‘বিগল বয়েজ’ নামের বৈশ্বিক এক হ্যাকার গ্রুপ দেশে সাইবার হামলার চেষ্টা করেছে। দেশের তিনটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে হ্যাকার গ্রুপটির ম্যালওয়ারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ড রেসপন্স টিম (সার্ট) এই অস্তিত্ব শনাক্ত করেছে। হামলাকারীদের হামলার লক্ষ্য মূলত ব্যাংক। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যাংকের অনলাইনে হানা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে আতঙ্কে আছেন ব্যাংকাররা।
জানা গেছে, অর্থ লুটের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে হ্যাকার গ্রুপটি। বাংলাদেশেও গ্রুপটির হামলাচেষ্টার বিষয়ে গত ২৭ আগস্ট সতর্কবার্তা জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা জারির পর ব্যাংকগুলো সাইবার হামলা ঠেকাতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন ও এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) সেবা সীমিত করেছে।
আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশে তিনটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে ‘বিগল বয়েজ’ হ্যাকার গ্রুপের ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বলা হয়েছে
তারেক এম বরকতউল্লাহ , সার্টের প্রকল্প পরিচালক
জানতে চাইলে সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশে তিনটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে ‘বিগল বয়েজ’ হ্যাকার গ্রুপের ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বলা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে যে ম্যালওয়ার পাওয়া গেছে, তার একটি ফাস্টক্যাশ ২.০। এখন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ম্যালওয়ারগুলো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সার্টের কর্মকর্তারা। শনাক্ত হওয়া ম্যালওয়্যার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, হ্যাকার গ্রুপটি পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস), এটিএম লেনদেন ও এটিএমে অর্থের স্থিতি অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে। এ কারণে সার্টের ওয়েবসাইটে গতকাল রাতেই জরুরি সতর্কবার্তা বা অ্যালার্ট দেওয়া হয়। সেখানে এক বার্তায় সম্ভাব্য বেশ কিছু ফাইলের নাম উল্লেখ করা হয়। এসব ফাইলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর আশঙ্কা করছে সার্ট।
এদিকে হ্যাকারদের আক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। অনেক ব্যাংক এটিএম ও অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম রাতে বন্ধ রেখেছে। বেশির ভাগ ব্যাংক কার্ডে ও অনলাইনে বিদেশে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল থেকে ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক রাতে এটিএম লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকদের কাছে সেই বার্তাও পাঠানো হয়েছে। এর আগে থেকে ডাচ্– বাংলা ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক একই ব্যবস্থা নিয়েছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন ম্যালওয়্যার সরাসরি আসে না। কয়েক ধাপে ভিন্ন ভিন্নভাবে তা পাঠানো হয়, পরে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কার্যকর হয়। এ ছাড়া নিত্যব্যবহার হয়, এমন মেইলে পাঠানো বিভিন্ন ফাইলের ভেতরও ম্যালওয়ার লুকিয়ে থাকে। ফলে সতর্ক হলেও অনেক সময় এ ধরনের সাইবার হামলা ঠেকানো যায় না।
এবারের সতর্কবার্তাটি সময়মতো এসেছে। ফলে সবাই সতর্ক হয়ে পড়েছে। অনেকে রাতে এটিএম বন্ধ রেখেছে
মোহাম্মদ আলী, পূবালী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক
পূবালী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের সতর্কবার্তাটি সময়মতো এসেছে। ফলে সবাই সতর্ক হয়ে পড়েছে। অনেকে রাতে এটিএম বন্ধ রেখেছে।’
এদিকে গতকাল রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম লেনদেন বন্ধ করে দেয় সিটি ব্যাংক। রাত ৮টার পর থেকে বন্ধ রাখা হয় ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর। একই সঙ্গে বিদেশে ইস্যু করা ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স ও চায়না ইউনিয়ন পে–কার্ড দিয়ে সিটি ব্যাংকের নেটওয়ার্কে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সম্ভাব্য হ্যাকিং রোধে আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। আবার রাতে গ্রাহকসেবাও বন্ধ করে দিয়েছি। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি হতে পারে, তবে নিরাপত্তার অংশ হিসেবেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’