মণিরামপুরে প্রভাবশালীদের দখলে বধ্যভূমি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৭

ছবি সমসাময়িক

মণিরামপুর (যশোর) ॥

মণিরামপুর উপজেলার কপালিয়া নদীর তীরে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিতে ২০ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১০ বছর আগে স্মৃতিস্তম্ভের ফলক উন্মোচন করা হলেও এখনও তা নির্মাণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বধ্যভূমির জমি দখলের পর সেখানে নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নামে অফিসসহ দোকান। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ওয়াজেদ আলী মোল্যা, জোনাব আলী মোল্যা, আনসার আলী মোল্যা, ফজলুর রহমান, গোলজার হোসেন, আব্দুস সামাদ, ঠাকুর দাস, মশিয়ার, শওকত, জয়নাল, আতিয়ারসহ মুক্তিকামী ২০ যুবককে ধরে নিয়ে কপালিয়ায় নদীর তীরে নৃশংসভাবে হত্যার পর গণকবর দেয়। ২০ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে সেখানে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যক্ষ আবদুল ওয়াহাব ফলক উন্মোচন করেন। সেই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বর্তমান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে বধ্যভূমিতে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়নি। আর এ সুযোগে বধ্যভূমির অধিকাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন এলাকার অধিকাংশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, দখলের পর স্মৃতিস্তম্ভের ফলকের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নামে অফিস, গাজী মোবাইল ফেয়ার, দিলিপ সাহা মুদি দোকানসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে কথা হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আফসার আলী মোল্যার সাথে। তিনি জানান, বধ্যভূমির জমির অধিকাংশ ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। ফলে তারা বধ্যভূমির এক শতক জমির ওপর ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিস। মুদি দোকানি দিলিপ সাহার দাবি তিনি স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য হাসিনা খাতুনের কাছ থেকে দোকানঘরটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। ইউপি সদস্য হাসিনা খাতুন জানান, তার স্বামী মারা যাবার আগে এ জমিটি নেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে তিনি দোকানটি মাসিক ৬শ’ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। অপরদিকে মোবাইল ফেয়ারের মালিক কবির হোসেন জানিয়েছেন, তিনি ২০০৭ সালে ইউপি চেয়ারম্যান আকতার ফারুক মিন্টুর কাছ থেকে জমির পজিশন কিনে দোকান নির্মাণ করেছেন। আকতার ফারুক মিন্টু জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে এসব খাস জমি বিভিন্ন সময়ে হাত বদল হয়ে আসছে। তবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের সভাপতি আফসার আলী মোল্যা জানান, বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলে অবশ্যই তারা জমি ছেড়ে দেবেন। একই কথা জানান ইউপি সদস্য হাসিনা খাতুনসহ অন্যরা। মনোহরপুরের শহীদ তিনভাই ওয়াজেদ আলী, জোনাব আলী ও আনসার আলী মোল্যার চাচাতো ভাই শামছুর রহমান আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। রক্ষা করা হয়নি বধ্যভূমির জমিও। মনোহরপুর-কপালিয়া শহীদ স্মৃতি রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বিএম মোস্তফা মহিতুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের জন্য এমপি-মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে ধর্না দিয়েও কোন লাভ হয়নি। বধ্যভূমির জমি দখল প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার(ভূমি) হরে কৃঞ্চ অধিকারী জানান,তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অতি শিগগির দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: