
দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক।।
হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সন্ধ্যা নামতেই হারিকেন আলো ছড়াতো গ্রামের ঘরে ঘরে। সন্ধ্যার নামার আগে ভাগে গ্রামের মেয়েরা হারিকেনের গ্লাস (চিমনি) পরিস্কারে ব্যস্ত হয়ে উঠতেন। চিমনি পরিস্কার ও তেল ভরে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া ছিল গ্রামের মেয়েদের সান্ধ্যকালীন প্রধান কাজ। কিন্তু এখন সেই কাজটি আর তাদের আর করতে হয় না। হারিকেন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের কোথায়ও এখন হারিকেন দেখা যায় না। বলতে গেলে হারিকেন ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছে। শহরে যে হারিকেনের ব্যবহার ছিল না, তা বলা যাবে না। রাতে বিদ্যুত চলে গেলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন। বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয় হারিকেনের অর্থ কী? ১৫-২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে পারলেও, নিশ্চুপ হয়ে যান ১০-১২ বছর বয়সের শিশু কিশোররা। তারা জানেন না হারিকেন কী। মা-বাবার কাছ থেকে যারা হারিকেনের কথা শুনেছেন, তারা বলতে পারেন হারিকেন কী? হারিকেন ঠিকঠাক রাখার জন্যে মায়েদের নজর থাকত সতর্ক। চিমনি ভেঙ্গে গেলে বা তেল শেষ হয়ে গেলে বাড়ির কর্তার নজরে আনা হতো বিষয়টি। হারিকেনের জ্বালানি আনার জন্য প্রতি বাড়িতেই থাকত রশিতে ঝুলানো এক ধরনের বিশেষ কাঁচের বোতল। হাটবারে সেই রশিতে ঝুলানো বোতল হাতে নিয়ে গেরস্থ রওনা হতো হাটে। প্রাচীন বাংলার এই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। কালের বির্বতনে কুপি বাতি ও হারিকেন এখন যেন রূপকথার গল্প। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় এই নির্দশনটি এক দশক আগেও রাতের আধারে রাস্তা পারাপার থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে অপরিহার্য্য ছিল। তখন গ্রামে গঞ্জে হারিকেন মেরামত করা মিস্ত্রীদের হাক শোনা যেত । তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হারিকেন মেরামত করতেন। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে । যার দরুণ গ্রাম বাংলার প্রতি গৃহের অতি প্রয়েজনীয় হারিকেন আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। হারিকেন ছিল বাহারি ডিজাইনের। এর মধ্যে মাটি, লোহা, কাঁচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপিও ছিল। নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী লোকজন কুপি ও হারিকেন কিনে সেগুলো ব্যবহার করতেন। গ্রাম বাংলার আপামর লোকের কাছে কুপি ও হারিকেনের কদর হারিয়ে গেলেও এখনও অনেকে আকড়ে ধরে আছেন কুপি ও হারিকেনের স্মৃতি। একসময় হয়তো কুপি বাতি ও হারিকেন দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে বলে ধারণা করছেন অনেকে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনটি টিকিয়ে রাখার দাবি অনেকের। নয়ত এক সময় চিরতরে বিলুপ্ত হবে এই সন্ধ্যা বাতি হারিকেন। হারিকেন কী? হারিকেন হচ্ছে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বদ্ধ কাচের পাত্রে আলো জ্বালাবার ব্যবস্থা। এর বাহিরের অংশে অর্ধবৃত্তাকার কাচের অংশ থাকে। যাকে বাঙালিরা চিমনি বলে থাকেন। এর ভিতরে থাকে তেল শুষে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে আলো জ্বালাবার জন্য কাপড়ের সলাকা থাকে। আর সম্পূর্ণ হারিকেন বহন করবার জন্য এর বহিরাংশে একটি লোহার ধরুনি থাকে। আলো কমানো বা বাড়ানোর জন্য নিম্ন বহিরাংশে থাকে একটি চাকতি। যা কমালে বাড়ালে শলাকা ওঠা নামার সাথে আলোও কমে ও বাড়ে। গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার সর্বাধিক ছিল। অনেক কাল আগে থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়। সম্ভবত মোঘল আমলের আগে থেকে বাংলায় শুরু হয় হারিকেনের ব্যবহার। তবে এখনো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে রিক্সার নিচে আলোর উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই হারিকেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: