
তাজাম্মূল হুসাইন: স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হয়। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব।
ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি যশোর এম এম কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী। রান্না করা ছোট বেলা থেকেই অনেক শখের। লেখা-পড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন রকম আচার বানাতেন। নিজের বানানো আচার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের গিফট করতেন। সবাই খুব প্রশংসা করতো।
ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টির পড়াশোনা চলমান অবস্থায় নড়াইলের সৈয়দ করিমুজ্জামানের সাথে তিন বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী সবসময় উৎসাহ দিতো যে কাজ টা ভালো পারে সেটা নিয়েই কিছু করার। স্বামীর উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আর সাহসেই বকচর এলাকায় ২০২০ সালে শুরু করেন হোম মেইড খাবার ও আচারের কাজ। যাহার নাম দেওয়া হয় ‘বৃষ্টির রান্না ঘর’। আচার ক্রেতাদের হাতে পৌছে দেয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছুতেই স্বামী সাহায্য করেন। নিজস্ব আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন আস্থা। শৈশব থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিলো একদিন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পাবেন এবং নিজে, পরিবার ও সমাজ কে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন। এখন পর্যন্ত বৃষ্টির আচার যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে ক্রেতার হাতে পৌছে গেছে আচার। এছাড়া রসুনের আচার ১কেজি ৬০০ টাকা, তেতুলের আচার ১ কেজি ০০ টাকা, মরিচের আচার ১ কেজি ৫০০ টাকা, লেবুর আচার ১ কেজি ৫০০ টাকা, বেগুনের আচার ১ কেজি ৫০০ টাকা, চুইঝালের আচার ১ কেজি ১৬০০ টাকা, গরুর মাংসের আচার ১ কেজি ১৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছের আচার ১ কেজি ১৮০০ টাকা। খাটি সরিষার তেল ও মসলা ব্যবহার করে এবং স্বাস্থ্য সম্মত এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিজস্ব রেসিপিতে সম্পূর্ণ ঘরে প্রস্তুতকৃত একটি ভেজাল মুক্ত খাঁটি ও নিরাপদ রুচি সম্মত আচার। আচারের গুনগত মান এবং স্বাদের কারনে বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। সরকারি বেসরকারি নানা সহযোগিতা পেলে তিনি তাঁর এই শিল্প টা প্রসারিত করতে সহায়ক হবে। একসময় তাঁর আচার পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের সর্বত্র।
ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি নারী উদ্যোক্তার পাশাপাশি তিনি সমান তালে চালিয়ে যাবেন লেখাপড়া। তিনি দেশের গরীব-দু:খী মানুষের জন্য কিছু করতে চান। বৃষ্টির সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তাঁর স্বামী সৈয়দ করিমুজ্জামান। সব সময় তিনি তাঁর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তাঁর সহযোগিতায় আজ তিনি এই জায়গায় আসতে পেরেছেন। বৃষ্টি মনে করেন, এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তাঁর এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যেকোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।
নারী উদ্যোক্তা ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি বলেন, জীবনে অনেক পেয়েছি, এবার কিছু দিতে চাই, আমি সমাজের অবহেলিত মানুষ বিশেষ করে নারীরা যারা আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে অসহায় তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাই, আত্বর্নিভরশীল করে গড়ে তুলতে চাই।
উল্লেখ্য, ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি ২০২০ সালে জয়িতা পুরস্কারও পেয়েছেন। বৃষ্টির রান্না ঘরের এসব আচারের অর্ডার দিতে তার ব্যবসায়ীক মোবাইল ০১৯১৫-৬০১৪১৫ নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: