সফিয়ার রহমান।।
ঝিকরগাছা মাছ বাজারের সবাই একনামে সোহেল রানা লাল্টুকে চেনে। শুভ নাসির লাল্টু তিন বন্ধু মাছ বাজারের ফায় ফরমাস খাটে বটে তবে সুযোগ পেলেই মাছ চুরি করে। একবার এক কেজি ওজনের একটি রুই মাছ চুরি করেছিল। তিন বন্ধু মিলে বনভোজন করেছিল। স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে,যায় না। এব্যাপারে বাড়ি থেকে কেউ চাপও দেয় না। রেল ষ্টেশনের বস্তিতে ওরাই রাজা। সারাদিন উদোম ঘোড়ার মত ছুটে বেড়ায়। লাগাম দেওয়ার কেউ নেই। লাল্টুর বাবা তিন সন্তান জন্ম দিয়ে হাওয়া। মা চোখের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কবিরাজের কাছে গিয়েছিল,কচার আটা চোখে দিয়েছিল,চোখ ভাল না হয়ে অন্ধ হয়ে গেল। বড় ভাই ট্রাকের হেলপার হতে না হতেই বিয়ে করে আলাদা। বোনটা বোম্বে। কানা মায়ের সম্বল আপাতত লাল্টু। লাল্টু ক্রিকেট খেলতে গেল,শুভ ব্যাটিং করছে। নাসির বল করতেই ছক্কা হয়ে গেল। লাল্টু বল কুড়াতে গিয়েই চোখ ছানাবড়া। একটা বল দুটো হয়ে গেল কি করে? লাল্টুর লাফালাফি নাসির শুভর হৈচৈ। ধু-ম করে বিকট শব্দে দ্বিতীয় বলটি বাষ্ট হয়ে গেল।
আজ যশোর সদর হাসপাতালে লাল্টুর দুইহাত অপারেশন হবে। ওটিতে লাল্টু শুয়ে আছে। একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছেন। এরই মধ্যে লাল্টু পাকা পাকা কথা বলে ডাক্তার নার্সদের মন জয় করে নিয়েছে।
লাল্টু ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল, স্যার আমার মা অন্ধ,আমি যদি মারা যাই,আমার চোখ দুটো আমার মাকে দেবেন। আমি ছাড়া আমার মার আর কেউ নেই। অন্ধ মানুষ না খেয়ে মরে যাবে।
লাল্টু ঝিকরগাছা বাজারে ভিক্ষা করে,বেনাপোল বর্ডার
বিনা ভিসায় পার হয়ে কলকাতায় গিয়েও ভিক্ষা করে। বিএসএফ মারে না, আদর করে। লাল্টুর একটা গরু আছে,দুটো ছাগল আছে। সারাদিন লাল্টু ভিক্ষা করে,সন্ধ্যায় ঝিকরগাছা ক্রিকেট একাডেমির ক্যাম্পাসে পড়াশুনা করে। রাতে মায়ের কোলে শুয়ে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে