
পি কে রায়, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।।
ইয়ানুর বয়স মাত্র ৮ বছর। ইয়ানুর গ্রামের অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক চলাফেরা ও খেলাধুলা করেছে। তার সেই প্রাণচঞ্চল্যতা হঠাৎ একটি ঝড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বছর খানেক আগে নিজের শরীরে থাকা নতুন জামার সামন্য সুতা বের হওয়ায় ম্যাচ দিয়ে সুতা পুড়তে গিয়ে অসাবধানতা বসতঃ আগুন লেগে পুড়ে যায় শরীরের সামনে পেট হইতে উপরের অংশ। অর্থের অভাবে প্রায় ১ বছর যাবত ইয়ানুরের চিকিৎসা করতে পারেনি তার অসহায় বাবা মা। সে স্থানীয় অমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। অমরপুর ইউনিয়নের অমরপুর গ্রামের মুহুরী পাড়ার মোসলেম উদ্দীনের মেয়ে গত বছর জামার সুতা পুড়তে গিয়ে শরীরে আগুন লেগে পুড়ে যায় শরীর। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়নে চিকিৎসা করাতে দেরি হওয়ায় ইনফেকশন হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে এবং এক সময় বাম পাশ অবশ হয়ে পড়ে। এদিকে তার বাবা মোসলেম উদ্দীনও গত পাঁচ বছর যাবত পায়ের ঘা নিয়ে ইনফেকশন হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। মা কোহিনূর বেগম সারাদিন মানুষের বাড়ীতে কাজ করে যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে ইয়ানুরদের পরিবারের। ইয়ানুরের শরীরের অবস্থা বেশী খারাপ হওয়ার জরুরী অপারেশন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। অপারেশন করতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। নুন আনতে পান্তা ফুরানো দিনানিপাত হত দরিদ্র পরিবারের এতো টাকা বহন করা সম্ভব নয়। মা কহিনুর বেগম বিভিন্ন জনের দারস্থ্য হয়ে খালি হাতে ফিরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দীকার স্বরনাপন্ন হন। সব কিছু জানার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্বাস দেন এবং ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের ১৭ তম ব্যাচ অ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইয়ানুরের চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার পর ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের ১৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ মারুফুল ইসলামের প্রচেষ্টায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ইয়ানুরের অপারেশন করে বুকের দুই দিকে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। ইয়ানূর বর্তমানে সুস্থ হয়ে নিজ বাড়ী অপরপুরে আসলে গত ১২ই ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দীকা সার্বিক খোজ খবর নিতে ইয়ানুরের বাড়িতে যান। ইয়ানূরের সুস্থতায় তার মা কহিনুর বেগম বলেন "ইউএনও স্যারের কাছে আমরা ঋনি উনি না হলে আমার সন্তানকে ফিরে পেতাম না, আমি সব সময় দোআ করতেছি আল্লাহ স্যারকে সুস্থ রাখুক ভালো রাখুক"। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দীকা বলেন "ইয়ানুরের শারীরিক অবস্থা দেখে ভীষন খারাপ লাগে এরপর আমাদের কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যারা চাকুরীসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা আশ্বাস দেন এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইয়ানূর আজকে সুস্থ্য। আমরা চাইলে নিজ নিজ স্থান থেকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত ইয়ানূর এর পাশে দাঁড়াতে পারি"।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: