03/17/2025 মোঃ রেজাউল করিম লেখা গল্প- ভালোবেসে নিরুদ্দেশে
মোঃ রেজাউল করিম লেখা গল্প- ভালোবেসে নিরুদ্দেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ জুন ২০২১ ১১:১০
এই কারা রে? দাঁড়া।নিশুতি রাতে, অচেনা পথে দরাজ গলার ধমকের কথা কানে যাওয়া মাত্রই সাধন ও অরুণা দুজনেই ভয়ে কাঁপতে থাকে। চারটি জ্বলন্ত টর্চ লাইট ওদের দুজনের চোখে ধরে রেখেছে। ওরা ভয়ে আতঙ্কে কিছুই বলতে পারছে না। আবার চোখে আলো ধরে রাখার কারণে কিছু দেখতেও পারছে না।অরুণা,সাধনকে জড়িয়ে ধরে। সাধনের হাতের ভারি ব্যাগটা মাটিতে পড়ে যায়। ভালোবেসে অজানার উদ্দেশ্যে কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ,তারকা ও নীহারিকার অস্পষ্ট আলোয় জীবনের আলোকিত পথ ছেড়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন কোথায় যেন উড়ে যায়।মনে হয় তারা একি মহাবিপদের জালে আটকা পড়লো । ওরা পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
তাদের পথ আটকানো দলের একজন আবার প্রশ্ন করে। এই ভরা যৌবনারম্ভ মেয়ে নিয়ে অন্ধকার গভীর রাতে কোথায় যাচ্ছিস?শালা, প্রেমের আবেগে রসালো প্রেমিকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস, না ওকে কোথাও বেঁচে দেওয়ার ধান্দায় নিয়ে যাচ্ছিস?
সাধন ভয়ে ভয়ে বলে, আমি ওকে ভালোবাসি ও আমাকে ভালোবাসে।আমাদের বাবা -মা আমাদের বিয়ে দিবে না, তাই আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ঘর বাঁধব।
তা তো ভালোই করেছিস৷ কিন্তু আমাদের সাথে দেখা হয়ে তোদের বিপদ হয়ে গেল। ভালোবেসে আবেগে ঘর বাঁধবি। তার পর আবেগ কেটে গেলে প্রেমিকা ফেলে চলে যাবি।দেখ তো কী দুর্ভাগ্য তোর। ঘর বাঁধার আগেই আমাদের সাথে দেখা হয়ে গেল। কোন ধর্মের লোক তোরা?বিয়ে করেছিস না করবি?যদি না করে থাকিস তাহলে সৌভাগ্য আমার। প্রথম বিয়ে আমার সাথে হবে বিনা রেজিস্টিতে,বিনা মোল্লা, পুরোহিতে। কিন্তু আমি তোর মতো সংসার করব না।
কী উত্তর দেবে সাধন। সে বলে আমরা দু'জনেই হিন্দু। এখনো বিয়ে করিনি। বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারত গিয়ে বিয়ে করব ভেবেছিলাম ।সীমান্তের কাছে দৌলতপুর গ্রামে আমার বন্ধুর বাড়িতে রাত থেকে কাল সকালে আমরা চোরাই পথে ভারত চলে যাব।কিন্তু -
আর কিন্তু করে কি হবে।সে আর তোদের ভাগ্যে হলো না।যাক সেও ভালো বিয়েও করিসনি বাসরও হয়নি।তাহলে আমিই ভাগ্যবান তোর প্রেমিকার পহেলা বাসরটা তারকার আলোক সজ্জিত ফাঁকা মাঠে প্রকৃতির মৃদু বাতাসে অচেনা পতঙ্গের সুরে আমার সাথেই হবে। তোর জন্য দুঃখ হচ্ছে কিন্তু করার কিছুই নেই। তোরা তো প্রায় দৌলতপুর পৌঁছে গিয়েছিলি।শিকার যখন হাতে পেয়েছি তখন তো সহজে ছাড়তে পারি না। অত মায়া মমতা থাকলে আমাদের চলে? জীবন্ত মালটা তো বেশ তরতাজা তা ব্যাগের ভেতর মালপাতি ভালো আছে তো?সাধনের ব্যাগটা নিয়ে নেয়। অরুণার কাছে থাকা হাত ব্যাগ আর একটা ছোট ব্যাগ ছিল তাও নিয়ে নেয়।তাদের মোবাইলও নিয়ে নেয়। ওস্তাদ বলে শালারে বেঁধে ফ্যাল।আর আওরাতটা আমার কাছে নিয়ে আয়। আমি প্রথম স্বাদ নেবো তার পর তোরা চেটে পুটে খাস।বহুদিন জীবনে এমন আনকোরা মাল জোটেনি।
একজন সাগরেদ বলে ওস্তাদ মায়ের জাত পাপ করা ঠিক হবে না। তুই পাপ না করলে না করিস,খাচ্ছিস ডাকতি করে আবার পাপের কথা বলছিস। অত জ্ঞান দিতে হবে না। বেশি বুঝলে গলা কেটে ফেলব।যা বলছি তাই কর।
জ্বে ওস্তাদ বলেই দু'জন মিলে সাধন কে বেঁধে ফেলে। সাধনের কথা বলার কোন সুযোগ নেই। একজন তার গলায় চকচকে দা ধরে রেখেছে।
ওস্তাদ অরুণার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। অরুণা আঘাত পাওয়া কেঁচোর মতো হয়ে যায়। তার দেহে কোন সাড় নেই।ওস্তাদ অরুণাকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলে,কী নাম তোমার সোনাপাখি?অরুণা ভয়ে আড়ষ্ট কথা বলার সাহস তার বুকে নেই। অরুণা কথা বলার আগেই সাধন ভয় জড়ানো গলায় বলে ওর নাম অরুণা বিশ্বাস আর আমার নাম সাধন মুখার্জি।
এই শালা তোকে জিজ্ঞেস করেছি? এ কথা বলেই ওস্তাদ সাধনের মুখে লাথি মেরে দেয়। সাধন বাবা গো বলে কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ওস্তাদ বলে, ওর মুখ শক্ত করে বেঁধে দে,যেন আ-উ করতে না পারে। ওস্তাদ অরুণার মুখে একটা চুমু দিয়ে বলে ওরে আমার সোনারে।তুমি অরুণা বিশ্বাস আর তোমার নাগর হলো সাধন মুখার্জি। ধর্মে হিন্দু হলে কি হবে বর্ণে তো আলাদা। তোদের হিন্দু সমাজের কোন বাবা-মা তো মেনে নেবে না।সাধন যন্ত্রণায় ছট ফট করতে থাকে। কিন্তু তার করার কিছুই নেই সে তো ইঁদুর মারা কলে ইঁদুর আটকা পড়ার মত পড়ে আছে। ওস্তাদের ঠোঁট যেন অরুণার দেহে বিষাক্ত সাপের ছোবল বলে মনে হয়। তার সমস্ত শরীর সে ছোবলে নীল হয়ে হিম হয়ে যায়।
ওস্তাদ বলে, তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না। ব্যাগ খুলে দেখ, ভেতরে কী আছে? অরুণার চোখ, মুখ খোলা। ওস্তাদ তাকে কায়দা করে কোলের মধ্যে বসিয়েছে। উঠতি যুবতীর বুকের উপর নির্লজ্জ ওস্তাদের দুটো হাত সমান তালে চলমান। অরুণা এহেন নির্যাতনে দুমড়ে, মুচড়ে যাচ্ছে। কাতর স্বরে সে তাকে ধর্মের বাবা বলে এনির্যাতন থেকে রেহাই পেতে কাকুতি মিনতি করছে। সাধন সব শুনতে ও বুঝতে পারছে।সে অনুশোচনার চিতার অনলে সহমরণে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।
তারা ব্যাগ খুলে দেখে টাকা, সোনার গহনায় ভরা, ওদের চোখ জ্বল,জ্বল করে ওঠে।ওস্তাদ বলে, আজ যে কার মুখ দেখে বের হয়েছিলাম যে ভাগ্য এমন সুপ্রসন্ন হলো? তাকে দেখতে পেলে এই আওরাতটার স্বাদ নিয়ে তাকেই দিতাম। অরুণা কেঁদেই যাচ্ছে। একটু পরেই সাধনের জন্য সযতনে রাখা দেহটা এই কুকুর খাবলে খাবে যেমন গৃহিণীর বেখেয়ালে তার রান্না ঘরে মনের পরশ দিয়ে জ্বালানো
সরপড়া দুধটুকু খেয়ে যায় পাড়ার বেওয়ারিশ কুকুর।
ওস্তাদ বলে, এসো ময়নাপাখি তোমার একটু আদর করি।তোমার মুখের মিষ্টি গান শুনি,কান্নার সুর আর ভালো লাগে না। শোন তোমরা হলে হিন্দু আর আমরা হিন্দুও না, মুসলমানও না, আমরা মানুষও না,আমরা ডাকাত।আমাদের কোন ধর্ম নেই আমাদের পরিচয় ডাকাত। সবকিছু লুট করায় হলো আমাদের কাজ।ওসব ধর্মের বাবা, টাবায় মন গলবে না।এখন আমি তোমার ছেলের বাপ। আমি ছেড়ে দিলে আমার সাগরেদরা একটু খাবে। তার পর সকাল হলে তুমি
যেথায় খুশি যাবে। ইচ্ছে হলে তোমার প্রেমিকের কাছেও যেও।আমাদের কাজ মিটে গেলে আমাদের আর কোন দায়িত্ব নেই।ওস্তাদ বলে এই চল। একজন বলে ওস্তাদ এ শালার মুখার্জির গলাটা কেটে দুফাঁক করে দিই।ওস্তাদ বলে না ওকে জানে মারা যাবে না। আমাদের অনেক উপকার করেছে। শালার মুখার্জি এখানে পড়ে থাক।ওর ঈশ্বরের নাম জপ করুক। সাধন মনে মনে বলে তাকে মেরে ফেলায় ভালো। তার বেঁচে থেকে লাভ নেই।
অরুণার করার কিছুই নেই। সাধন জীবন্ত দেহে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকলো। অরুণার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওস্তাদ চলল।মনে হচ্ছে এখন অরুণার উপর সব অধিকার ওস্তাদের।সে কেঁদেই যাচ্ছে সময় সময় কান্নার সুর জোরে হচ্ছে। কিছু দূর এসে ওস্তাদ বলে,আর ভালো লাগে না এতো বিপদ ডেকে আনবে,মুখ বেঁধে ফ্যাল।
অরুণার মুখ বেঁধে ফেলল।সে হাঁটতে পারছে না। কিছু করার নেই। সমতল রাস্তা ফেলে মাঠের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদূর আসার পরে টর্চ লাইটের আলোতে দেখলো নির্জন এক জায়গায় জলাশয়ের ধারে এসে থেমে গেল। একটু পরেই সাগরেদরা সরে গেল । ওস্তাদ নিজেই অরুণার পরনের স্যালোয়ার খুলে নিল। গাছ কেটে দিলে যেমন মাটিতে পড়ে যায় অরুণা সেভাবে মাটিতে শুয়ে পড়লো। তার অসাঢ় দেহে অনাভ্যস্ত যোনিতে প্রথম আগুনের কাঠি ঢুকে গেল। অসহ্য যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। সাধনের জন্য যে দেহটায় সে দাগ লাগতে দেয়নি
সে দেহের আজ আর দাগের বাকি থাকলো না। উত্তেজক দেহের উষ্ণতা নিয়ে সাধনের সাথে যে আনন্দ মিলন হওয়ার কথা ছিল তা হলো না। তার সাড়াহীন দেহে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাকাত ওস্তাদ নিজের দেহের পশুত্বের যন্ত্রণা মিটিয়ে চলে গেল। কিন্তু অরুণার জীবন যন্ত্রণা শুরু হলো। তার পর আবার একজন তার বুকে চাপল।এরপর সে আর কিছুই জানে না। তার যখন জ্ঞান ফিরে এলো তখন তার সারা দেহ ব্যথায় টনটন করছে। অতিকষ্টে চোখ মেলে দেখে রাত গভীর চারিদিকে নির্জনতা। আকাশের তারারা আপন স্বভাবে জ্বলে আছে। তারা সব দেখেছে। সে দেখলো আকাশ থেকে উল্কা ঝরে কোথায় মিলিয়ে গেল।কোন শিয়াল বা কুকুরের ডাক নেই। ফাগুনের হালকা ঠাণ্ডা বাতাস তার দেহে প্রশান্তির পরশ জাগাচ্ছে না।যেন বিষাক্ত সাপের নিশ্বাসে তার দেহ জ্বলে যাচ্ছে। চারিদিকে অসংখ্য কীটপতঙ্গ নানা সুরে তাদের জীবনের প্রয়োজনে ডেকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পাশের জলাশয়ে মাছ কি অন্য কোন প্রাণি লাফ দিচ্ছে। সময়ের সাথে রাতের আঁধারের ঘোমটা খুলে দিনের আলো ফুটে উঠার অপেক্ষা। মাটিতে শুয়ে সে মনে মনে ভাবে প্রেমের আবেগ জীবনের গতিবেগের সাথে যুক্ত করে সবাই কে ছেড়ে এভাবে চলে আসা কি তার ঠিক হয়েছে?
রাতের আঁধারে ঠিকানাহীন অনিশ্চিত জীবন পথে দুঃসাহসে ভর করে ঘর ছাড়া কি ঠিক হয়েছে? জীবনের যে গতি ছিল তা কি আর ফিরে আসবে? এখন কোথায় যাবে সে ঠিকানা তার জানা নেই। কোথায় তার জীবনের ঠিকানা সাধন? কোথায় খুঁজবে তাকে? পুবাকাশে দিনের পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে। পুবাকাশের দিনের আলোর পূর্বাভাসের রেখা ভেসে উঠার সাথে তার মনের আকাশেও নানা কথা উঁঁকি দিচ্ছে।
কোমলপুর গ্রামের সহজ সরল দরিদ্র সুখদেব মালোর সন্তান। গায়ের রং গৌর বর্ণ হওয়ায় কিশোরী কালেই তার দেহে অনেকের নজর আছড়ে পড়ে। মুখার্জি বাড়ির সামনে দোকানে এটা ওটা কিনতে গিয়ে সবার নজর ফাঁকি দিয়ে মধুসূদন মুখার্জির একমাত্র ছেলে সাধন মুখার্জির নজরে আটকে পড়ে। মনের বেখেয়ালিতে কখন কিভাবে জড়িয়ে যায় দুজন, দুজনের ভালোবাসার বাঁধনে। তার পর এসব কানাকানি জানাজানি হয়ে যায়। গ্রামে তাদের এ ভালোবাসার কথা সত্য মিথ্যা মিলে ডালপালা ছড়ায়। সাধন তার বাড়িতে অরুণাকে বিয়ে করার কথা বলে। সাধনের বাবা রাজি হয় না।সারা মুখার্জি পাড়া সুখদেব মালোর উপর ক্ষেপে যায়। অরুণা গরীব মালোর সন্তান বেশি লেখা পড়া করেনি। সাধনও লেখা পড়ায় বেশিদূর এগোয়নি। ব্যবসা করে হাতে বেশ নগদ টাকা আছে। ভালোবাসার অপরাধে অরুণা আর গ্রামে বের হতে পারে না। সাধনও তার জন্য পাগল। কিন্তু তাদের সমাজ ব্যবস্থা,বর্ণবাদ প্রথা তাদের ভালোবাসার মূল্য দিল না। সাধন অনেক চেষ্টা করে কোন সুরাহা করতে পারলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল অরুণা নিয়ে পালিয়ে ভারত যাবে। সেই সিদ্ধান্ত মতো তারা পালিয়ে এসেছিল।কিন্তু বিধি বাম।কত স্বপ্ন ছিল জীবনে। ডাকাতদের হাতে ধরা পড়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। কত কথা এ নির্জনে অরুণার মনে পড়ছে। বাবা -মা'র স্নেহ মমতায় এত বড় হয়েছে। তাদের স্নেহ, মায়ার বাঁধন ছিন্ন করল শুধু ভালোবাসার কারণে।এখন সে যাবে কোথায়? সে তো কোন কিছু চেনে না । কখনো গ্রামের বাইরে যায়নি। গ্রামেও তো সে ফিরে যাবে কি করে? যার হাত ধরে জীবনের সব ত্যাগ করে বের হয়েছিল তাকে কোথায় পাবে? আর কোনদিন কি তার সাথে দেখা হবে? কোন মুখ নিয়ে তার সামনে দাঁড়াবে? সে কি তাকে বুকে টেনে নেবে? এত সময় তাদের কথা সারা গ্রাম রটে গেছে না রটলেও সকালে রটে যাবে গতরাতের ঘটনা। তার বাবা-মা মেয়ের এহেন ঘটনার অনুশোচনায় কেঁদে, কেঁদে বেড়াবে। মেয়ের যে কী অবস্থা হয়েছে তারা কোন দিন জানবে না।সমাজ যদি বর্ণবাদের কথা না ভেবে তাদের ভালোবাসা মেনে নিত তাহলে তাদের জীবনে এ দুর্ঘটনা না ঘটে জীবন মধুময় হত।কত কথা তার মনে আসছে। সে আর কোন কিছু ভাবতে পারে না। সে অনুশোচনা নিয়ে বাঁচতে চায় না,এ জগতের রুপ সে দেখতে চায় না। তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। নানা কথা ভাবতে ভাবতে সে দেখে পুবাকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে।
সে যেখানে পড়ে আছে সেখান থেকে তার কাঁটার বেড়া ভোরের আলোয় অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সারা শরীরে ব্যথা।দৈহিক সুখ অনুভবের অঙ্গটা ব্যথায় টনটন করছে। সেখান থেকে মনে হয় রক্তপাতও হয়েছে। উঠে বসা খুব কষ্টকর।বুকের উপর সন্তানের প্রথম খাদ্য যোগানের নরম মাংসপিণ্ড দুটো থেঁতলে গেছে। তাতেও প্রচণ্ড ব্যথা যন্ত্রণা হচ্ছে। বস্ত্রহীন দেহে দু'হাতে ভর করে উঠে বসে। কাঁটাতারের বেড়া ভোরের আলোয় এবার স্পষ্ট মনে হয়। সে বুঝতে পারে ভারতের কাছে তাকে ফেলে তারা চলে গেছে। সে কি এখন সাধনকে খুঁজে বড়াবে? এ চিন্তা মাথায় আসার পরক্ষণেই আর এক চিন্তা তার মাথায় উঁকি দিয়ে তাকে সচল করে। সাধনকে খুঁজতে গিয়ে আবার যদি কোন বিপদ হয়। তার এ অবস্থা পর সাধন যদি তাকে আশ্রয় না দেয় তখন সে কষ্ট রাখবে কোথায়?সাধনের জন্য তার জীবনের সব যত্নে সাজানো ছিল। আজ সব শেষ হয়ে গেল। কিছুই নেই কোন বিশ্বাসে সে তার সামনে দাঁড়াবে?না সাধনকে খুজবে না।এ নষ্ট জীবনের ভার সে একাই বহন করবে। না মরে যাবে? না মরবে না। সে এ জগতের কুৎসিত মানুষগুলো দেখবে। আরো একটু পরিস্কার হয়।সে দেখে তার ছোট ব্যাগটা পাশে পড়ে আছে। সে বসে কষ্ট করে ব্যাগটা কাছে এনে খুলে দেখে তাতে তার পরিধেয় কিছু কাপড় আছে। সে ব্যাগে মোবাইল আছে কি-না খুঁজতে থাকে। কিন্তু না মোবাইল নেই। কাপড় নাড়াচাড়া করতে গিয়ে সে কাপড়ের ভাঁজে যে টাকা রেখেছিল তা পড়ে গেল। সে একটু আশস্থ হলো। সে ভাবল এই সামান্য টাকার উপর ভরসা করে ভারত চলে যাবে। নিজের দেশে সে আর থাকবে না। যে দেশের মানুষ তাদের জীবনের প্রেমের মূল্য দিল না। দু'টো জীবন বিছিন্ন করে অনিশ্চিত জীবনের পথে ঠেলে দিল।পশুরও ধর্ম থাকে আর গতরাতের মানুষগুলোর কোন ধর্ম নেই তারা পশুর চেয়েও পশু। না এদেশে সে থাকবে না। ভারত চলে যাবে।সেখানে যদি সে লাঞ্ছিত হয় তবুও সান্ত্বনা পাবে তারা অন্য দেশের মানুষ। গতরাতের অত্যাচারের যন্ত্রণায় সে কাবু হয়ে গেছে। সে সব হারিয়েছে এখন আর কোন কিছু হারানোর ভয় নেই। তার জীবনের ভালোবাসার ধন,জাত,কূল, মান,দেহ সব গেছে। তার চোখে এখন নোনা জলের ধারা। সে কষ্ট করে উঠে দাঁড়ায়। হ্যাঁ সকাল হয়ে যাচ্ছে। তাকে এখুনি দেশ ত্যাগ করতে হবে। তার দেহমন ঘিন ঘিন করছে। সে ভাবে পাশের জলাশয় থেকে স্নান করি দেহটা পবিত্র হোক। কিন্তু তার মনে মনে হাসি আসে। নিজের কাছে প্রশ্ন জাগে জলাশয়ের জলে দেহ ধুলেই কি দেহমন পবিত্র হবে? না হবে না। দেহ ধুলেও মন তো আর ধুতে পারবে না। তাতে যে দাগ লেগেছে তা ইহ জীবনে আর যাবে না। সে জলাশয়ে গিয়ে গতরাতে নরপশুরা যে বিষাক্ত বিষ তার যোনিতে ঢেলে গেছে তা ধুয়ে এসে স্যালোয়ারটা পরে নেয়। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে দু'হাতে বালা আছে। কানে কানের দুল, গলায় হারও আছে। দেহ ভোগের লালসায় লালায়িত হয়ে হয়তো এগুলো নিতে ভুলে গেছে। হায়রে পুরুষ মানুষ তোদের ঘরেও তো মা,বোন, বউ,মেয়ে আছে। সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। ব্যাগটা হাতে নিয়ে থেঁতলানো ব্যথাভরা দেহ নিয়ে আস্তে আস্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায়। সে দেখে বেড়া এক জায়গায় কাটা ওপাশে একপায়ে পথ কোথায় গিয়েছে সে জানে না। সে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে সেপথ ধরে নিরুদ্দেশে হাঁটতে থাকে।