দৈনিক সমসাময়িক ডেস্ক।।
আমি তেমন ভালো ছাত্র ছিলাম না ২০০২সালে এসএসসি পাস করি তখন সার্টিফিকেটের বয়স ছিল ষোল বছর। কোন প্রকার এয়ার গ্যাপ ছাড়ায় সেশনজটের কারণে মাস্টার্স শেষ করতে লেগে যায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ তখন আমার সার্টিফিকেটের বয়স ২৭বছর। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে না নিতেই ২০০১থেকে ২০০৪ সালের আমরা যারা এসএসসি ব্যাচের আমাদের সকলের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে।আর আজকে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ করতে আন্দোলন করছে তাদের অধিকাংশ ২০০১থেকে ২০০৪ সালের ব্যাচের।
তাই ভাবলাম নিজের জন্য না হলেও আমার সেই সব মেধাবী বন্ধুদের জন্য কিছু লেখা দরকার।তবে আমার তেমন ভালো সার্টিফিকেট নাই পরিচয় দেওয়ার মতো,যেমন ধরুন এ প্লাস। এমনকি সরকারি চাকরিতে তেমন কোন মামা,চাচা বা ঘুষ দেওয়ার মতো বান্ডিল বান্ডিল টাকাও নেই। সার্টিফিকেট অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও পার করে এসেছি তিন বছর হবে।তাই সরকারি চাকরির আশা আমি করছিনা। কিন্তু আমি দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে কিছু কিছু বন্ধু আন্দোলন করে আসছে। যে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো গত নির্বাচনে ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বয়স বাড়ানোর জন্য আলোচনাও হয়েছে।
সংসদীয় কমিটি বয়স বৃদ্ধির সুপারিশও করেছে। কিন্তু বিভিন্ন ঠুনকো ও অযৌক্তিক কারণ দাঁড় করিয়ে সরকারি চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির দাবিকে উপেক্ষা করা হয়। এদিকে চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির দাবিতে কিছু বন্ধুরা নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে, সভা, মহাসমাবেশ,অবস্থান, জনসংযোগ, মানববন্ধন, সচেতনতা সৃষ্টি, অনশন ও স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি। এছাড়া পত্রিকায় লেখালেখি, টকশো, টিভি অনুষ্ঠানে বয়স বৃদ্ধির পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
এসব কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ৩৫ এর আন্দোলনকারীরা গত ৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅনশন শুরু করে একদল আশাহত যুবক-যুবতী । একই সঙ্গে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেছে আমরণ অনশন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড শীত ও শৈত্য প্রবাহ উপেক্ষা করে রাতদিন প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ।
এরমধ্যে অনেকে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি। যাদের মধ্যে কয়েকজন নারী অনশনকারীও রয়েছে।জানা গেছে হসপিটালের ভর্তি কয়েক জনের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে। বেশ কয়েকজনকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও বেকারদের বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে আজ কিছু বন্ধু চার দফা দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম দফা: সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীত করা।
দ্বিতীয় দফা: আবেদনে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা।
তৃতীয় দফা: নিয়োগ পরীক্ষা সমূহ জেলা বিভাগীয় পর্যায়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
চতুর্থ দফা: নিয়োগ পরীক্ষাগুলো তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন সহ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়ন করা।
আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থী ও বেকার তরুণদের এখন প্রাণের দাবি এই চার দফা। যদিও দাবিগুলো যুগোপযোগী ও মেনে নেওয়ার মতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ে আমার বন্ধুরা মৃত্যুর কাছাকাছি উপনীত হলেও রাষ্ট্রের এদিকে কোনো কর্ণপাত নেই। আজ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে অনশনকারীরা কতটা উপেক্ষিত চিন্তা করা যায়? কনকনে শীতে ন্যায্য দাবিতে একদল ছেলে-মেয়ে রাস্তায় দিনের পর দিন অবস্থান করছে অথচ রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে। আমরা ৩০ এর পর কি জাতির বোঝা হয়ে গেছি।সরকার আমাদের কথার কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।যদি গুরুত্ব নাই দেয় তাহলে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজদিক।
আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলার যেন আজ কেউ নেই। এমনকি কেউ প্রয়োজন বোধ পর্যন্ত করছেন না।ভাবতে অবাক লাগে। এই হল সেই চেতনার, বৈষম্যহীন আমাদের বাংলাদেশ?
বড়ই দুর্ভাগ্য জাতির আমরা, দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষিত বেকার তরুণেরা দাবি আদায়ে রাস্তায়। যে সব বন্ধুরা অবস্থান করছে,তাদের দেখার ও কথা শোনার মত যেন কেউ কি নেই ? সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি এসেওতো কথা বলতে পারতো ? আশ্বস্ত করতে পারতো?
সত্যি হয়তো এই দাবি আদায়ের জন্য খালি হবে মায়ের বুক, কোন ভাই হারাবে সহোদর, বোন হারাবে ভাইয়ের স্নেহ। বাপের কাঁধে উঠবে সন্তানের লাশ। তারপর রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে দাবি মেনে নেবে। সেপথেই যেন হাঁটছে রাষ্ট্র ও বন্ধুবর অনশনকারীরা। এ দাবি এখন অস্তিত্ব রক্ষা ও বাঁচা মরার লড়াই।
ছাব্বিশ সাতাশ বছরে অর্জিত সনদ আমাদের তিরিশ বছরেই শেষ, তা অকার্যকর, যা মেনে নিতেই ভীষণ কষ্ট দম ফুরিয়ে আসছে। বাবা মা ভাই বোনের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারার কষ্ট। আমরা সুযোগ চায়,করুণা নয়। ন্যায্য অধিকার চায়। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চায়। চাকরি চায় না। আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হোক। আমাদের সেই সুযোগ কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র আমাদের আত্মহননের পথে ধাবিত করতে পারে না। এতো ঘোরতর অন্যায়। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসবে আমাদের বিরুদ্ধে চরম অবিচার।
শেষ করার আগে আরো একটু বলতে চাই আজকে আমাদের দেশের এই সরকারি চাকরি নিয়ে এতো মাতামাতি চাওয়া,পাওয়া মূল্যে রয়েছে সরকারি চাকরি মানেই লাইফসেফ এমন মানসিকতা। আর এমন মানসিকতার কারণ বর্তমান সরকার সরকারি চাকরিজীদের যে হারে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন তাতে করে সবাই এখন জীবনের মূল লক্ষ হিসেবে সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকছেন । যার ফলে সরকারি চাকরি নিয়ে বেড়েছে ব্যাপক হারে ঘুষ দূর্নীতি।তাই আজ আর সময় বাড়িয়ে কিছু লিখতে চাই না।আমার এই লেখায় কার বা কি আসে যায়। কে বা পড়বে সময় নিয়ে। তারপরও আমি মনেকরি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে দীর্ঘদিনের এই আন্দোলনের একটা সুরাহা অতিদ্রুত কার্যকর করা হোক।
লেখক,
মোঃ শা হ্ জা লা ল
-০-
                                    
        
                                                                                                                
                                            
                                                                        
                                    
                                    
                                
                                    
                                    
                            
                                
                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                
                                            
                                            
                                            
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: