03/17/2025 করোনার সময় ঘঠে যাওয়া বিষয় নিয়ে লেখা নিষ্টুর গল্প
করোনার সময় ঘঠে যাওয়া বিষয় নিয়ে লেখা নিষ্টুর গল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জুন ২০২১ ১১:৪৫
নিষ্টুর
একদা এক গ্রামে একজন বৃদ্ধ লোক বাস করতেন, নাম তার রহীম, বয়স প্রায় সত্তর বছর৷ পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ে আর তার স্ত্রীকে নিয়েই তার সুখের সংসার৷
ছেলে মেয়ে গুলির শিক্ষা দীক্ষায় বড় করতে রহীম চাচা বিরামহীন ছুটে চলে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিত্য দিনই জীবন যুদ্ধে লেগে থাকেন৷ কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে মেয়ে গুলিকে তিনি শিক্ষিত করেছিলেন৷
তার কষ্ট শ্রম ব্যর্থ হয়নি. কারণ আজ তার ছেলেরা অনেক বড় হয়েছে, সবাই এখন চাকরি করে, ভালো বেতনও পান, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তারা সবাই সুখে জীবন কাটাচ্ছে,,মেয়ে দুটিকে বিবাহ দিতে অনেক টাকা খরচ করে রহীম চাচা আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ জমা করা অর্থ বলতে আজ কিছুই নেই তার ঘরে৷
ছেলেদের বড় করতে শিক্ষা দিতে এবং মেয়েদের বিবাহ দিতে গিয়ে রহীম চাচা অনেক ঋনি হয়ে আছেন, সেই ঋনের বোঝা কাধে নিয়ে নিত্য দিনে তিনি ছুটে চলেন জীবন যুদ্ধে৷
প্রতিদিনের মত আজও রহীম চাচা ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় আসলেন, কিন্তু আজ রহীম চাচার মনটা কেমন জানি ভারি ভারি লাগছে , তবুও অল্প পান্তা ভাত খেয়ে তিনি বের হলেন জীবিকার তাগিদে৷
হঠাৎ রহীম চাচা সন্ধার আগেই বাসায় ফিরে এলেন,
শরীরে প্রচুর তাপ,
জ্বরে শরীর থরথর করে কাঁপছে৷
স্ত্রী দৌড়ে ছুটে এলেন কাছে,,
হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন, বৃদ্ধ স্ত্রী তাকে সেবা যত্ন করতে লাগলেন, কিন্তু জ্বর কমছে না,
তাই রহীম চাচার স্ত্রী নিজেই হাটতে হাটতে বাজারে গেলেন ওষুধ আনতে, ওষুধ এনে রহীম চাচাকে খাওয়ায় দিলেন৷
রাত পেরিয়ে গেলো, সাথে জ্বর সর্দি কাশি ততই বাড়তে লাগলো ,
অবস্থা অনেক খারাপ জেনে বাড়িতে ডাক্তার এলো, ডাক্তার এসে বললো, রহিম চাচা করোনা আক্রন্ত. এই কথা শোনার সাথে সাথে রহীম চাচার ছেলেরা সব প্রয়োজনিও আসবাব পত্র দ্রুত গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো৷
রহিম চাচার চোখ দিয়ে অঝরে শুধুই পানি ঝরছে,
কারণ জীবনের শেষ সময়ে তার চির আপন সাথী হলো হাতের লাঠি আর বৃদ্ধ স্ত্রী৷
যাদের জন্য জীবনের এত সংগ্রাম এত কষ্ট পেরিয়ে এলো, তারা আজ কেউ পাশে নেই৷
এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন, শরীরের প্রচন্ড তাপ সর্দি আর কাশির জন্য সারারাত কারই ঘুম হয়না, রহীম চাচার স্ত্রীও তার সাথে সারারাত জেগে থাকেন,
হঠাৎ করে রাতে রহীম চাচার কাশি বন্ধ হয়ে গেলো, তার বৃদ্ধ স্ত্রী ভাবলেন হয়তোবা কাঁশতে কাশঁতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে. এই সুযোগে সারারাত জেগে থাকা রহীম চাচার স্ত্রীও ঘুমিয়ে পড়লেন৷
রাতের শেষে মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো, চারিদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে, রহীম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো৷
তিনি ঘুম থেকে জেগে উযু করে ফজরের নামাজ পড়তে গেলেন৷
অসুস্থ রহীম চাচার ঘুমন্ত দেখে তিনি আজ আর তাকে নামাজ পড়তে ডাকলেন না,
এভাবেই সময় পেরিয়ে গেলো,
রহীম চাচার স্ত্রীর মনটা তেমন ভালো লাগছে না,
তাই তিনি এসে ডাকতে শুরু করলেন ঘুম থেকে জাগাতে৷
কিন্তু কে জানে রহীম চাচা চিরোদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছেন৷
রহীম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রী চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলেন.
কিন্তু এই ঘুম থেকে তো কেউ কখনও জাগেনা৷
রহীম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রীর কান্না আর চিৎকার শুনে, প্রতিবেশিরা দূরে এসে জড়ো হলো৷
ইতিমোধ্যে মসজিদের মাইক হতে এলার্ম ভেসে এলো রহীম চাচার মৃত্যুর খবর৷
বাড়ীর চারিদিকে মানুষের ভিড় শুরু হলো, কিন্তু আফসোস কেউ কাছে এলোনা৷
এখন তো রহীম চাচার শেষ গোসল করিয়ে দাফন কাফন করতে হবে, কিন্তু কে করবে? কেউতো কাছে আসছেনা৷
বহুক্ষণ পরে গ্রামের চার থেকে পাঁচজন যুবক এসে রহীম চাচার গোসল করালেন, সাদা কাফনে মায়া ভরা হাসি খুশি মুখখানি মুড়িয়ে খাটিয়াতে উঠালেন, দূরে এক মসজিদ থেকে একজন ইমাম এসে তার জানাযা পড়ালেন, খাটিয়া ধরে এই পাঁচ ছয় জন মানুষ তাকে নিয়ে গেলো আপন ঘরে রেখে আসার জন্য৷
পিছু পিছু পাগলের মত ছুটতে লাগলো রহীম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রী, কবরে রহীম চাচাকে রেখে সেই মহাৎ মানুষেরা চলে গেলেন৷
কিন্তু রহিম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রী তার সেই হাতের লাঠি টা নিয়ে কবরের পাশে বসে কাঁদতে লাগলো৷
আর চিৎকার দিয়ে বললো, তুমি আমাকে নিয়ে যাও সাথে৷
এই নিষ্টুর দুনিয়াতে আমি আর থাকতে চাইনা, কোথায় তারা, যাদের জন্য তুমি সারা জীবন কষ্ট করলে, ভোর না হতেই বের হতে কাজের খোঁজে৷ কষ্টের টাকা দিয়ে বড় করা সেই সব সন্তানেরা আজ কোথায়? তোমাকে তো তারা শেষ বারের মত দেখতে এলোনা৷
তুমি আমাকে সাথে নিয়ে যাও, এই বিষক্ত দুনিয়ার অভিশাপ থেকে আমাকে মুক্ত করো! এভাবেই তিনি
কাঁদতে কাঁদতে বাসাতে ফিরে এলেন৷
যে সংসারে মানুষের পদচারনার মুখরিত ছিলো, সেই সংসারে আজ একা একা নীরব বসে আছেন রহিম চাচার বৃদ্ধ স্ত্রী৷
বার বার ছুটে যান স্বামীর কবরের পাশে৷
দুহাত তুলে চোখের পানি ফেলে মহান প্রভুর দরবারে
ক্ষমা প্রর্থনা করেন৷
, সমাপ্ত
লেখক মোঃ তৈয়েবুর রহমান তাকিব, (যশোর)
লেখার সময়ঃ ২২/০৬/২০২১ শুরু
সমাপ্তি কাল ২৩/০৬/২০২১ সকাল বেলা,
{লেখাটি সম্পর্ণ কাল্পনিক}
গল্পটি পড়ে মন্তব্য করবেন কেমন লাগলো৷
{সময় করে গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ}