
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের মণিরামপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে চাষিরা আনন্দে মাতোয়ারা। ন্যায্যমূল্য এবং অনুকূল আবহাওয়া থাকায় কৃষাণ-কৃষাণিরা ধান ঘরে তুলতে দাবদাহ গরমের মধ্যেও দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। চলতি রমজান মাসেও ধানের কাজে নেই তাদের ক্লান্তির গ্লানি। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ চাষিরা আগাম ধান ঘরে তুলতে পারলেও পূর্বাঞ্চলের চাষিরা রয়েছেন কিছুটা বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায়। সবমিলে মণিরামপুরের চাষিরা ধান কাটা, বাঁধা, বহন, ঝাড়াই-মাড়াই, উড়ানো এবং গোলায় উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করেছন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বৈশাখের আকাশে মেঘ গুড়গুড় দেখা দেওয়ায় ধান কাটার এক বেলার শ্রমবিক্রি পাঁচ’শ টাকা থেকে আট’শ টাকায় উঠেছে। আর বিকেলে বেলাতো আছেই। বোরো ধান নিয়ে চাষিদের যেন একাকার চলছে দিন-রাত। রমজানের এই তাপপ্রবাহ দিনে চাষিদের ধান নিয়ে নেই কোন ফুলসুরাত। সকলেই মাঠ থেকে ধান বাড়িতে আনতে মহাব্যস্ত এবং ধান ঝাড়ার ধুম পড়েছে বাড়িতে বাড়িতে।
উপজেলার গোপিকান্তপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক জয়নুল আবেদীন ৩৮ শতক জমিতে এ বছর বোরো ধানের চাষ করে তিনি ফলন পেয়েছেন ৩৬ মণ। পাতন গ্রামের চাষি আব্দুর রশিদ জানান তার এ বছর প্রতি শতকে একমণ বোরো ধান পেয়েছেন। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন বললেন এ গ্রামের সেচ মালিক আব্দুল বারিক মোড়ল। তিনি আরও জানালেন, চলতি বছর যে যতটুকু জমিতে বোরো ধান রোপন করেছে মহান সৃষ্টিকর্তা তার আশা পূরণ করেছেন। তবে ধান ভালো হলেও ঘরে তুলতে কষ্টের শেষ নেই। বৈশাখের তাপপ্রবাহ, তারপরও রমজানের রোযা। সবমিলিয়ে চাষিদের ধান ঘরে আনতে যেন নাকাল অবস্থা।
চাষি আবুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার আকাশে একটু মেঘ দেখা দেয়ায় ধান কাটার শ্রমিক যেন চাষিদের নাগালের বাইরে। শ্রমিকরা চাষিদের জিম্মি করার মতো বিপদে ফেলে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। যেখানে এক বেলার শ্রমবিক্রি হচ্ছিলো পাঁচ’শ টাকায়, সামান্য মেঘ দেখা দেওয়ায় এখন সে মুজরি হয়েছে এক বেলায় আট’শ টাকা। তারপরও চাষিরা হতাশ হননি। সুষ্ঠ পরিবেশে বোরো ধান বাড়িতে তুলতে পারছেন এতেই খুশি কৃষকরা।
মণিরামপুর বাজারে আড়ৎ ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বলেন, নতুন চিকনধান এখন কেনা হচ্ছে প্রতিমণ এক হাজার টাকার উপরে। আর মোটা জাতের ধানগুলো মণপ্রতি আট’শ থেকে নয়’শ টাকার মধ্যে। তবে ভরা মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চরম খুশি। তিনি আরও বলেন, এ বছর বোরো ধানে যথেষ্ট লাভের অংশ দেখবে কৃষকরা। ধানের ফলন ভালো হওয়া এবং বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা এখন আনন্দে উৎফুল্ল।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হাসান বলেন, মণিরামপুরে যেভাবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে তা মনে হয় চাষিরা অতীতে কখনও এমন ফলন দেখেনি। তিনি জানান, এ উপজেলায় চলতি বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে রোহিতা, কাশিমনগর, ভোজগাতী, খেদাপাড়া, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর, চালুয়াহাটী, শ্যামকুড় ও খানপুর ইউনিয়নে সর্বাধিক পরিমাণে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে।
খেদাপাড়া ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, তার ব্লকের আয়াত্তে প্রায় ৭০ ভাগ বোরো ধান চাষিরা ধান বাড়িতে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। গত ১/২ দিন আকাশে হালকা মেঘ দেখা দেওয়ায় দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা ধান ঘরে তুলতে। তবে আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশ থাকলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে চাষিরা তাদের সকল ধান বাড়িতে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান আরও বলেন, উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে আগাম চাষ হওয়ায় বেশিরভাগ বোরো ধান চাষিরা ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। তবে পূর্ব অঞ্চলে ভবদহ সমস্যার কারনে একটু দেরিতে ধান রোপন করেছেন চাষিরা। তাতে ফলন আশানুরুপ হলেও, ধান বাড়িতে তুলতে অনন্ত আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।
বিল কপালিয়া সেচ কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, এ বছর মণিরামপুরের পূর্ব অঞ্চলে বিল থেকে পানি নিষ্কাশন করেই তবে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। চাষিদের ধানের ফলন ভালো হলেও তা বাড়িতে তুলতে একটু সময় লাগবে। খাটুয়াডাংগা গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকের ধান বাড়িতে উঠাতে পারলেও আমাদের এলাকায় অধিকাংশ চাষিদের ধান ঘরে তুলতে বেশ সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে আবহাওয়ার কি পরিবেশ থাকে তা-নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। সবমিলেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় পেলে চাষিদের ধান ঘরে তুলতে কোন টেনশান পোহাতে হবেনা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: