
রকারি হিসাবে প্রতিবছরই সাক্ষরতার হার বাড়ছে। এরপরও দেশের প্রায় সোয়া দুই কোটি মানুষ পুরোপুরি নিরক্ষর। যাদের বয়স ১৫ বছরের বেশি। বিরাট এই জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান দিয়ে কবে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। উল্টো করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর সাক্ষরজ্ঞান দেওয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাধারণত সাক্ষরজ্ঞান বলতে বোঝায়, যারা মাতৃভাষায় পড়তে ও লিখতে পারে। মনের ভাব লেখায় প্রকাশ করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজের হিসাব-নিকাশ করতে পারে।
সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ হলেও এখনো প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন নিরক্ষর। ফলে এই হার নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।
রাশেদা কে চৌধূরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রশ্ন
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীন মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ২৫০টি উপজেলায় ৪৫ লাখ মানুষকে সাক্ষরজ্ঞান দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। নির্বাচিত এনজিওর মাধ্যমে ইতিমধ্যে ১৩৪ উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার শিখনকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ২৩ লাখের বেশি মানুষকে সাক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, এই প্রকল্পের কাজ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কমিটি। ওই সভায় সাংসদ আলী আজম বলেন, ২০১৪ সালে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কাজ শুরু হয় কয়েক বছর পর। বাস্তবে প্রকল্পটি (প্রথম পর্ব) কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করেনি।
সাংসদ নজরুল ইসলামও প্রকল্পের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় তিনটি শিক্ষাকেন্দ্রে কোনো পুরুষ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়নি এবং নারী শিক্ষার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের বাধ্যবাধকতাও অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা নিজের নামের বানান লিখতে পারলেও খবরের কাগজ পড়ার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি।
প্রকল্পের কাজ নিয়ে যাতে আর কথা শুনতে না হয়, সে জন্য তদারকি বাড়ানো হয়েছে বলে গতকাল প্রথম আলোকে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, নিক্ষরতার দূরীকরণে নানা উদ্যোগ নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসনকেও এসব কাজে যুক্ত করা হয়েছে।
সাক্ষরতার এমন পরিস্থিতির পাশাপাশি করোনার কারণে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান গত এপ্রিল-মে মাসে শিক্ষাসংকটের ওপর একটি জরিপ করেছিল। তাতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ১১৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ১১টি শিক্ষক সংগঠন অংশ নেয়। জরিপের তথ্য বলছে, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বাড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক গবেষণা বলছে, করোনার পর সারা বিশ্বের প্রায় এক কোটি শিশু স্কুলে ফিরবে না।
সার্বিক বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ হলেও এখনো প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন নিরক্ষর। ফলে এই হার নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আর প্রকল্পের ভিত্তিতে নয় স্থায়ী ও টেকসই কর্মসূচির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজটি করতে হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: