টাকা দিয়েও না মেলার অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৫৭

ছবি সমসাময়িক
  বিশেষ প্রতিনিধি।। সূর্য তখন ঠিক মাথার ওপরে। জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে চকচকে টিনশেড সেমিপাকা ঘরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছিলেন কহিনুর বেগম। ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা ঘরগুলোর একটা দেওয়া হবে তাকেও। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৮ হাজার টাকা দিয়েও বরাদ্দ পাননি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। সোমবার (১২ এপ্রিল) যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার খড়বটতলা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য তৈরি নতুন ঘরের পাশে নিজের ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে এমন অভিযোগ করেন কহিনুর বেগম। তিনি ওই এলাকার আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৫নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুল হাকিম ঘর বরাদ্দের জন্য ১৮ হাজার টাকা নিয়েছিলো। কিন্তু টাকা নিয়েও আমার নামে ঘর বরাদ্দ দেয়নি।আমার মত হাকিম মেম্বার অনেকের কাছে টাকা নিয়েছে।’ উল্লেখ্য, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে এই ঘর উপহার দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে তাদের আশ্রয় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে বারান্দা, রান্নাঘর, শৌচাগারসহ দুই কক্ষের ঘর। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় এই মানবিক প্রকল্পের ঘর পেয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় প্রকল্প এলাকায়। যারা আশ্রয় পেয়েছেন তাদের অনেকের স্বপ্নেও ছিল না এমন পাকা বাড়িতে থাকার। তবে এই প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যের অভিযোগও পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অসাধুদের মাধ্যমে অর্থ নেয়া হয়েছে উপকারভোগীদের কাছ থেকে আবার অনেকেই টাকা দিয়েও পায়নি তাদের স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ৫নং শ্রীধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সুবাদে হাকিম মেম্বার ঘর বরাদ্দের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েও ঘর দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় আব্দুর রহমান মোল্লা নামে এক ভুক্তভোগী জানান,'ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন যাপন করি।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেয়ার কথা শুনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল হাকিম মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে আমাকে ঘর দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়েও ঘর বরাদ্দ দেয়নি। আরেক অসহায় ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম জানান, আমার নামে ঘর বরাদ্দের কথা বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার ভাগ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর জোটেনি। কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে, কেউ শেষ সম্বল একমাত্র ফসলের জমি বন্ধক রেখে, কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আবার কেউ ঋণ নিয়ে হাকিম মেম্বারকে টাকা দিয়েছে। তার কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করায় হাকিম মেম্বার ও তার ছেলে পারভেজ আমাদের হুমকি- ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমত অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বলেও অভিযোগ করেন এই অসহায় পরিবারটি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছে অভিযোগ করে আরেক ভুক্তভোগী জুলহাজ বিশ্বাস জানান, ‘আমার থেকেও ঘর দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছে হাকিম মেম্বার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাকিম মেম্বার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে কারো কাছ থেকে কোনও টাকা নেইনি।' উল্লেখ্য,মঙ্গলবার(১৩এপ্রিল)উপজেলার খড়বটলা গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক মৃধার ছেলে মুরাদ মৃধা,মৃত আমীর আলী সরদারের স্ত্রী লাইলা বেগম,হারুন মোল্লার স্ত্রী ছাকিলা বেগম, আব্দুল মালেক কাজীর ছেলে মিজানুর কাজী, মন্তাজ আলীর ছেলে রজিবুল ইসলাম মীর, আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের স্ত্রী কহিনুর বেগম, মৃত গহর বিশ্বাসের ছেলে জুলহাস বিশ্বাস, মৃত আকবর মোল্লার ছেলে আব্দুর রহমান মোল্লা, মৃত তকিম শেখের ছেলে তরিকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আমিনুর রহমান জানান, ‘ মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: