
মোঃ মানছুর রহমান জাহিদ।। বাংলাদেশ’ ষড়ঋতুর দেশ। এ শীত ঋতু ষড়ঋতুর একটি ঋতু। আর এমন পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। তাইতো বাংলার ঘরে ঘরে বারবারই ফিরে আসে- ‘শীত’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতনের দেশ-বাংলাদেশ। ষড় ঋতুর এই দেশে প্রত্যেকটি ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। ‘পৌষ এবং মাঘ মাস’- শীত কাল হলেও অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শীতের সূচনা হতে থাকে। এমন শীতের আগমন পত্র কুঞ্জে, জলে-স্থলে সর্বত্রই পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আসলে হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পরে আসে জড়তা গ্রস্ত শীত ঋতুর নির্মম বার্ধক্য। শুষ্ককাঠিন্য ও রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তি রূপেই শীত আবির্ভাব ঘটে। তবুও শীতকালের প্রকৃতি ও মানুষের পরিবর্তনের বাস্তব লীলা অনেকেরই ভালো লাগে। বলা যায় যে, কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতমনা মানুষের কাছে শীত কাল কাব্য সৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলতেই হয় যে, বিশ্বের যত মনোরম দৃশ্যের স্থান আছে, সেই গুলোর মধ্যে শীত প্রধান স্থান-ই বেশি। তাই শীতল সেই সকল এলাকা অনেকেরই মন ছুঁয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এ দেশেও শীতকালীন আবহাওয়া অনেকের খুব পছন্দ। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলের মানুষ শীত কালের এমন সময়, আলাদা প্রশান্তির আমেজেই থাকে। শীতের রাত্রিটা দীর্ঘ হওয়ায় তীব্র ঠান্ডায় নিঃস্তব্ধ প্রকৃতি থাকে। প্রকৃতির মাঝ হতে মানুষ ঘরে ফিরেই যেন সারারাত্রীতে কম্বল, লেপ কিংবা কাঁথা মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে গভীর তন্দ্রায় যায়। খুব ভোর বেলায় ঘনকুয়াশার ধবল চাদরে প্রকৃতি ঢাকা থাকে। তখন হিমেল হাওয়ায় ‘হাড় কাঁপানি শীত’ জেঁকে বসলেও যেন- শীতের দাপট কাটিয়ে ওঠার জন্যেই মানুষজন সাধ্য মতো দামি দামি শীতবস্ত্র শরীরে জড়িয়েই প্রকৃতি নীরবতাকে উপভোগ করে। তার পাশা পাশি সব শ্রেণীর মানুষ নিজ ত্বকের যত্নশীল হয়। অবশ্য পরিবেশ গত কারণেই বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকে ইতিবাচকভাবেই দেখে।
শীতকালে এই দেশের বেশ কিছু গাছে ফুল ফুটে যেমন, গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গোলাপ প্রভৃতি ফুল শোভাবর্ধন করে থাকে। ফুলের দোকান গুলোতে বাহারি ফুলে ভরে যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বরণ করতে নানা ফুলের দোকানগুলোতে নানা রকম ফুলের ডালি, তোড়া কিংবা মালাসহ সুসজ্জিত ফুলের উপকরণ বিক্রি এবং কেনার হিড়িক পড়ে যায়। শীতকালে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি খেঁজুর গাছের মিষ্টি রস, নানান পিঠাসহ হরেক রকমের সু-স্বাদু খাবার অন্য সময় দেখা দায়। তাছাড়া ধান ক্ষেত বা শাকসবজির ওপরে টলমল করা শিশির বিন্দু, সূর্যের সোনালি রশ্মিতে একপ্রকার মুক্তার মতোই যেন ঝলমল করে। শীতকালের বহু শাকসবজিতে ক্ষেত খামার ভরে যায়। শিম, লাউ, টমেটো, লালশাক,শালগম, পালংশাক, বরবটি, গাজর এবং মুলাসহ নানা রকমের শাক সবজি প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে। যা অবশ্যই এই বাংলাদেশের মানুষেরই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। বাংলার মানুষকে আকৃষ্ট করা বিভিন্ন ধরনের ফলনশীল ফসল, শাকসবজি আর সুস্বাদু পিঠা মেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।
সরিষা ফুলের হলুদ ক্ষেত আর মৌমাছির গুঞ্জনের দৃশ্য মনকে খুব পুলকিত করে। আহা!! কি আনন্দ আকাশে- বাতাসে! শীতে শিশিরভেজা বনেজঙ্গলে মধু পিয়ে নেচে পাপিয়ারা পিয়া পিয়া বলে ডাকে গুনগুন করে এক দল মৌমাছি, মহুয়া গাছের ফাঁকে ফাঁকে। কতোই মধুর সুরে কতো পাখিরা গায়; কতো না রঙিন ফুলের ডালে ডালে, বাঁশবনে ডাকে আপন খেয়ালে ঝুঁটিবাঁধা হরিয়ালী। তাই অরূপ রূপের এই শীতে কালকেই বাংলার ‘রূপের রানী’ বললে ভুল হবে না। গ্রামাঞ্চলে সূর্যোদয়ের দেখা পেলেই গোসলের আগে ও পরে খাঁটি সরিষা তেল শরীরে মেখে দুপুরের কাঁচা রোদে বসে কেউ মজার গল্প করে কেউবা বিভিন্ন বই পড়েই বিনোদন করে থাকে। আবার বিকেলে নদী,খাল, বিল ও দীঘির পারে বসে আড্ডা দিয়ে থাকে।স্থির জলের উপর বিকেল বেলার সেই ঢলে পড়া সূর্যের মৃদু আলোর প্রতিচ্ছবি দেখার মজাই আলাদা। তারপর আস্তে আস্তে কুয়াশার চাদর নেমে আসে।শীতের সকালে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষদের কন কনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। শীতকালে মাঝে মাঝে শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। এ সময় তাপমাত্রা খুব নিচে নেমে আসে। হাড় কাঁপানো তীব্র শীত গ্রাম বাংলার মানুষ-জীবজন্তুর সহিত প্রকৃতি অসাড় হয়ে পড়ে। এমন শীতের হাত থেকে হত-দরিদ্র মানুষ বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। তাদের সাধ্যমত শীতবস্ত্র কেনারও ধুম পড়ে যায়। শীতের সকালে ও রাতে ছিন্নমূল মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালায়। শীতের সকালে শহর এবং গ্রামে শিশু, যুবক বা বৃদ্ধ সহ সব বয়সের মানুষকে যেন আগুনের কুন্ডলী তৈরি করে উত্তাপ নিতে দেখা যায়। এ আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে আলাদা এক অনুভূতি।অনেক দেরিতেই ওঠে সূর্য। প্রকৃতির ওপর সূর্যের নির্মল আলো ছড়িয়ে পড়ে। তাই তো মনে হয়, সূর্যের আলোতে কোনো তেজ নেই। শীত মৌসুমে ফসল তোলা মাঠ যেন দিগন্তব্যাপী সীমাহীন এক শূন্যতা বিরাজ করে। আসলে ভালো আর মন্দের সমন্বয়েই যেন এই শীত। সুতরাং এই শীতের সকালেই কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশাতে সব কিছু জড় সড় হয়ে আসে, সামনের কোনো কিছুই ঠিক মতো দেখা যায় না, সব কিছু যেন খুব অস্পষ্ট মনে হয়।কখনো কখনো কুয়াশার স্তর এত ঘন থাকে যে, দেখলে মনে হয় সামনে কুয়াশার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো এলাকায় ঘন কুয়াশার সঙ্গেও ঝিরিঝিরি শিশির বিন্দুর অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে। কুয়াশা ভেদ করে সূর্য মামার উঁকি দেয়া প্রাকৃতির রঙিনতা আবহমান বাংলার সকল জনপদ রাঙিয়ে তোলে। রাস্তায় গাড়ি গুলো চলে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তারমধ্যেই যেন শীতের রংবেরঙের বিভিন্ন পোশাক গায়ে জড়িয়েই মানুষ ছুটে চলে কাজের নিমিত্তে নিজ গন্তব্যে।
সকালে উঠে সূর্য ওঠার অপেক্ষায় শিশু কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সহ সবাই যেন উসখুস হয়ে থাকে। চায়ের দোকান গুলোতে চা পানের ধুম পড়ে যায়। শীতে শহরের বিভিন্ন রকমের দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও গ্রামে প্রচণ্ড শীতের মাঝে সকল শ্রেণীর মানুষ চা খায়। কাক-ডাকা ভোরের সময় শহর এবং গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙে। কনকনে শীতের সকালে শহর ও গ্রামের রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান বা স্টলে বাহারি রঙের দেশী-বিদেশী নামি দামি ‘ড্রেস’ পরে জমজমাট আড্ডায় কোলাহল মুখর থাকে। খুব সকালে

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: