মণিরামপুরে কাদা-মাটি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে কৃষকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২০

ছবি সমসাময়িক

মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর(যশোর)সংবাদদাতা।।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা অধিক লাভের আশায় দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক কৃষিজাত পন্য সোনালী আঁশ খ্যাত পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কিন্তু পাটজাত পন্যের মান রক্ষা করার দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষি অফিস তথা পাট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও উদাসীনতা এবং কৃষকদের অসচেতনতার কারণে পাটের কাংখিত আবাদ ও উৎপাদন করার পরও পাটের গুণগত মান ঠিক রাখতে না পারায় কৃষকরা পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে একদিকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি সোনালী আঁশ পাটের কালার কালচে-তামাটে বর্ণ হয়ে যাওয়ায় এর তেমন কদর নেই! জানা যায়, সেই অতীতকাল থেকেই কৃষিজাত ফসল/পন্য উৎপাদনের দিক থেকে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা বেশ প্রসিদ্ধ। সেই সাথে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত সোনালী আঁশ পাট চাষ বরাবরই অত্র উপজেলার কৃষকেরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চাষ করে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা কম থাকলে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। সেই আলোকে বিগত কয়েক বছর ধরে বহু কৃষক পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু গত বছর পাটের বাজারদর বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশাতিত মূল্য পেয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মণিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করে উচ্চমূল্য পেয়ে বেশ লাভের মুখ দেখেছেন। সেই কারণে চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষকেরা পাট চাষ করেছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৭টি ইউনিয়নে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৮’শ২০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৫হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে। যা বিগত বছরের তুলনায় কয়েক’শ হেক্টর জমি বেশি হবে বলে সুত্র জানায়। উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, তিনি অধিক লাভের আশায় বোরো ধান কেটে প্রায় এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বার তিনি কোন জমিতে পাট চাষ করে নাই বলে জানান। ওই ইউনিয়নের শ্যামকূড় গ্রামের সফল পাটচাষি আব্দুল হামিদ এবং তার ভাই নজরুল ইসলাম বিগত বছরের মতো এবারও তাদের নিজস্ব ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গতবার ভাল দাম পেয়ে এবার আগে ভাগে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে তারা পাট করে ভাল ফলন পেয়েছেন। এছাড়া উপজেলার ভোজগাতি ইউনিয়নের টুনিয়াঘরা গ্রামের বজলুর রহমান,দোনার গ্রামের নাসিমা খাতুন ও ভোজগাতী গ্রামের কৃষক রাসেল উদ্দীন এবার নতুন করে অন্য ফসল আবাদ বাদ দিয়ে অধিক লাভের আশায় পাটের আবাদ করেছিলো। গত বছর কৃষকরা ২হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত মন দরে পাট বিক্রি করেছিলো। আর পাট ব্যবসায়ীরা পাট বিকিকিনি করে মন প্রতি ২ হাজার,৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ে ব্যবসা করেছেন বলে ব্যবসায়ীদেরে কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহী হওয়ায় এই খাতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট উন্নয়ন দপ্তর কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। পাট উন্নয়ন দপ্তরের উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আশীষ মন্ডল জানান, মণিরামপুর উপজেলার ১ হাজার ৮৮৫ জন কৃষক-কৃষানী কে পাট চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে উন্নত জাত তোষা পাট-৮(রবি-৫) এর জনপ্রতি এককেজি করে বীজ এবং ১২ কেজি করে তিন ধরনের রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। যে কারণে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার অধিক পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ করেছিলো বলে তিনি দাবি করেন। এ দিকে পাটের আবাদ ও উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়া সত্বেও মণিরামপুর উপজেলার অধিকাংশ পাট চাষী তাদের উৎপাদিত পাটের আঁশ প্রস্তুতিতে পাট পঁচানোর ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যায় পড়েছেন বলে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে। বহু কৃষক তার উৎপাদিত পাট জাগ দিতে উন্মুক্ত জলাশয় না পেয়ে হাজামজা ডোবা,নালা,পুকুর-নর্দমা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সব জায়গায় পাট জাগ দিতে কাদা-মাটির ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাদা-মাটি দিয়ে পাট জাগ দিলে পাটের কালার কালচে ও তামাটে হয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি পাটের আঁশ কাদায় পচে খন্ড খন্ড হয়ে যাচ্ছে। ফলে পাটের গুণগত মান একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি কৃষক পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলার হালসা গ্রামের কৃষক আহাদ আলী জানান, উন্মুক্ত জলাশয়ের অভাবে তার উৎপাদিত পাট পুকুরে জাগ দিয়েছেন। পুকুরে পাট জাগ দেওয়ায় মাছ চাষ ব্যহত হয়েছে। আর পাট ডোবাতে কাদা-মাটি ব্যবহারের কোন বিকল্প তিনি পাননি। অতি সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ পাট জাগ দিতে কাদা-মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের জনৈক কৃষক হাবিব জানান, কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা এই মৌসুমে কীভাবে পাট জাগ দিলে পাটের ভাল মান পাওয়া যাবে সেটা পরামর্শ দেননি। তাই কৃষকেরা কাদা-মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে পাট পঁচানোর জন্য জাগ দিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আবুল হাসান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ স্ব-স্ব এলাকার চাষীদের পাট চাষে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছেন তেমনি পাট জাগ দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কেও জানিয়েছেন। তথাপওি কৃষকেরা পাট জাগ দিতে কাদা-মাটি ব্যবহার করায় পাটের গুণগত মান ঠিক হবে না বলে তিনি জানান।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: