যশোরের মুক্তেশ্বরী যেন কচুরিপানার ভাগাড়

মোঃ শাহ্ জালাল। | প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৬

মোঃ শাহ্ জালাল।
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৬

ছবি- দৈনিক সমসাময়িক নিউজ।

মোঃ শাহ্ জালাল।। এক সময়ের খরস্রোতা মুক্তেশ্বরী নদী যেন এখন কচুরিপানার ভাগাড়! নদীতে নেই কোন পানি প্রবাহ। কচুরিপানা আর আবর্জনায় ভরপুর নদীটি মৃতপ্রায়!

জানা যায়, মুক্তেশ্বরী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি অনেকটা সর্পিলাকার। যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর বাঁওড়ের পাশ দিয়ে সলুয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা হয়ে যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মণিরামপুর উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের বাদিয়াতলা বিলাঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার যশোর সদর উপজেলা পেরিয়ে মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া-হরিদাসকাটি-কুলটিয়া ইউনিয়ন হয়ে অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে টেকা-হরি নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির বেশ কিছু স্থান এখন পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। উজানের তুলনায় ভাটির দিক অধিক প্রশস্ত এবং ভাটিতে পানি প্রবাহের মাত্রাও উজানের তুলনায় বেশি। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। কিন্তু নদীতে অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজ ও স্লুুইচগেট নির্মাণ, মাছধরার জন্য অবৈধ পাটা দেওয়ায় জোয়ার-ভাটা বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় নদীতে জলপ্রবাহ থমকে গেছে। ফলে নদীতে ভেসে আসা আবর্জনা ও কচুরিপানা বছরের পর বছর জমে স্তুপকৃত হয়ে নদীতে এখন সামান্য তিল ধারণের ঠাঁই পর্যন্ত নেই!

নদীর অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে এটি যেন কচুরিপানার নদী। এক সময়ের মুক্তেশ্বরী নদীর এমন বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণের জন্য অচিরেই নদী থেকে কচুরিপানা অবসারনের জোরালো দাবী উঠেছে স্থানীয় জনগনের পক্ষ থেকে। সেই সাথে নদীটির স্বাভাবিক জলপ্রবাহ ও জোয়ার-ভাটা অব্যাহত রাখতে নদীতে যত্রতত্র মাছ ধরার অবৈধ পাটা অপসারণের দাবী উঠেছে।

অতিসম্প্রতি সরেজমিনে নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের খরস্রোতা মুক্তেশ্বরী নদীতে এখন কোন পানি প্রবাহ নেই। আবর্জনা আর কচুরিপানায় ভরপুর নদীটি মৃতপ্রায়। নদীর দুপাশে কোথাও কোথাও দখলে নদীর আয়তনও সংকুচিত হচ্ছে। আবর্জনা ও কচুরিপানা পচে নদীর পানিতে দুর্গগ্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর পানি খাবার ও গোসলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। পচা কচুরিপানার দুর্গন্ধে নদীর পাড়ে বসবাস করা দুষ্কর পড়ে পড়েছে। নদীর পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে। গত দুই/তিন যুগ ধরে এ নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কচুরিপানার জঞ্জালে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীটি। হুমকিতে পড়েছে জলজ জীববৈচিত্র। নদীর তীরবর্তি স্থানের মানুষের দাবি, দ্রুত নদীর আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হোক। তা না হলে নদীর পরিবেশের যে ভারসাম্য তা নষ্ট হয়ে যাবে। নদী বাচাঁতে হলে নদী সংরক্ষণ করতে হবে এবং নদীর প্রণোচ্ছলতা ফিরে আনতে হবে।

নদীর পাশের কুলটিয়া ইউনিয়নের লক্ষায়ড়াঙ্গা গ্রামের পরিতোষ মন্ডল বলেন, নদীর এ কচুরিপানার কারণে নদীর পানি পঁচে গন্ধ হয়ে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে যায়। এতে মশা মাছির সংখ্যা বাড়ছে। ঠিক তেমনি নদীর মাছ নষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে। একই গ্রামের পরিমাল কুমার মন্ডল বলেন এ কচুরিপানার ভরাট হওয়ার কারণে আমরা পানি বন্দী দ্রুত প্রশাসনের সাদায় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি নদী পরিষ্কারের জন্য। আসলে নদীর প্রাণ আগের মতো ফিরে আনতে হলে নদী সংরক্ষণ করতে হবে। সম্প্রতি যশোরের জেলা প্রশাসক মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে বলেন, মুক্তেশ্বরী নদী থেকে আবর্জনা ও কচুরিপানা অবসারনের জন্য অচিরেই একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন: