দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক।। যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চল থেকে পানি সরানোর দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চল থেকে পানি সরানোর দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।
‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানে যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলের দুই হাজারের বেশি নারী-পুরুষ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচি থেকে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে দ্রুত পানিনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে বিল কপালিয়াসহ বিলে বিলে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালুসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে ডিসি কার্যালয়ের সামনে হাজির হন হাজারো মানুষ। তাঁদের অনেকের কাঁধে ছিল লাঙল, মই ও নিড়ানি। হাতে ছিল ‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘সেচ প্রকল্পে সমাধান হবে না, টিআরএম চালু করো’, ‘ভবদহ অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে’, ‘ভবদহ গেট সংস্কার করে কপাট খুলে দাও, তুলে দাও’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড। তাঁরা দুপুর দুইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির (জাহিদ), কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, সদস্যসচিব চৈতন্য পাল, অনিল বিশ্বাস, কানু বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান, তারক বিশ্বাস, আবদুল লতিফ প্রমুখ বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দিপঙ্কর দাস, বাসদ নেতা হাচিনুর রহমান, সিপিবি নেতা আমিনুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভবদহ অঞ্চলের ১০টি উপজেলার ৪ শতাধিক গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন ১০ লক্ষাধিক মানুষ। সেচপাম্প দিয়ে ভবদহের পানি সরানো যাবে না। এ জন্য আমডাঙ্গা খালসহ সব খাল সংস্কার, নেটপাটা উচ্ছেদ ও পানিনিষ্কাশনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে। ভবদহ স্লুইসগেট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর মাঝে উঁচু স্থানগুলো দ্রুত ড্রেজিং করতে হবে। দ্রুত বিল কপালিয়াসহ বিলে বিলে জোয়ারাধার চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিচার করতে হবে।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইডব্লিউএমের (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) একটি দল ভবদহ অঞ্চলে যাবে। তারা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করবে। এরপর তিনি বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করবেন। তিনি বলেন, ‘এত দিন আমি আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এখন দায়িত্ব আমার ওপরে বর্তেছে। সমাধান যেন আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে হয়, অবশ্যই সে বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব, তা সুনিশ্চিত করা হবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে ডিসি না আসায় তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন উপস্থিত এলাকাবাসী। পরে বেলা দেড়টার দিকে সেখানে আসেন ডিসি মো. আজাহারুল ইসলাম। এরপর তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। ডিসি জলাবদ্ধ মানুষের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে এসেছিলেন মনিরামপুর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ চপলা মণ্ডল (৭২)। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে এখন হাঁটুজল। থাকার মতো পরিবেশ নেই। গোয়ালে জল। রান্নাঘরে জল। গরু–ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। বাড়িঘর থেকে জল সরানো ও বিলে ধান করার জন্য এখানে এসেছি।’ অভয়নগরের বেদভিটা গ্রামের কৃষক চিত্তরঞ্জন মল্লিক (৭৪) বলেন, ‘ঘরে জল। বিলে জল। খুবই কষ্টে আছি। বিলে ফসল হবে না। ঘর থেনে (থেকে) জল ফেলায়ে দিতি হবে। জল সরায়ে ধান চাষ করার ব্যবস্থা করতি হবে।’
এর আগে ভবদহ অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার দাবিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। স্মারকলিপিতে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছিল। এরপর ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা বৃষ্টিতে ভবদহের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। সেখানকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারানোয় এখন ঠিকমতো পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না।
                                
                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: