দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে পুড়ছে মণিরামপুরের গ্রামীণ জনপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৬:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৬:০৪

ছবি সমসাময়িক
  মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি।। গ্রীষ্মের সীমাহীন খরতাপে জমিন পুড়ে ছারখার! ভ্যাপসা অসহ্য গরম ও তাপদাহে সমস্ত প্রাণিকুলের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! রোজা রমজানের মাসে এই বৈরি আবহাওয়ায় রোজাদারদের রোজা রাখাটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, বিগত বর্ষা মৌসুমের পর থেকে বৃষ্টির কোন দেখা নেই! দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও খরার কবলে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সকল পথ-ঘাট, মাঠ-প্রান্তর, ফসলের তে, বৃ,তরু-রাজি তীব্র তাপদাহে পুড়ছে। দাবানলের ন্যায় মাঠ-ঘাট পুড়ে জমিন হয়ে গেছে অনেকটা তামাটে। প্রায় সকল জলাধার শুকিয়ে মরুজ ভূমিতে পরিনত হবার প্রায় উপক্রম। অধিকাংশই পুকুর-ডোবা,দিঘি,খাল-বিল, নদী-নালা,হাওড়-বাঁওড়ে পানি নেই! সেচযন্ত্র দ্বারা ভূ-গর্ভস্থ্য পানি উত্তোলন করে কৃষি কাজে সেচ দিয়ে কৃষকরা এখন ফসল ফলাচ্ছে। সমস্ত কৃষি সেক্টর এখন সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ েেত্র ভূ-গর্ভস্থ্য পানির স্তর সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ গভীর, অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় সেচ কাজও অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে। তাই চাষাবাদের েেত্র কৃষকরা পড়েছে মহাবিপাকে! এদিকে বহু সুপেয় পানির গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে এখন আর পানি উঠছে না। সুতরাং খাবার পানি ও জলের এবং গোসলের পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে পানি ও জলের তীব্র সংকটে জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অনেক এলাকায় একটু পানির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে কলসি ভরে পানি নিয়ে গৃহবধুরা দুরের পথ পাড়ি দিয়ে ঘরে ফিরছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির দরুণ পুকুর-ডোবা শুকিয়ে পুকুরের তলদেশ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষকে এখন গোসল ও রান্নার পানির জন্য স্যালো ও টিউবওয়েলের পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ্য পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল ও স্যালো মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় সেগুলো দিয়ে এখন আর পানি উঠছে না। বহু সেচযন্ত্রের মালিক পানির স্তরের খোঁজে সেচ পাইপের নতুন বোরিং করে কিংবা ৭/৮ ফুট মাটি খুঁড়ে সেখানে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি উত্তোলনের চেষ্টা করছে। এ েেত্রও অনেকে সুফল পাচ্ছে না বলে প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের রোহিতা, কাসিমনগর,খেদাপাড়া,ঝাঁপা, মশ্মিমনগর, চালুয়াহাটী ও শ্যামকূড় ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার অনেক পুকুর-ডোবা ও খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। বহু গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে জনজীবনে পানি ও জলের সীমাহীন সংকটে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের আহাদ আলী সরদার জানান, তাদের প্রায় ১৫ ফুট গভীরের সান বাঁধানো পুকুরটির পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে। পুকুরের তলদেশ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। এই পুকুরে সারা বছর পানি থাকায় গ্রামের বহু মানুষ গোসল ও রান্নার কাজে পুকুরটি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু চলতি বছর সীমাহীন খরা ও অনাবৃষ্টির দরুণ পুকুরে কোন পানি না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। তিনি আরও জানান, বাড়ির পাশেই বিলধারে কৃষিকাজে সেচের জন্য তার একটি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে। বহুবছর ধরে সুষ্ঠুভাবে এটি দিয়ে সেচকাজ করে আসছেন এবং খরার সময় গোসল ও পানি ও জলের সংকট এই সেচযন্ত্র দিয়েই নিরসন হয়ে থাকে। কিন্তু এবার পানির লেয়ার ফেল করার কারণে ৬/৭ ফুট মাটি খুঁড়ে সেচযন্ত্র বসানোর পরও ঠিকমত পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। পাশের গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের সেচযন্ত্রেরও একই হাল। তিনিও সেচ বোরিংয়ের কাছে মাটি খুঁড়ে অনেক নিচে সেচপাম্পটি বসিয়ে সেচকাজ চালাচ্ছেন। অনেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাওয়ায় বড় অংকের টাকা দিয়ে জলমোটর কিনে সেচকাজ চালাচ্ছেন। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক যে হারে নেমে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে শংকা ও আশংকা করছেন সচেতন মহল। এদিকে মণিরামপুরে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মণিরামপুর পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। কিছু টিউবওয়েলে স্বল্প পরিমাণে পানি উঠেলেও তা সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ভিড় লেগে থাকে। মণিরামপুর পৌর শহরের দূর্গাপুর, স্বরুপদাহ, জুড়ানপুর, গাংড়া, মহাদেবপুর, জয়নগর, হাকোবা, তাহেরপুর, মোহনপুর, বিজয়রামপুর ও কামালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। দু’একটি বাড়িতে ভ্যাটিক্যালযুক্ত টিউবওয়েল থাকলেও সেখানে পানি নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন জমাচ্ছেন গৃহবধূরা। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আদম আলী জানান, আমার ওয়ার্ডে কয়েকটি গ্রামে কিছু কিছু এলাকায় পানি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার রিপন কুমার ঘোষ জানান, মণিরামপুর উপজেলার গ্রামীণ জনপদে পুকুর-১০হাজার ৬’শ৪৩টি, খাল-১২টি,বিল-১৩টি,বাঁওড়-৭টি,নদী-৩টিসহ বহু মৎস্যঘের,হ্যাচারি,নার্সারী রয়েছে। উপজেলার মোট মাছের চাহিদার মধ্যে পুকুর থেকে মাছ উৎপাদন হয় ৮হাজার ৩’শ৮৭ মেঃটন। যা ব্যক্তি বা পরিবারের পুষ্টি চাহিদার ক্ষেত্রে সহায়তা করে আসছে। কিন্তু চলতি বছর অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে অধিকাংশ পুকুর ও খাল-বিলে পানি না থাকায় আমিষের চাহিদা পুরণে যেমন ব্যত্যয় ঘটেছে,পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের মানুষের পানিও জলের সংকট দেখা দেওয়ায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিনি আমিষের চাহিদা ভবিষ্যতে বজায় রাখার জন্য খাল-বিল ও নদীর এই মৌসুমের অবশিষ্টাংশ পানি সেচে মাছ না ধরার জন্য সকল জনসাধারনের প্রতি আহবান জানান।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: