
আনোয়ার হোসেন, নিউজ ডেস্ক॥
অস্ট্রেলিয়ান সবজি স্কোয়াশের চাষ হচ্ছে এখন যশোরের মণিরামপুরে। হাবিবুর
রহমান হাবিব নামে এক শিক্ষিত যুবক এবার প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই সবজির চাষ
শুরু করেছেন। ইউটিউবে ‘স্কোয়াশ’ সবজির চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। এরপর
ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের ৩৫ শতক জমিতে চাষ শুরু করেন।
ছোট অবস্থায় সালাদ এবং বড় হলে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায় অধিক পুষ্টিগুণ
সম্পন্ন স্কোয়াশ। গাছগুলো দেখতে মিষ্টি কুমড়া গাছেরমত হলেও লতানো নয়।
ফলগুলো দেখতে লম্বা বাঙ্গীর মত। পরিপক্ষ ফলের ওজন এক থেকে দুই কেজি
পর্যন্ত হয়।
হাবিব বলেন, গত জুনে প্রথম দুই বিঘা জমিতে ক্ষীরার চাষ করি। অনলাইনে
ক্ষীরার রোগদমন জানতে গিয়ে পরিচিত হই বিদেশী সবজি স্কোয়াশের সাথে। এরপর
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুহিন বিশ^াসের সাথে পরামর্শ করে
স্কোয়াশ চাষ শুরু করি।
‘যশোরের এক বীজ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করি। এরপর জমি
চাষ করে উঁচু চওড়া বেড তৈরি করি। বেডে সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে
কয়দিনপর কাগজ ফুটা করে বীজ রোপন করেছি। পলিথিন ঢাকা থাকায় বেডে ঘাস
জন্মাতে পারে না। সারের উত্তম ব্যবহার হয়।’
শীতকালীন সবজি হওয়ায় নভেম্বরের শুরুতে তিনিধাপে বীজ বপন করেছি। এই
পর্যন্ত ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি।
এখনো বিশ দিন মত সবজি তোলা যাবে, বলছিলেন হাবিব।
হাবিব উপজেলার কোদলাপাড়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক সামছুল হুদার ছেলে। ২০১৯
সাথে কামিল পাশ করেন তিনি। আলিম ক্লাসে পড়া অবস্থায় ব্যবসা শুরু করেন
হাবিব। স্থানীয় রোহিতা বাজারে তার মুদি দোকান ছিল। করোনার মধ্যে
পারিবারিক কলহে দোকান ছেড়ে দিয়ে চাষ কাজে নেমে পড়েন তিনি। হাবিবের ক্ষেতে
সবুজ,কালো ও হলুদ তিন রঙের স্কোয়াশ ফল ধরেছে।
হাবিব বলেন, বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও বাংলাদেশে নতুন সবজি হওয়ায়
বাজারে স্কোয়াশের চাহিদা কম। কয়েকদিন মণিরামপুর বাজারে নিয়ে আশানুরুপ দাম
মেলেনি। যখন সপ্তাহে দুইদিন ২০০-৩০০ কেজি করে স্কোয়াশ বাজারে তুললাম তখন
কয়েকজন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ন্যায্য দাম দিতে চাননি। এখন
রাজগঞ্জ-পুলেরহাট সড়কের পাশে বসে দিনে দুইমণ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি।
সবুজ ও কালো স্কোয়াশ ২৫ টাকা ও হলুদ স্কোয়াশ ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি
করছি। এলাকায় ক্রেতা তৈরি করছি। যারা একবার খেয়েছেন, তারা একাধিকবার
কিনছেন।’
সাগর নামে এক ক্রেতা বলেন, আগে স্কোয়াশ খাইনি। দেখে ভাল লাগলো বলে ৪০
টাকায় একটা কিনলাম।
মণিরামপুরে আরো দুই চাষি স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ওবাইদুল
হাসান। হাবিবের পাশে ১৪ শতক জমিতে স্কোয়াশ লাগিয়েছেন তিনি। বিদেশে থাকা
অবস্থায় স্কোয়াশ চাষের সাথে পরিচিত হন ওবায়দুল। এছাড়া জুড়ানপুর মাঠে
খলিলুর রহমান নামে এক চাষি দেড়বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন।
কয়েকদিন গরম পড়ায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে হাবিবের ক্ষেত। তিনি বলেন, মূলত
শীতকালীন সবজি স্কোয়াশ। গরম পড়লেই গাছে ভাইরাস লেগে যাচ্ছে। কয়েকদিনের
গরমে বেশ গাছ নষ্ট হয়েছে।
স্কোয়াশ চাষে সার্বিক জ্ঞান হয়েছে হাবিবের। আগামীতে তিনি আবারো এই চাষ
করবেন। নতুনদের এই চাষে আসতে গেলে অধিক ধারণা লাগবে বলে জানিয়েছেন হাবিব।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক সরকার বলেন, ‘স্কোয়াশ পুষ্টিমান
সম্পন্ন লাভজনক একটি শীতকালীন সবজি। আগামীতে আমরা অফিস থেকে বীজ দিয়ে
কৃষকদের এই চাষে উদ্বুদ্ধ করব।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: