কুমিল্লা জেলার মুরাদ নগর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের প্রভাবশালী মৃত জারু মিয়ার দুই ছেলে মোঃ মোখলেসুর রহমান (৩৮) ও মোঃ শফিকের (৪৫) বিরুদ্ধে এক বৃদ্ধার কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেয়ে দুই ভাই মিলে বাবা ও ছেলেকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন। আজ রবিবার ভোর আটটার দিকে লক্ষীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার দুই ব্যক্তি হলেন- একই বাড়ীর নায়েব আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল লতিফ (৬৫) ও লতিফের বড় ছেলে মোঃ খলিল(৩০) । এ বিষয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে একটি অভিযোগ পত্র দিতে বলেন। তখন একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। যে অভিযোগ পত্রে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির কথা বলা হলেও তা লেখা হয়নি।
অভিযোগ পত্রের সূত্রে জানা গেছে, বিল্ডিং নির্মানের লক্ষে আজ ৩১ অক্টোবর সকাল ৭ টায় চট্টগ্রাম হতে কুমিল্লা নিজ গ্রামে (লক্ষীপুর) পৌছান ভুক্তভোগী বাপ-ছেলে। বিল্ডিং নির্মানের কথা শুনে বাড়ীতে পৌছানোর সাথে সাথেই বৃদ্ধার (লতিফ) কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মোখলেস ও শফিক। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ছেলের সামনে দুই ভাই হাতাহাতি ও দস্তাদস্তি শুরু করেন। এসময় বাবাকে বাঁচাতে ছেলে এগিয়ে আসলে ছেলেকেও রড দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করেন এবং বাবার কাছে থাকা ৪ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেন ছোট ভাই মোখলেস। এ সময় তারা বৃদ্ধার ঘর বাড়িও ভাঙচুর করে।
মারধরের স্বীকার আব্দুল লতিফ বলেন, আমি রবিবার ভোর ৪ টায় গ্রামে পৌছালে আমার ঘরে এসে মোখলেস ২ লক্ষা টাকা চাঁদা দাবি করেন, নয়তো বিল্ডিং নির্মাণ না করার হুমকি দেন। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমিসহ আমার ছেলেকে পিটিয়ে ৪ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। বাড়ী ঘর ভাঙচুর করেন। যদি থানায় আসি তাহলে আমার ঘর পুড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন শফিক। এ বিষয়ে আমরা থানায় মামলা করতে গেলে সরাসরি মামলা নেয়নি পুলিশ, বরং আমাদের দিয়ে অভিযোগ পত্র লিখিয়েছেন। এবং থানা অভিযোগ পত্র জমা নিয়েছেন।
খলিল বলেন, বাবাকে বাঁচাতে গেলে তারা দুই ভাই রড/বাশ দিয়ে আমার উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করেন। আমি প্রায় ৫ মিনিট অজ্ঞান ছিলাম। তাদের সাথে কেউ ভয়ে কথা বলতে চায় না। তারা আমার দাদার আমল থেকে আমাদের যায়গা দলখ করে রেখেছে। আমার বাড়ী তাদের পুকুরে বিলিন হয়ে গেছে, ভরে দেওয়ার কথা বললেই গালাগাল করে। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ করেও কোন সমাধান হয়নি। আমরা এখন শুধু মোখলেসের অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাই, দু'নলা ভাত সুখে শান্তিতে খেতে চাই।
অভিযুক্ত মোখলেছুর রহমান ও শফিক মুরাগনগর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের মৃত মোঃ জারু মিয়ার ছেলে। এলাকায় তারা ভূমি দখলদার, মাদক ব্যবসায়ী ও সুদখোর হিসেবে পরিচিত। তার প্রতিবেশীদের বাড়িঘর অধিকাংশই তার দখলে রয়েছে যা নিয়ে মুখ খুলতে পারছেনা ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। মুখ খুললেই তাদের উপর নেমে আসে চরম অত্যাচার। কখনো তার বিকৃত মাদক দিয়ে মিথ্যা প্রচার করে নিরীহ মানুষের উপর দেওয়া হয় মাদকের মামলা। এভাবেই কোণঠাসা করে প্রভাব-প্রতিপত্তি সৃষ্টি করেছেন তিনি।
এছাড়াও আরেকটি পরিচিতি রয়েছে তার একাধারে তিনি ছাত্রশিবিরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত। জমি দখল নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হলে তা এখনো সমাধান হয়নি। বঙ্গুর বাড়ী ও পশ্চিম পাশের আরো একটি বাড়ি এখন তাদের পুকুরে বিলীন হয়েছে, যা শতাংসে ৩০ শতাংস। এই মোখলেসুর বিরুদ্ধে পূর্বেও
"সুদের টাকার জন্য বৃদ্ধা বাবা মাকে পেটালো সুদ ব্যবসায়ী মোখলেছ" এই শিরোনামে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ৫ বছর পূর্বে মাছ ধরার অপরাধে একই বাড়ীর বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীকেও পিটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতিবেশী জেসমিন বেগম বলেন, মোখলেস ও শফিক দুই দুই ভাই আরেক বাড়ী থেকে এসে তাদের বাড়ীতে তাদের বাপ ছেলেকে মারধর করেন।
মোখলেসুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বলেন, তাদের সাথে পুকুর নিয়ে তর্ক থেকে হাতাহাতি হয়েছে, কিন্তু আদৌ কোন মারামারি হয়নি। তারাই প্রথমে আমার বাবা নিয়ে গালাগালি করেছেন।
এ সম্পর্কে মুরাদনগর থানার ডিউটি অফিসার বলেন, থানায় তাদের অভিযোগ পত্র নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তা মামলা হবে।