শফিয়ার রহমান।।

কাশীপুরের পীরের মুরিদ হওয়ার পর ইয়াকুব আলি মোল্লার দিন ভালই কেটে যাচ্ছে। এতকাল মাঠের সামান্য জমিতে চাষবাস করে সংসারের অভাব দূর হতো না। এখন তাবিজ কবচ ঝাড় ফুঁক দিয়ে ভালই আয় হয়। সংসার সুখের হওয়ার কথা কিন্তু ইয়াকুব আলির ঈমানী জোর কমে যাচ্ছে তার ছেলে মেহের আলির কারণে। ছেলেটা বড়ই বেয়াড়া। হঠাৎ বেড়ে জোয়ান মর্দ হয়ে উঠেছে। মুখে দাড়ি না রেখে বড় মোচ রেখেছে। স্থানীয় যাত্রাদলের সাথে ঘুরে বেড়ায়। জল্লাদের ভুমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। চোখের চতুর পাশে লাল রং দিয়ে কালো পোষাক পরে কাঁধে তলোয়ার নিয়ে মঞ্চে উঠলে যাত্রামোদী দর্শকরাও ভয় পেয়ে যায়। জল্লাদ যখন কোতল করার জন্যে প্রস্তুত হয় তখন আসামীর হৃদয় কাঁপানো মিনতি এবং জল্লাদের অট্টহাসিতে সমস্ত যাত্রা প্যান্ডেল পিন পতন নিরবতা নেমে আসে। মেহের জল্লাদের নাম ছড়িয়ে পড়ল যাত্রা প্রেমিদের কাছে।
যাত্রাদলের মালিকেরা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মেহেরকে দলে পাওয়ার জন্যে যোগাযোগ করতে থাকে। বাপের মাথায় যন্ত্রনার আগুন দিয়ে মেহের মাঠের কাজ কাম ছেড়েই দিল। ভাল খেজুরগাছ কাঁটতে শিখেছিল। গাছি দা, ঠুঙ্গিদড়া পড়ে আছে মেহের চলে গেছে যাত্রাদলে। হঠাৎ ইয়াকুব আলির কানে খবর এল মেহের মুজাহিদে চাকরি পেয়েছে। বাপের কানে যখন খবর এল, বাপ তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। যাক এবার অন্তত মান সম্মান বাঁচবে। বাপের আশায় গুড়ে বালি দিয়ে মেহের কমান্ডার আবুল বাশারকে হাত করে রাতে অভিনয়ের জন্যে চলে আসে সকালবেলা যথারীতি কর্মে যোগ দেয়।
মণিরামপুরের হাঁটবারের দিন অনেক হাঁটুরের সমাগম হয়। এই জনসমাগমের মধ্যে পাকিস্থান বিরোধী মিটিং মিছিল চলছে। মুন্সি খানপুরের তরুণ যুবক আকরাম কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করে চাকরির বাজার না ধুড়ে বাম মন্ত্রে দিক্ষা নিয়ে দেশ মুক্তির স্বপ্ন দেখছে। মণিরামপুর বাজারে তাকে বিপ্লবীর বেশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সাতবোনের একটাই মাত্র ভাই। বড় আদরের আকরাম। বাড়ির সবাই স্বপ্ন দেখে আকরাম চাকরি করবে। পুতুলের মত একটা বউ আসবে। ভায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বোনেরা রঙ্গিন স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। স্বপ্নের জালে আগুন দিয়ে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে থাকা নিরীহ বাংলা গর্জে উঠল।
পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে হবে। হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু। কামারের জাতার হাঁপর টানা কয়লার আগুন লোহা না গলিয়ে ছড়িয়ে পড়ল বাংলার দামাল ছেলেদের মাথায়। আকরামও এ আগুন থেকে মুক্তি পেল না। সেও ঝাঁপিয়ে পড়ল।যুদ্ধের দামামা বাজছে, মুজাহিদরা ব্যারাক ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে, কেউ মুসলিমলীগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাজাকারের খাতায় নাম লিখেছে। মেহের বাড়ি ছেড়ে মণিরামপুর বাজারে গিয়ে রাজাকারের খাতায় নাম উঠায়ে নিল। পিচ কমিটির সদস্যদের সাথে মেহেরের সখ্যতা বেশি। কারণ মেহের তাদের বড়ই অনুগত। প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে পাকিস্থান বিরোধীদের ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতন করা হয়। মানুষ হয়ে মানুষের, একই দেশে, একই আলো বাতাসে জড়েবাঁশে বেড়ে উঠা মানুষ হয়ে একে অপরের র্নিযাতন করা সহজ কাজ নয়। পিচ কমিটির অফিসে ডাক পড়ল মেহেরের। বলা হল, মেহের, পবিত্র দেশ অখন্ড রাখতে তোমাকে কঠিন ভুমিকা নিতে হবে।
এই ভুমিকা সবার পক্ষে সম্ভব না। এতদিন তুমি যাত্রাদলে জল্লাদের ভুমিকা পালন করেছ। আজ থেকে তোমাকে দেশ রক্ষায় জল্লাদের ভুমিকায় নেমে পড়। এ তোমার পবিত্র দায়িত্ব। দেশদ্রোহীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দাও। মেহের জল্লাদ তুমি কি দেশের জন্যে পবিত্র দ্বায়িত্বে ভয় পাচ্ছ?
মেহের গোঁপে তা দিতে দিতে বলল, মেহেরের কলিজায় ভয় বলে কিছু নেই। বলেন, কোথায় কি করতে হবে। অপ্রতিরোধ্য মেহের দুর্বার গতিতে উপরের আদেশ মত মুক্তিকামীদের সাথে সহজ সরল মানুষও মেহেরের নির্যাতনের স্বীকার হতে লাগল। মেহের জল্লাদের লোমহর্ষক কাহিনী সারা যশোর জেলা ছড়িয়ে পড়ল। মেহেরের চোখ এখন যাত্রাপালার মত আর লাল করতে হয় না। চোখ দু’টো এমনিতেই সব সময় লাল থাকে। মুজাহিদে থাকতে কাছে রাইফেল ছিল বটে তবে মনের মত গুলি ছুঁড়তে পারিনি। আজ অবাধে গুলি ছুড়ে চলেছে। একটা মানুষ মারতে একটা গুলিই সে খরচ করে। টারগেট মিচ হয় না। হরিহরনদের পানি মেহেরের গুলিতে লাল হয়ে যায়।
পিচ কমিটির অফিসে চা খেতে খেতে কর্তারা বলল, হ্যারে মেহের তোর গুলি তো একটাও মিচ হয় না ব্যাপার কি, বলতো?মেহেরের গোঁপে ডাকা মুখ থেকে বের হল, আল্লার গুলি মিচ হতে পারে কিন্তু মেহেরের গুলি মিচ হবে না।
আস্তাগ ফেরুল্লাহ বলে কর্তারা চায়ের কাপে মুখ চুবিয়ে দিল।পিচ কমিটির অফিসে প্রতিনিয়ত খবর আসছে মুক্তিযোদ্ধা আকরাম ও তার বাহিনী নানা জায়গায় হামলা চালিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে। থানার পাশে খানপুরেই তার বাড়ি। অনেক গোয়েন্দা লাগিয়েও তাকে নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না। আকরাম ও তার সহযোদ্ধারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিচ কমিটির কর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার। সুযোগ আসে না। তারা তো থানা শহরেই নিরাপদ বেষ্টনীতে থাকে।
শুধু কাশিপুরের মেঝ হুজুর প্রায় প্রতিদিন কাশিপুর থেকে জুড়োনপুরের মোড় হয়ে মণিরামপুর বাই সাইকেল চালিয়ে আসে। মেঝ হুজুর মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট হয়ে যায়। সময় সুযোগ বুজে জুড়োনপুর মোড়ের ন্যাষ্টা ক্ষেতে সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ওত পেতে থাকে। একজন ছুটে এসে ফিস ফিস করে বলল, মেঝ হুজুর আসছে। রেডি হও। মেঝ হুজুর মোড়ে আসতেই ধম করে একটা গুলি ডান কানের নিচ দিয়ে ডুকে মাথার মগজ নিয়ে বাম কানের উপর দিয়ে মাথার টুপিসহ রাস্তার নিচে গিয়ে পড়ল। পিচ কমিটির অফিসে আজ কারও মুখে কোন কথা নেই। এলাকায় হুজুরের মুরিদানদের শোকের মাতম চলছে। মেহের জল্লাদের আখড়ায় রাতে ধরে আনা খাশি জবাই করে রান্নার আয়োজন চলছে। হঠাৎ একটা খবরেই সারা মণিরামপুর বাজার থমকে গেল। মেহের ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে অফিসে এল।
সবাই যেন চুপছে গিয়েছে। গম্ভীর গলায় পাশের রুম থেকে ভেসে এল, মেহের একাজ আকরামের। আকরামকে ঐ জুড়োনপুরের মোড়ে এমন শাস্তির ব্যবস্থা কর, যেন যুগের পর যুগ মানুষ মনে করে শিউরে ওঠে। আর একমাত্র তুমিই পারবে এমনি কাজ করতে। তোমার বাপ হুজুরের মুরিদ। তোমার বাপের কান্নার প্রতিশোধ তোমাকেই নিতে হবে।
মেহের তার হাত দু’টোর মুষ্টি শক্ত করে চেপে ধরে ঘরের মেঝের দিকে তাকিয়ে থেকে কোন কথা না বলে বিদায় হল।
অনেক গোয়েন্দা কাজ করছে কিন্তু সুসংবাদ কেউ আজও এনে দিতে পারল না।
আকরাম আর তার সহযোগি যোদ্ধা ইসমাইল রাতে বাঁকড়া জনপদে অবস্থান করছে। নানা কথা প্রসঙ্গে আকরাম বলল, ইসমাইল আজ মার কথা খুব মনে পড়ছে। অনেকদিন মায়ের মুখ দেখিনি। চল আজ শেষ রাতে মায়ের সাথে দেখা করে আসি। কতদিন দুধভাত কলা গুড় দিয়ে খাওয়া হয়নি। চল মাকে দেখে একমুট ভাত খেয়েই বেলা উঠার আগেই চলে আসব। বাজার থেকে মর্তমান কলা কিনে নিয়ে এস।

ভোর রাতে আকরামের প্রতিবেশী অহেদ আলী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির পিছনে ঝোপের আড়ালে বসে আছে। দেখে মুখ ঘোর অন্ধকারে দু’জন লোক হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে। ভাল করে পরখ করে বুঝতে পারে আকরাম বাড়ি যাচ্ছে। অহেদ সোজা মণিরামপুর হাঁজির। বিস্তারিত বর্ননা করার আগেই সবাই প্রস্তুত হয়ে গেল।
অন্ধকারে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আকরাম বেহেস্তি সুখ অনুভব করে। অনেকদিন পরে মা মা করে ডাক দিতেই মা দরজা খুলেই বলে, বাবা তুমি পাগল হয়ে গেলে। প্রায়ই রাজাকারেরা তোমার খুঁজতি আসে। এক্ষুনি চলে যাও। পাশের বাড়ির লোকেরাও তোমার শত্রু। তুমি নাকি হুজুরির খুনি। তোমাকে কাছে পেলে মেরেই ফেলবে।
না মা, ভয় কর না। তোমার মুখটা দেখেই চলে যাব। কতদিন তোমার মুখ দেখি না। আচ্ছা মা, গরুর দুধ আছে? গরম কর তো। এই দেখ কলা নিয়ে আইছি। গুড় দিয়ে খেয়েই চলে যাব। দেশ স্বাধীন করেই তবে তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাব।আকরাম ইসমাইল দুধ ভাত খাচ্ছে। মা সামনে বসে ভাত খাওয়া দেখছে। হঠাৎ বাঁশির শব্দ। ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ঘর ছেড়ে উঠোনে আসতেই দেখে কালো পোষাকে বাড়ির চতুর দিক ঘিরে রাজাকারেরা দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের শত আকুতির মুখে লাথি মেরে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে দু’জনকে রাজাকারেরা মণিরামপুরের উদ্দেশ্যে পথ ধরল। বাড়ি ছেড়ে কিছুদূর আগাতেই ইসমাইল পাশের খালে ঝাঁপ দিল। সঙ্গে সঙ্গে রাজাকারেরা গুলি চালাল।
ইসমাইল বন্ধু আকরামের সামনে খালের কচুরিপানা ঝাপটিয়ে রক্তে লাল করে স্থির হয়ে গেল। আকরামকে মাঝে রেখে রাজাকারেরা চতুর দিকে ঘিরে হেঁটে চলেছে। একই এলাকার মানুষ, একই আলো বাতাসে মানুষ হয়েও আজ একে অপরের যম। যমালয়ে কয়েকদিন আকরামকে রেখে বর্বর নির্যাতন চালাল মেহের জল্লাদ। এরপর সিদ্ধান্ত হল, মেঝ হুজুরকে যেখানে শহীদ করেছিল সেখানেই হবে আকরামের মৃত্যু। এ মৃত্যু হবে এমনি ভয়াবহ যা এলাকার লোকের সেই ভয়াবহতা দেখে ভয়ে ঘুম হারাম হয়ে যাবে। এই মৃত্যু কার্যকর করতে মেহের কোন গুলি ব্যবহার করবে না। মেহের সকালে পেটপুরে নাস্তা করে জামাল এবং ইয়াকুবকে সাথে নিয়ে বলল, চল আজই শোধ করে দি। একবেলা লেগে যাবে ভাল করে খেয়েদেয়ে নে।
আকরামের চলৎ শক্তি রহিত হয়ে এসেছে। হুজুরের হত্যাকারী বিধায় নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জুড়োনপুর মোড়ে আকরামকে হাজির করা হল। পাশের ঝাড় থেকে তাকে দিয়ে বাঁশ কাঁটানো হল। তাকে দিয়ে তিন হাত ব্যবধানে সাত হাত লম্বা বাঁশ পুতে মাথায় একটা আড়াআড়ি বাঁশ বাঁধাল। আড় বাঁশে আকরামকে উঠায়ে ঝুলান্ত পা শক্ত করে বেঁধে দিল। তারপর আঘাত করতেই আকরাম ঝুলে পড়ল। পা উপরে মাথা নিচে। মেহের জল্লাদ ছুরি দিয়ে এক এক জায়গায় কাটছে আর কাটা জায়গায় লবণ লাগিয়ে দিচ্ছে। কয়েকটা রেওয়ারিশ কুকুর গরম রক্ত খাওয়া নিয়ে নিজেরাই মারামারি করছে। এক টুকরা মাংশ কেঁটে মেহের উপরে ছুঁড়ে দিলে কুকুর লাফ দিয়ে ধরে মজা করে খাচ্ছে।
মেহের গোঁপের তলে হাসছে। আকরাম প্রথম দিকে অনেক চিৎকার করেছিল। আস্তে আস্তে গলার স্বর নেমে আসছে। বার বার মুখটা হা করে মাকে ডাকছে। পথ দিয়ে মানুষ চলাচল ভয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় মেহের ক্লান্ত হয়ে বেওয়ানেট দিয়ে এলোপাতাড়ি খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আজ খুব ভাল লাগছে হুজুরের হত্যার বিচার নিজের হাতে করতে পেরে। এই লাশ যেন কেউ নিয়ে না যায় খেয়াল রাখিস। পঁচবে, গলবে শিয়াল কুকুরে খাবে।
দুই দিন হয়ে গেল, লাশ ঝুলছে। আকরামের মাকে আপনজনেরা লাশের কাছে যেতে দিচ্ছে না। মা হয়ে সন্তানের এ লাশ দেখবেই বা কি করে। সর্বক্ষণ মা কাঁটা কবুতরের মত ছটফট করছে। সুযোগ মত একছুটে পিচ কমিটির অফিসে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল। হাতে পায়ে ধরে অনেক কাকুতি মিনতি করল। সেই কাকুতি মিনতিতে পাথর গলে গেল। অনুমতি দিল লাশ দাফন করার।
বাড়ির পিছনে বাঁশ বাগানে আকরামের কবরটা মাটির সাথে সমান হয়ে গেছে। আকরামের মায়ের চোখে আর পানি নেই সব ঝরে গেছে। মেহের স্বাধীন দেশেও দেশের রং বদলের সাথে সাথে নিজের রং বদলিয়ে আট চল্লিশ বছর বেঁচে ছিল। তবে সে বাঁচায় কোন স্বাদ ছিল না। স্বাধীন দেশে ভুমিষ্ট কোলের শিশুও মেহের জল্রাদের নাম করলে চোখ বুজে ঘুম পড়ে। একবার আকরামের স্বরণ সভায় মেহের উপস্থিত হয়ে আকরামের মায়ের কাছে পা ধরে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিল। মার এক কথা, ক্ষমা চাইলে আল্লাহর কাছে চাও। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। আকরামের সহমুক্তিযোদ্ধা রশিদ মাষ্টার এই দৃশ্য দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, একাত্তরের অস্ত্রটা জমা দিয়েছি। কাছে থাকলে জঞ্জাল সাফ করা যেত।
একরাতে আকরাম স্বপ্নে মায়ের সামনে দেখা দিল। প্রশ্ন করল মা তুমি কি আজও দুধ দিয়ে মর্তমান কলা, নলেন গুড় খাও?নারে বাবা, যে খাবার তুমি খেতে পারলে না, সেই খাবার আমি খাই কেমনে। আর যতদিন বেঁচে আছি খেতেও পারব না।ঐ খাবার সামনে আসলেই তো থালার মধ্যে তোমার মুখ ভেসে ওঠে। আচ্ছা মা দেশের জন্যে জীবন দিয়েছি, এখন তোমরা স্বাধীন দেশে মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়াও। তার বিনিময়ে আমি কি কিছু পেয়েছি?
অবশ্যই, যে জুড়োনপুর মোড়ে মেঝ হুজুরের এবং তোমার মৃত্যু হয়েছে সেই জুড়োনপুর মোড় তোমার নামে পরিচিত। সবাই বলে আকরাম মোড়। পৃথিবী যতদিন থাকবে, তোমার নাম উচ্চারিত হবে। এমন পাওয়া কয়জনের কপালে আছে। মাগো শুধু কি এটুকুই?পাগল কি যে বলে, তোমার রক্তে লাল স্বাধীন দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জন্মেই একটা স্বাধীন দেশ পাবে, যা তুমি, আমি জন্মের পর পাইনি। মেঝ হুজুরের নামে মোড়ের নাম না হয়ে তোমার নামে হয়েছে। এর থেকেও আর কি চাও? তোমার দেশের মঙ্গল কামনা করে পরপারে সুখে থেক। আমিও আসছি। থাকবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ।