সাইকেলের পিছনে সামনে নরম গদি আর পিছনে কাঠের তক্তা ও লাগিয়ে ব্যবস্থা করা হত যাএীর জাইগা। অনেক সময় তিনজন যাএী নিয়েও হেলিকপ্টার চলত ধীর গতিতে। গ্রাম মহল্লার হাট বাজার থেকে শুরু করে উপজেলার সড়কপথে কাদা হোক আর পাকা হোক গরগর করে পায়ের ছাপ দিয়ে চালিয়ে আসতো গন্তব্য স্থানে। একসময় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মণিরামপুরের এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন হিসেবে সাধারণত মানুষ ব্যবহার করে আসতো হেলিকপ্টার। আশির দশকে অত্যন্ত জনপ্রিয় যানবাহন হলো সাইকেল হেলিকপ্টার সার্ভিস। সংসারের রুটি-রুজির জোগাড়ের একমাত্র উপায় ছিল। হাটবাজার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে তখন হেলিকপ্টার চালকরা আনাগোনা করতো যাএীর আসায়। শতশত পরিবারের সংসার চলতো হেলিকপ্টার চালিয়ে। বিগত কয়েক দশকে এলাকার উন্নয়নের ছোঁয়ায় রাস্তাঘাটের উন্নতির সাথে যোগ হলো দুরুত্বগামী যানবাহন বাস, মটরসাইকেল, টেম্পু ইঞ্জিন চালিত গাড়ি, ভ্যানগাড়িসহ বিভিন্ন প্রকৃতির যানবাহন আগমনে হারিয়ে যেতে বসলো সাধের হেলিকপ্টার চালকরা বেকার হয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়ে নতুন কর্মস্হল ঠিক করে জীবন যাপনের পথ পাড়ি দিত অনেক কষ্টে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মণিরামপুরের এলাকার হেলিকপ্টার চালক অনেকেই মারা গেছে আবার অনেকেই বেঁচে আছেন। কথা হয় হেলিকপ্টার চালকদের সাথে তাঁরা বলেন, তখনকার কথা কি কবো বাপু সারাদিন হেলিকপ্টার চালিয়ে পরিজন নিয়ে আনন্দে দিন পার করে আইছি আমরা। কিন্তু আর এখন চা পান বিক্রি করে কোন রকম দিন পথ চলি। এখন ইঞ্জিন ভ্যান চালিয়ে আয়ের পথ বেছে নিয়েছে অনেকে। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী সাইকেল হেলিকপ্টার মণিরামপুর থেকে।
                                
                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: