
মনিরামপুর(যশোর)॥ আমন মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের দুই মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি যশোরের মনিরামপুরে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। তবে এ পর্যন্ত মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ দেখানো হয়েছে ৫৮২ মেট্রিক টন। অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে স্বল্পমূল্যে ৫৩১ মেট্রিক টন পচা চাল (খাবার অনুপযোগী) সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ অপকর্মটি করেছেন খাদ্যগুদাম ইনচার্জ মেহেদী হাসান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গোপনে মেহেদী হাসান গোপালগঞ্জে বদলি হন। বিষয়টি জানাজানি হলে কৃষক, মিলার ও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে সরকার মনিরামপুরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এক হাজার ৫৫৯ মে.টন ও চাল এক হাজার একশ মে.টন। প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৩ টাকা ও চাল ৪৭ টাকা। গত বছরের ১৭ নভেম্বর ক্রয় মৌসুম শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু অদ্যাবধি এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করা যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিত সাহা জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষকরা ধান দেননি।
গালদা গ্রামের আমন চাষি সোহান ও আশরাফুজ্জামান জানান, বাজার মূল্য বেশি ও গোডাউন কর্তৃপক্ষের নানাবিধ হয়রানির কারণে এবার তারা ধান সরবরাহ করেননি।
একই কথা জানান, রাজগঞ্জ, নেহালপুর, চিনাটোলাসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক চাষি।
অন্যদিকে ৪৭ টাকা কেজি দরে এক হাজার ২৬ মে.টন চাল সরবরাহের জন্যে ১৪ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। ইতোমধ্যে মোট ৫৮১ মে.টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে উপজেলা খাদ্য গুদাম ইনচার্জ (ওসিএলএসডি) মেহেদী হাসান গত ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় কয়েকজন মিলার ও কুষ্টিয়া থেকে ৫৩১ মে.টন পচা চাল কম দামে কিনে ভাল বস্তায় ভরে সরকারের নির্ধারিত মূল্য দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে খাদ্য বিভাগে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে একটি টিম তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ওসিএলএসডি মেহেদী হাসান নিজেকে রক্ষা করতে আত্মগোপনে থেকে বিশেষ তদবিরে গোপালগঞ্জ বদলি হয়েছেন। মেহেদীর স্থলে চৌগাছা থেকে বদলি হয়ে ৩১ ডিসেম্বর মনিরামপুরে যোগদান করেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস।
বর্তমান খাদ্য গুদাম ইনচার্জ মতিয়ার রহমান জানান, মেদেহী হাসান ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৩১ মে.টন চাল সংগ্রহ করেন। ওই চাল কেনা দেখানো হয়েছে মনিরামপুরের ব্যাপারী অটো রাইস মিলের নামে ৫২১ মে.টন ও ভাই ভাই রাইস মিলের নামে ১০ মে.টন। যার অধিকাংশই নিন্মমানের।
মতিয়ার রহমান জানান, বিষয়টি তদন্ত টিমের নজরে আসলে খারাপ চাল সংশ্লিষ্ট মিলারের কাছ থেকে বদল করে ভাল চাল সংগ্রহ করা হয়। তবে ৫২১ মে.টন কেনা দেখানো মেসার্স ব্যাপারী অটো রাইস মিলের মালিক আবদুস সালাম জানান, তিনি মাত্র ২১ থেকে ২২ মে.টন লাল চাল বদল করেন। বাকি পচা চাল সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
বর্তমান খাদ্য গুদাম ইনচার্জ মতিয়ার রহমান বিশ্বাস জানান, তিনি মনিরামপুরে যোগদান করে কোন ধান সংগ্রহ করতে না পারলেও ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫১ মে. টন চাল সংগ্রহ করেন। স্থানীয় কৃষক ও মিলাররা মেহেদী হাসানের দুর্নীতির খবর জানতে পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মেহেদী হাসানের দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক (বিভাগীয়) ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মতিয়ার রহমান ও আশরাফ হোসেনসহ অনেক মিলার। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিত কুমার সাহা জানান, ইতোমধ্যে মেহেদী হাসানকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে গোপালগঞ্জে। এ ব্যাপারে জানতে মেহেদী হাসানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: